আগামী রোববার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কোরবানির পশুর হাট বসবে রাজধানীতে। ইতোমধ্যেই ঢাকার হাটগুলোয় আসতে শুরু করেছে কোরবানির পশু। ট্রাক-পিকআপে করে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এসব পশু আনছেন ব্যবসায়ীরা। প্রতিবারের মতো এবারো কোরবানির পশুর হাটে অসুস্থ পশুর চিকিৎসায় সার্বিক সহায়তা করবে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম। সেইসঙ্গে পশুর হাটে শক্ত মনিটরিং করবে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর।
পশুর হাটের নানাবিধ কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জানান, হাটে আসা ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ই যেন স্বাচ্ছন্দ্যে তাদের কোরবানির পশু বেচাকেনা করতে পারেন এটাই আমাদের প্রত্যাশা। অনেক খামারি ও ব্যবসায়ীরা গরু নিয়ে আসেন, অনেক টাকায় বিক্রি করে। আবার কাউকে অজ্ঞান করে বা যেকোনোভাবে টাকা কেড়ে নেয়ার ঘটনাও ঘটে।
তবে এবারো বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে হাটে ক্যাশলেস পদ্ধতি থাকছে এটা ভালো বিষয়। বার ঢাকা ও চট্টগ্রামের ১০টি পশুর হাটে ডিজিটাল লেনদেন অর্থাৎ ‘ক্যাশলেস’ লেনদেনের উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এসব হাটে নগদ টাকার পরিবর্তে কার্ডের মাধ্যমে টাকা পরিশোধ করে পশু কেনা যাবে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, চলতি বছর কোরবানিযোগ্য মোট গবাদি পশুর সংখ্যা ১ কোটি ২৫ লাখ ৩৬ হাজার ৩৩৩, যা গত বছরের চেয়ে ৪ লাখ ১১ হাজার ৯৪৪টি বেশি। আর এবার কোরবানির পশুর সম্ভাব্য চাহিদা ১ কোটি ৩ লাখ ৯৪ হাজার ৭৩৯টি। সে হিসাবে ২১ লাখ ৪১ হাজার ৫৯৪টি পশু উদ্বৃত্ত আছে। সব মিলিয়ে এ বছর কোরবানিযোগ্য গবাদি পশুর মধ্যে ৪৮ লাখ ৪৩ হাজার ৭৫২টি গরু-মহিষ, ৭৬ লাখ ৯০ হাজার ছাগল-ভেড়া এবং ২ হাজার ৫৮১টি অন্যান্য প্রজাতির গবাদিপশু রয়েছে।
জানা গেছে, অন্য বছরের মতো এবারো প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কঠোর মনিটরিং থাকবে, থাকবে ক্যামিকেল, স্টেরয়েড, হরমোন ও অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে বা অবৈধ পন্থায় হৃষ্টপুষ্ট করা গরুর ব্যাপারে সতর্কতা। এদিকে বর্তমানে সারা দেশে খামারিদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে, সবার মধ্যে সচেতনতা এসেছে। এতে খামারিরা এখন স্বাভাবিক পদ্ধতিতে গরু হৃষ্টপুষ্ট করে থাকে। পাশাপাশি খামারিদের উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে।
অন্যদিকে এবার রাজধানীর স্থায়ী-অস্থায়ী হাটগুলোয় ৫ সদস্যের ভেটেরিনারি টিম কাজ করবে বলে জানিয়েছেন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. এমদাদুল হক তালুকদার।
সেইসঙ্গে তিনি জানান, ভেটেরিনারি মেডিকেল টিমের কার্যক্রম মনিটরিংয়ের জন্য কেন্দ্রীয় মনিটরিং টিম এবং বিশেষজ্ঞ মেডিকেল টিম গঠন করা হবে। পাশাপাশি কোরবানির হাট ব্যবস্থাপনার জন্য মনিটরিং টিম গঠন ও কন্ট্রোলরুম খোলা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
সংশ্লিষ্টরা বলেন,সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকার আশপাশে অনেক খামার গড়ে উঠেছে। এটা ভালো বিষয়। অনেকেই খামার গড়ে তুলছেন, স্বাবলম্বী হচ্ছেন। তবে শুধু এ খামারের গরুতে ঢাকার চাহিদা মেটে না। এজন্য সারা দেশ থেকেই ঢাকায় গরু আসে। প্রত্যন্ত অঞ্চলের খামারিরা একটু ভালো দামের আশায় অনেকেই শহরমুখী হয়। এক্ষেত্রে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণেও এখন দ্রুত পশু আনা যাচ্ছে।
এছাড়া ঢাকার আশপাশের জেলা-উপজেলা থেকে পশু দ্রুত আনা যায়, এতে করে কোনো বাজারে হঠাৎ পশু কমে গেলে বা সংকট দেখা দিলে দ্রুতই কিন্তু কাভার হয়ে যাচ্ছে। কোনো বাজারে দাম হঠাৎ বেশি হলে পশুর গ্যাপ পূরণ হয়ে যাচ্ছে। বিক্রেতারাও ওইভাবে হিসেব করে ওইসব বাজারে মুভমেন্ট করতে পারে।
আগে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলো থেকে ট্রাক ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফেরিঘাটে এসে অপেক্ষা করত। এখন সকালে গরুর ট্রাক যাত্রা করলে মুহূর্তেই চলে আসছে ঢাকায়।
ভোরের আকাশ/নি