logo
আপডেট : ২৫ জুন, ২০২৩ ১১:২৬
বন্ধ হয়ে গেছে পানিপ্রবাহ
শতবর্ষী টুংচর খালে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ
নকিব কাজী, চরফ্যাশন (ভোলা)

শতবর্ষী টুংচর খালে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ

দৌলতপুর গ্রামের টুংচর এলাকায় বাঁধ দিয়ে এভাবেই মাছ চাষ করা হচ্ছে

ভোলার চরফ্যাশনের দক্ষিণ আইচায় টুংচর খাল দখলে নিয়ে ঘের নির্মাণ করে মাছ চাষের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় চর মানিকার ইউপি চেয়ারম্যান শফিউল্ল্যাহ হাওলাদারসহ তার ছেলে তুহিন হাওলাদার ও শহিন হাওলাদারের বিরুদ্ধে।

 

স্থানীয় কৃষক ও জেলেদের বাধা উপেক্ষা করে ওই ইউনিয়নের দৌলতপুর গ্রামের অংশে শতবর্ষী খালটি দখল করে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ শুরু করায় দীর্ঘ খালটির আশপাশের কয়েক গ্রামের হাজার হাজার কৃষকের সেচনির্ভর কৃষি যেমন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে তেমনি দীর্ঘমেয়াদি জলাবন্ধতার ঝুঁকিতে রয়েছে বিস্তৃত জনপদ। দখলকৃত খালটি উদ্ধার চেয়ে সম্প্রতি স্থানীয় কৃষক ও জেলেরা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরারব লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগ দায়েরের দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি উপজেলা প্রশাসন।

 

স্থানীয় সূত্রে জানাযায়, টুংচর খালটি দক্ষিণের বুড়াগৌরাঙ্গ নদী থেকে উৎপত্তি হয়ে চর মানিকা এবং রসূলপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের মধ্যদিয়ে পশ্চিমের মায়ানদীতে সংযুক্ত হয়েছে। চর মানিকা ইউনিয়নের দৌলতপুর গ্রামের টুংচর এলাকায় বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করায় খালটির বুড়াগৌরাঙ্গ এবং মায়ানদীর প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। স্বাভাবিক প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় খালটির বিভিন্ন অংশে বিভিন্ন জন বাঁধ দিয়ে কেউ মাছ চাষ করছে, কেউ বা ভরাট করে বাড়িঘর তৈরির প্রক্রিয়া শুরু করেছে।

 

ফলে শতবর্ষী খালটি শীঘ্রই তার অস্তিত্ব হারাতে বসছে। জবর দখলে খালটি বিপন্ন হওয়ায় চর মানিকা এবং রসূলপুর ইউনিয়নের গ্রামগুলোতে কৃষি সেচ ব্যবস্থা এবং পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। চলতি বর্ষায় যেমন দীর্ঘমেয়াদি জলাবদ্ধতায় কৃষকের ফসল ডুবির শঙ্কা দেখা দিয়েছে তেমনি শুষ্কমৌসুমে সেচের অভাবে কৃষি চাষ বিঘ্নিত হবে।

 

স্থানীয় কৃষকরা অভিযোগ করেন, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শফিউল্লাহ হাওলাদার ও তার দুই ছেলে তুহিন হাওলাদার ও শহিন হাওলাদার ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে খালের মাছ খালে অংশে একাধিক বাঁধ দিয়ে মাছের ঘের নির্মাণ করে মাছ চাষ শুরু করেন। স্থানীয় কৃষকরা ও গ্রামবাসী বাধা দিলেও সকল বাধা উপেক্ষা করে চেয়ারম্যানের ছেলেরা ওই খালটিতে পানি নিষ্কাশন বন্ধ করে জবরদখল করে নেন।

 

এবং ঘের নির্মাণ করে মাছ চাষ শুরু করে। জবরদখলের সময় স্থানীয় কৃষক ও জেলেরা বাধা দিলেও বন্ধ হয়নি খাল দখল। পরে জেলে ও কৃষকরা খালটি জবরদখল উচ্ছেদ চেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেন। কিন্তু দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও কে নো সুরাহ হয়নি।

 

স্থানীয় কৃষক মো. মাসুদ জানান, শত বছরের পুরোনো খালটি জবরদখল করে মাছের ঘের নির্মাণ করায় বিপাকে পরেছেন ওই ইউনিয়নের কৃষকরা। খালটি বন্ধ করে দেয়ায় আবাদি জমিতে তীব্র জলাবদ্ধতা হয়। পানি নিষ্কাশনের আর কোনো বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় জলাবদ্ধতার কারণে নষ্ট হচ্ছে কৃষকের ফসল। এছাড়াও ইরি মৌসুমে পানির সংকটে ইরি চাষে ব্যহত হচ্ছে।

 

চর মনিকা ৬নং ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য মো. জাহাঙ্গীর জানান, কৃষকের আবাদি জমিতে জলবদ্ধতা নিরশন ও সেচ কাজে ব্যবহারিত একমাত্র সরকারি খালটি চেয়ারম্যানের দুই ছেলে তুহিন হাওলার ও শাহিন হাওলাদার ক্ষমতার প্রভাবখাটিয়ে জবরদখল করে মাছের ঘের নির্মাণ করায় বিপাকে পড়েছে ওই এলাকার কৃষকরা। জলবদ্ধতায় খেতেই পচছে কৃষকের আবাদি ফসল।

 

এঘটনায় এলাকার কৃষক ও জেলেরা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বারবরে লিখিত অভিযোগ দিলেও কোনো প্রতিকার পাননি।

 

অভিযোগ প্রসঙ্গে চেয়ারম্যান শফি উল্লাহ হাওলাদার জানান, ওই এলাকায় পূর্বে গরু-মহিষ চলাচল করতে গিয়ে একটি নালায় পরিণত হয়েছিল। ওই নালায় কিছু নৌকাও রাখতেন জেলেরা। পরে দক্ষিণ অংশ মানুষের জবরদখলে চলে যাওয়ার পর ওইখানে দেড় একর জমি আমার ছেলের নামে বন্দবস্ত নিয়ে ঘের নির্মাণ করেছি।

 

পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসকহারী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান জানান, টুংচর খালটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের মালিকানাধীন নয়। এবিষয়ে উপজেলা ভূমি প্রশাসনকেই ব্যবস্থা নিতে হবে। ভূমি প্রশাসন থেকে নির্দেশনা পেলে পানি উন্নয়ন বোর্ড কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারে বলে তিনি জানান।

 

সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবদুল মাতিন খান জানান, সরকারি খাল বা পাড়ের জমি বন্ধোবস্ত দেয়া বা কারো নামে নেয়ার কোনো সুযোগ নেই। ওই ইউনিয়নের তহশিলদারকে ঘটনাস্থলে পরিদর্শনে পাঠানো হবে।

 

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আল নোমান জানান, অভিযোগটি যাচাই করে খুব দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

ভোরের আকাশ/নি