logo
আপডেট : ২১ জুন, ২০২৩ ১৪:০৫
তালগাছ বিলুপ্ততিতে বাড়ছে বজ্রপাতজনিত মৃত্যুঝুঁকি
সীতাকুন্ড (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি

তালগাছ বিলুপ্ততিতে বাড়ছে বজ্রপাতজনিত মৃত্যুঝুঁকি

সীতাকুন্ডের কুমিরায় আকাশ ছুঁই ছুঁই সারি সারি তালগাছ

সীতাকুন্ডে পরিবেশবান্ধব তালগাছের বিলুপ্ততিতে বাড়ছে প্রাকৃতিক দুর্যোগজনিত মৃত্যুঝুঁকি। ৯টি ইউনিয়ন ও ১ পৌরসভা নিয়ে গঠিত সীতাকুন্ড উপজেলায় রয়েছে ১২০টি গ্রাম। উপজেলার দক্ষিণাঞ্চলে গড়ে উঠা ব্যাপক শিল্প-কারখানায় তালগাছের নিবিড় বনায়নে মাত্রাতিরিক্ত প্রভাব পড়লেও সৈয়দপুর, বারৈয়াঢালা, সীতাকুন্ড সদর, মুরাদপুর, বাঁশবাড়িয়া ও কুমিরায় আকাশ ছুঁই ছুঁই সারি সারি তালগাছের সেই নিবিড় বনায়ন এখন শুধুই স্মৃতি আর স্মৃতি।

 

তালপাতায় বাবুই পাখির শৈল্পিক বাসা বাতাসে দুলে দুলে গভীর মুগ্ধতা ছড়িয়ে আদিকাল থেকেই তালগাছ বাড়িয়ে আসছে সীতাকুন্ডের গ্রাম-বাংলার শোভা ও ঐতিহ্য। চিরকাল ধরেই তালগাছ বজ্রপাতজনিত প্রাকৃতিক দুর্যোগ হতে সীতাকুন্ডবাসীকে রক্ষা করে আসছে। বজ্রপাত থেকে রক্ষায় উঁচু তালগাছের কোনো বিকল্প নেই। তালগাছ হারিয়ে যাওয়ায় উপজেলায় প্রতিনিয়ত বাড়ছে বজ্রপাতজনিত মৃত্যু।

 

রেহাই পাচ্ছে না পশুপাখিরাও। গত আষাঢ়ে সৈয়দপুরের মহানগর গ্রামের দরিদ্র কৃষক মো. মাসুদের ৩টি গরু বজ্রপাতে নিহত হওয়ার ঘটনায় মারাত্মক হতাশা নেমে আসে কৃষক পরিবারে। গত শনিবার বজ্রপাতে ৭নং কুমিরা ইউনিয়নস্থ কাজীপাড়ার দরিদ্র কৃষক মো. হাশেমের ৩টি, মুরাদপুর ও সৈয়দপুরে আরো ৪টি গরু এবং ১টি মহিষের মৃত্যুতে কৃষক পরিবারে বাড়ছে আহাজারি।

 

আমিরাবাদের বাসিন্দা উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সদস্য ও সীতাকুন্ড আদর্শ ফুটবল একাডেমির প্রশিক্ষক মো. নুরুচ্ছাফা জানান, সমুদ্র-পাহাড়ে অপরূপ উপজেলার প্রকৃতির জীববৈচিত্র্য রক্ষায় বাড়ির আঙিনার পাশে, রাস্তার ধারে, বেড়িবাঁধ, অনাবাদি কিংবা পতিত জমি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তালগাছ রোপণের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে।

 

আলাকুলিপুরের বাসিন্দা চট্টগ্রাম জজ আদালতের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট হুসাইন মুহাম্মদ আশরাফুদ্দীন জানান, প্রাচীনকাল থেকেই তালগাছ তার রস, ফল ও বীজের শাঁস দিয়ে ভোজনরসিক সীতাকুন্ডবাসীর রসনাবিলাস করে আসছে।

 

জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ়ে কাঁচা তালের শাঁস খাওয়ার জন্য গ্রামবাংলায় চারদিকে হৈচৈ পড়ে যায়। শ্রাবণ মাসে পাকা তালের হলুদ রসে তালের পিঠা, তালের রুটি, তালসত্ব ও তালের বড়াসহ আরো কত বাহারি রকম পিঠা স্বাদে-গন্ধে কদর আদি ও অকৃত্রিম। প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ছাড়াও তালপাতা দিয়ে ঘর ছাওয়া, চাটাই, মাদুর, আঁকার পট, পুতুল, বিভিন্ন কুটির শিল্প ও হাতপাখা তৈরিতে রয়েছে অপরিসীম ভূমিকা।

 

পরিবেশবাদী লেখক অধ্যক্ষ মুকতাদের আজাদ খান জানান, তালগাছ অন্যতম পরিবেশবান্ধব, জনপ্রিয়, ঐতিহ্যবাহী ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষাকারী পরমবন্ধু। এক সময় গ্রাম-বাংলার অধিকাংশ বাড়িঘর, রাস্তার দু-পাশ, পুকুরপাড়, বেড়িবাঁধ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রচুর তালগাছ ছিল। তখন দূর থেকে কোনো বাড়ি বা স্থান চেনাতে তালগাছের ভ‚মিকা ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে সেই দিন আর নেই। কালের পরিক্রমায় আজ হারিয়ে যাচ্ছে পরিবেশবান্ধব ঐতিহ্যবাহী তালগাছ।

 

তালগাছের সাথে হারিয়ে যাচ্ছে পাতায় বাসা তৈরি করে অবস্থান করা হাজার হাজার বাবুই পাখির কিচির-মিচির ডাকের মনোরম দৃশ্য।

 

ভোরের আকাশ/নি