রুদ্র মিজান: দেশে পর্যাপ্ত গবাদিপশু রয়েছে। কোরবানির পশুর চাহিদার চেয়েও বেশি। সেইসঙ্গে সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে আসছে গবাদিপশু। ভারতের তুলনায় মিয়ানমার থেকে এবার বিপুল পশু এসেছে দেশের কোরবানির হাটে। তারপরও দাম আকাশচুম্বী। কোরবানির পশু ক্রয় করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন ক্রেতারা। গত বছরের তুলনায় এবার হাটে কোরবানির পশুর দাম বেড়েছে ২৫-৩৫ শতাংশ।
ব্যাপারীরা জানান, বেচাবিক্রি কম হচ্ছে। গত কয়েকদিন ধরে হাটে মানুষের ভিড় হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু সে অনুসারে বিক্রি হয়নি। পশু দেখা, দাম জিজ্ঞাসা করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ক্রেতারা।
তবে ব্যাপারীরা জানান, সোমবার থেকে বেড়েছে বিক্রি। তবে ক্রেতারা কম দামে পশু কেনার আশা করলেও ব্যাপারীরা দামে ছাড় দিতে নারাজ।
তারা জানান, গত বছরের তুলনায় গো-খাদ্যের দাম বেড়েছে প্রায় ৩০ শতাংশ। পশু লালন-পালনের ব্যয় বেড়েছে অনেক। পরিবহন ব্যয়ও আগের চেয়ে বেশি। তাই গত বছরের মতো দামে বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না। যদিও ভারত ও মিয়ানমার থেকে অবৈধভাবে দেশে ঢুকেছে গবাদিপশু। ব্যবসায়ীদের একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট এতে জড়িত বলে গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে।
সূত্রমতে, সাতক্ষীরার ইছামতি নদী হয়ে শাকারা হয়ে ঢুকছে গবাদিপশু।
এছাড়াও কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও সিলেট সীমান্ত দিয়ে গরু আনা হচ্ছে। ভারতের ব্যবসায়ীরা সীমান্ত এলাকায় গরু রেখেছেন দুই সপ্তাহ আগে থেকেই। সুযোগ বুঝে রাতের আঁধারে সামীন্ত পার করে তা আনা হচ্ছে দেশে। লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা ও পাটগ্রামের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে প্রায় প্রতিদিন শত শত ভারতীয় গরু অবৈধভাবে আমদানি করা হচ্ছে। বিজিবির সতর্কতার কারণে অতিসাবধানতা অবলম্বন করছে এই চক্র।
এছাড়াও মিয়ানমার থেকে গরু ঢুকছে দেশে। গত কয়েকদিন ধরে বিপুলভাবে বেড়েছে গরু আমদানি। কক্সবাজারের টেকনাফ, উখিয়া, রামু, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িসহ বিভিন্ন উপজেলায় এসেছে মিয়ানমারের গরু।
মিয়ানমারের গরুর জন্য নির্দিষ্ট পশুর হাটও রয়েছে কক্সবাজারের চকরিয়া, টেকনাফ ও বান্দরবান এলাকায়। চকরিয়ার ফাঁসিয়াখালীর ছড়ারকুল এলাকায় অবৈধ গরুর হাটটি চালাচ্ছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। প্রশাসনের কিছু কর্তার সহযোগিতায় অবাধে সেখানে বিক্রি হচ্ছে মিয়ানমার থেকে আনা গবাদিপশু।
টেকনাফের বাসিন্দা ওমর ফারুক জানান, দেশি গরুর তুলনায় মিয়নামারের গরুর দাম একটু কম। গরুর পাশাপাশি মহিষ এসেছে মিয়ানমার থেকে। জেলেদের নৌকায় করে এই গরু আনা হয়েছে চোরাই পথে। যারা মাদকবাণিজ্যে জড়িত, ওই সিন্ডিকেটকে ব্যবহার করেই আনা হচ্ছে গরু।
জানা গেছে, প্রতিটি গরু ও মহিষ মিয়ানমার থেকে ৫০ থেকে ৮০ হাজার টাকায় কেনা হচ্ছে। তা দেশের কোরবানির পশুর হাটে বিক্রি করা হচ্ছে ১ লাখ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকায়।
বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ ইমরান হোসেন জানান, সারা বছর কষ্ট করে, বেশি দামে খাদ্য কিনে গবাদি পশু লালন-পালন করেছেন আমাদের ৯২ হাজার খামারি। এখন সীমান্ত দিয়ে বাইরের গরু-মহিষ দেশে ঢুকলে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হবো।
তবে পশুর দাম বেশি থাকার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, গো-খাদ্যের দাম বেড়েছে। বেড়েছে পরিবহন ব্যয়ও। সে হিসেবে আমাদেরও দাম বাড়াতে হচ্ছে। এদিকে, চোরাইপথে প্রতি রাতেই গরু ঢুকছে দেশে। আটকও হচ্ছে বিভিন্ন এলাকায়। গত ৮ জুন নাইক্ষ্যংছড়ি মিয়ানমার থেকে আসা ৪০টি গরু জব্দ করেছে বিজিবি। চোরাই পথে গবাদিপশু এলেও কোরবানির হাটে দাম কমছে না মোটেও। বরং বাড়ছে।
কেরানীগঞ্জের আল-আমিন ডেইরি ফার্মের মালিক আলতাফ মিয়া জানান, তার খামার থেকে গত বছর যে গরু ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। এবার ওই আকারের গরু ব্যাপারীদের কাছে বিক্রি করেছেন প্রতিটি লাখ টাকা মূল্যে। গো-খাদ্যসহ সব পণ্যের দাম বেড়েছে। যে কারণে বেড়েছে গবাদিপশুর দামও। তবে অবৈধভাবে ভারতের চেয়ে এবার মিয়ানমারের গরু বেশি এসেছে বলে মনে করেন তিনি। তাও খুব বেশি আসতে পারেনি ভারতীয় বিএসএফ ও বাংলাদেশি সীমান্তরক্ষী বিজিবির কারণে।
বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সাল থেকে বাংলাদেশে গরু আসা বন্ধ রয়েছে। চোরাইপথে গরু এলেও তা বিজিবির অভিযানে আটক হচ্ছে। ভারত থেকে বৈধভাবে গরু আমদানি বন্ধ হওয়ার পর থেকে দেশে বেড়েছে গবাদি পশুর লালন-পালন। দেশে এখন ছোট-বড় মিলিয়ে ১৯ লাখেরও বেশি খামার আছে।
এবার কোরবানির ঈদে ১ কোটি ৩ লাখ ৯৪ হাজার ৭৩৯টি পশুর চাহিদার বিপরীতে প্রস্তুত রয়েছে ১ কোটি ২৫ লাখ ৩৬ হাজার ৩৩৩টি। ওই হিসাব অনুসারে চাহিদার চেয়ে ২১ লাখ ৪১ হাজার ৫৯৪টি পশু বেশি আছে।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) পরিচালক লে. কর্নেল এ এম জাহিদ পারভেজ বলেন, সীমান্তে গরু অনুপ্রবেশের বিষয়টি বিজিবি দেখভাল করে। কোরবানির ঈদ ঘিরে মিয়ানমার বা ভারতীয় গরু দেশে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। এ বিষয়ে বিজিবি সর্তক রয়েছে। অবৈধভাবে গরু আনা হলে তা আটক করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
ভোরের আকাশ/নি