মোবাইলে লেনদেনে রেকর্ড হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক মোবাইল আর্থিক সেবার (এমএফএস) হালনাগাদ পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে। এতে ১৩টি এমএফএস সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের তথ্য দেয়া হয়েছে, তাতে দেখা গেছে, চলতি বছরের এপ্রিল মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে ১ লাখ ২৪ হাজার ৯৫৪ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে।
এ অঙ্ক এযাবৎকালের রেকর্ড লেনদেন। তবে এখানে ডাক বিভাগের সেবা ‘নগদ’-এর তথ্য যুক্ত হয়নি। নগদের হিসাব যোগ করলে মোট লেনদেন আরো প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা বেড়ে যাবে। সেই হিসাবে এমএফএসে লেনদেন এক লাখ ৫৪ হাজার কোটি টাকা ছাড়াবে; আর দৈনিক লেনদেনের পরিমাণ ছাড়িয়েছে ৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা।
হিসাব খুলতে কোনো টাকা লাগে না। শহর কিংবা গ্রামে মুহূর্তে সব জায়গায় পাঠানো যায় অর্থ। একই সঙ্গে কেনাকাটার বিল পরিশোধ, ঋণ সুবিধাসহ যোগ হয়েছে নতুন নতুন অনেক পরিষেবা। বিদেশ থেকে আসছে রেমিট্যান্সও। ফলে মোবাইল আর্থিক সেবার (এমএফএস) ওপর মানুষের আগ্রহের পাশাপাশি বাড়ছে নির্ভরশীলতা। গ্রাহকের সঙ্গে বাড়ছে লেনদেনের পরিমাণও।
বিভিন্ন সেবা: মোবাইল ব্যাংকিংয়ে শুধু লেনদেন নয়, যুক্ত হচ্ছে অনেক নতুন নতুন সেবাও। বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানির বিল অর্থাৎ সেবা মূল্য পরিশোধ, কেনাকাটার বিল পরিশোধ, মোবাইল রিচার্জ, বেতন-ভাতা প্রদান, বিদেশ থেকে টাকা পাঠানো অর্থাৎ রেমিট্যান্স প্রেরণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সেবা দেয়া হচ্ছে।
এছাড়া গাড়িচালক, নিরাপত্তাকর্মী ও গৃহপরিচারিকাদের বেতনো এখন দেয়া হচ্ছে বিকাশ, রকেট ও নগদের মতো সেবামাধ্যম ব্যবহার করে। পোশাকখাতসহ শ্রমজীবীরা এমএফএস সেবার মাধ্যমে গ্রামে টাকা পাঠাচ্ছেন। যার ফলে দিনে দিনে নগদ টাকার লেনদেন কমে আসছে। এই প্রবণতা অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
মোবাইলে আর্থিক সেবায় (এমএফএস) এপ্রিল মাসে ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি হিসাবে ৩৪ হাজার ৩৫৭ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বেতন-ভাতা বাবদ বিতরণ হয় ৪ হাজার ৩৮৮ কোটি টাকা। এছাড়া বিভিন্ন পরিষেবার ২ হাজার ৪৩৭ কোটি টাকার বিল পরিশোধ হয় এবং কেনাকাটায় ৫ হাজার ৫০৪ কোটি টাকা লেনদেন হয়।
গ্রাহক সাড়ে ২৬ কোটি: মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেনের সঙ্গে দিন দিন বাড়ছে গ্রাহক সংখ্যা। বর্তমানে বিকাশ, রকেট, ইউক্যাশ, মাই ক্যাশ, শিওর ক্যাশসহ নানা নামে ১৩টি ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিং সেবা দিচ্ছে। ২০২৩ সালের এপ্রিল মাস শেষে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে নিবন্ধিত গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়ায় ২০ কোটি ৬ লাখ ৮৯ হাজার ২১০ জন। এর মধ্যে পুরুষ গ্রাহক ১১ কোটি ৬০ লাখ ২৯ হাজার ৯২৫ জন, আর নারী গ্রাহক ৮ কোটি ৪১ লাখ ৪৬ হাজার ৩০২ জন। আলোচিত সময়ে মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৫ লাখ ৫৫ হাজার ৭৯১ জনে।
এছাড়া ‘নগদ’-এ রয়েছে সাড়ে ৬ কোটির বেশি গ্রাহক। এ হিসাব যোগ করলে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে নিবন্ধিত গ্রাহক সংখ্যা ছাড়াবে সাড়ে ২৬ কোটি। এর কারণ অনেক গ্রাহক একাধিক সিম ব্যবহার করছেন। লেনদেনের সুবিধার্থে একাধিক সিমের হিসাব খুলছেন গ্রাহকরা।
এদিকে এখন গ্রাহক ঘরে বসেই ডিজিটাল কেওয়াইসি (গ্রাহক সম্পর্কিত তথ্য) ফরম পূরণ করে সহজেই এমএফএস সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানে হিসাব খুলতে পারছেন। ফলে গ্রাহক ঝামেলা মুক্তভাবে হিসাব খুলতে পারছেন।
২০১০ সালে মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০১১ সালের ৩১ মার্চ বেসরকারি খাতের ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালুর মধ্য দিয়ে দেশে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের যাত্রা শুরু হয়। এরপর ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালু করে বিকাশ। বর্তমানে দেশে মোবাইল ব্যাংকিং সেবার সিংহভাগই বিকাশের দখলে। এরপর ‘নগদ’-এর অবস্থান।
ভোরের আকাশ/নি