আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে হাটে গিয়ে কোরবানির পশু বিক্রির চেয়ে অনলাইনে বিক্রিতে বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছেন মানিকগঞ্জের খামারিরা। বাজার মূল্যের চেয়েও ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা কম পেলেও খামার থেকে পশু বিক্রি করতে চান তারা।
সে জন্য খামারিরা খামারের ঠিকানা, মোবাইল নাম্বার, পশুর সম্ভব্য দাম ও ছবি ফেসবুক, ইউটিউবসহ অনলাইন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দিয়ে দিচ্ছেন। ভালো সাড়া পাচ্ছেন বলেও জানান তারা। এ বিষয়ে ক্রেতারাও স্বস্তি প্রকাশ করেছেন।
পশুর হাটে নিয়ে কষ্ট করে দিনভর রোদ, বৃষ্টিতে ভিজে দাঁড়িয়ে থেকে বিক্রি করার চেয়ে খামার থেকে বিক্রি করা ভালো বলে মনে করছেন খামারিরা। জেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা জানান, নিজ জেলাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে অনলাইনে পশু দেখে কিনতে আসছেন মানিকগঞ্জে।
সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, খামারিরা কোরবানি ঈদে বিক্রির জন্য সযত্নে লালন-পালন করছেন পশুগুলো। খড়, মাঠের কাঁচা ঘাস, ধানের গুড়া, গমের ভুশি, আখের রসের নালি খাওয়ায়ে পশুগুলোকে মোটাতাজা করছেন বলে জানান খামারিরা।
খামারিরা জানান, গরুগুলোকে মোটাতাজা করার জন্য কোনো ওষুধ খাওয়ানো হয় নাই। সে জন্য তীব্র গরমেও গরুগুলো সবল ও স্বাস্থ্যবান রয়েছে। কয়েকজন ছোট-বড় খামারিরা বলেন, হাটে নিয়ে কোরবানির পশু বিক্রির চেয়ে অনলাইনে বিক্রি অনেক ভালো। খামার থেকে পশু কিনলে বাজার মূল্যের ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা কমেই বিক্রি করবেন। কারণ হিসেবে খামারিরা বলেন, হাটে ট্রাক ভাড়া করে নিতে হয় পশুগুলোকে।
এরপরে রোদ, বৃষ্টির মধ্যে পশুর রশি ধরে হাটে আসা পশু ও মানুষের ঠেলাঠেলি করে দাঁড়িয়ে থেকে ক্রেতাদের সঙ্গে দাম-দর করে পশুগুলোকে বিক্রি করতে হয়। আর বিক্রি না করতে পারলে রাতে ট্রাকে করে আবার খামারে নিয়ে আসতে হয়। আবার পরের দিন একইভাবে হাটে নিতে হয়।
সেজন্য কোরবানির পশুগুলো খামার থেকেই বিক্রির জন্য আমরা ফেসবুক, ইউটিউবসহ অনলাইনে পশুর ছবি, খামারের ঠিকানা, মোবাইল নাম্বার দিয়ে দিচ্ছি। অনলাইনে দেয়া পশুগুলোকে পছন্দ করে অনেকেই ফোন করে পশু দেখতে আসছেন। দামাদামি করে অনেকেই কিনছেন।
ঢাকা জেলার ধামরাই উপজেলার হানিফ মিয়া বলেন, আমি মানিকগঞ্জের সদর উপজেলার ইসমাইল হোসেনের খামারের গরুর ছবি অনলাইনে দেখে পছন্দ করি। সেজন্য তার খামারে এসে গরু দেখে দরদাম করে কোরবানির জন্য একটি গরু কিনেছি। ১ লাখ ১০ হাজার টাকা দিয়ে। গরুটি কিনে ইসমাইল ভায়ের খামারেই রেখে দিয়েছি। চাঁন রাত্রিতে নিয়ে যাব। এ ক’দিন ইসমাইল ভাই লালন-পালন করে দিবেন গরুটিকে। তিনি বলেন, রোদ-বৃষ্টিতে ভিজে হাটে গিয়ে কিনার চেয়ে অনলাইনে দেখে খামারে এসে দরদাম করে পশু কেনাটাই ভালো বলে জানান।
জেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মাহবুবুল ইসলাম টুকু মিয়া বলেন, জেলার খামারিরা হাটে নিয়ে কোরবানি পশু বিক্রির চেয়ে, অনলাইনে বিক্রি করতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন বেশি। খামারিরা অনলাইনে যেন গরু বিক্রি করতে পারে সেজন্য ৭টি উপজেলায় কোরবানির পশু বিক্রির জন্য ওয়েবসাইট খোলা হয়েছে। সেখানে পশুর ছবি, খামারের ঠিকানা, মোবাইল নম্বর দিয়ে দেয়া হচ্ছে। সেখান থেকে পশু পছন্দ করে ইতোমধ্যে নিজ জেলাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে কিনতে আসছেন অনেকেই।
ক্রেতারা এসে পশু দেখে পছন্দ হলে দরদাম করে কিনছেন। এছাড়াও পশুর লেনদেন খামার থেকে হওয়ায় ছিনতাইয়ের ভয় থাকে না খামারিদের। তিনি আরো বলেন, আশা করছি এ বছর অনলাইনের মাধ্য্যমে কোরবানির পশু বিক্রি হবে গত কয়েক বছরের চেয়েও অনেক বেশি।
ভোরের আকাশ/নি