logo
আপডেট : ২ জুলাই, ২০২৩ ১৭:৪৬
ডেঙ্গু পরিস্থিতি
গত বছরের তুলনায় মৃত্যু ৪৯ গুণ বেশি
নিজস্ব প্রতিবেদক

গত বছরের তুলনায় মৃত্যু ৪৯ গুণ বেশি

দ্রুত অবনতি ঘটছে দেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতির। হাসপাতালে ভর্তি রোগী এবং মৃত্যু পরিসংখ্যানে পেছনে পড়ে গেছে গত বছরের একই সময়ের ডেঙ্গু পরিস্থিতি। গত বছরের তুলনায় এ বছর প্রথম ছয় মাসে ডেঙ্গুতে মৃত্যু ৪৯ গুণ বেশি।

 

গত বছর প্রথম ছয় মাসে ১ হাজার ১১১ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন, তাদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছিল কেবল একজনের। এ বছর গত ২ জুলাই পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৮ হাজার ২৪৮ জন ডেঙ্গু রোগী এবং মারা গেছেন ৫০ জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, গত ছয় মাসে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া মোট ৮ হাজার ২৪৮ জন ডেঙ্গু রোগীর মধ্যে কেবল জুন মাসেই আক্রান্ত হয়েছেন ৫ হাজার ৯৫৬ জন। জুন মাসেই সর্বোচ্চ ৩৪ জনের মৃত্যু দেখেছে দেশ। বছরের প্রথম ছয় মাসে ডেঙ্গুতে এত মৃত্যু আর কখনো দেখা যায়নি।

 

অধিদপ্তর আরো জানায়, এডিস মশাবাহিত এই রোগে আক্রান্ত হয়ে গত বছর ৬২ হাজার ৩৮২ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন। তাদের মধ্যে রেকর্ড ২৮১ জনের মৃত্যু হয়।

 

২০১৯ সালে দেশের ৬৪ জেলায় এক লাখের বেশি মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে গিয়েছিলেন, যা এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ। সরকারি হিসাবে সে বছর মৃত্যু হয়েছিল ১৬৪ জনের।

 

এ বছর করা জরিপে ঢাকায় এডিস মশার যে বিস্তার দেখা গেছে, তাকে ঝুঁকিপূর্ণ বলছেন বিশেষজ্ঞরা। এ অবস্থায় সামনে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব আরো বাড়ার আশঙ্কা করেছেন তারা।

 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বুলেটিন বলছে, এ মুহূর্তে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছেন ১৪০৫ জন। তাদের ৯৪৪ জন ঢাকায় এবং ৪৬১ জন ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি। এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত যত জনের মৃত্যু হয়েছে, তাদের প্রায় সবাই ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভারে ভুগছিলেন এবং শক সিনড্রোমে মারা গেছেন।

 

চলতি বছর মাসের হিসাবে জানুয়ারিতে ৫৬৬ জন, ফেব্রুয়ারিতে ১৬৬ জন, মার্চে ১১১ জন, এপ্রিলে ১৪৩ জন এবং মে মাসে ১০৩৬ জন এবং জুন মাসে ৫৯৫৬ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এদের মধ্যে জানুয়ারিতে ছয়জন, ফেব্রুয়ারিতে তিনজন, এপ্রিলে দুজন, মে মাসে দুজন এবং জুন মাসে ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।

 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহম্মদ খুরশীদ আলম সাংবাদিকদের বলেন, এ বছর এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে যারা মারা গেছেন তাদের প্রায় প্রত্যেকে ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভারে ভুগছিলেন এবং শক সিন্ড্রোমে তাদের মৃত্যু হয়েছে।

 

খুরশিদ আলম বলেন, ‘আমরা ক্লিনিক্যালি তাদের মৃত্যুর কারণ জানার চেষ্টা করেছি। আমাদের কাছে থাকা তথ্যানুযায়ী এখন পর্যন্ত মৃতদের প্রায় প্রত্যেকে ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভারে ভুগছিলেন এবং শক সিন্ড্রোমে তাদের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া অন্য আরো কারণ থাকতে পারে, যা জানার জন্য অটোপসি করা প্রয়োজন। কিন্তু তা পরিবার অনুমোদন দেবে না। আর এটা সাধারণ প্র্যাকটিসও নয়।’

 

স্বাস্থ্যের ডিজি জানান, সারা দেশে রোগীর সংখ্যা কম থাকলেও আমরা সারা দেশের সব হাসপাতাল প্রস্তুত রেখেছি। এ বিষয়ে সবাইকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

 

ইতোমধ্যে সংশোধিত গাইডলাইন প্রত্যেক হাসপাতালে সরবরাহ করা হয়েছে। হাসপাতালগুলোর চাহিদা অনুযায়ী চিকিৎসক, ওষুধসহ সবকিছু সরবরাহ করা হচ্ছে। পরীক্ষার বিষয়ে ঘাটতি রয়েছে কিনা জানতে চাইলে মহাপরিচালক বলেন, যারা আমাদের কাছে আসছে তাদের ডায়াগনসিস কর হচ্ছে। যারা আসছে না তাদের তো করা সম্ভব না। এ বিষয়ে আমরা সচেতনতা বাড়াতে কাজ করছি। গণমাধ্যমসহ সবাইকে এ বিষয়ে এগিয়ে আসতে হবে। মানুষকে সচেতন করতে হবে। জ্বর হলে তারা যেন ডেঙ্গু পরীক্ষা করান।

 

তিনি আরো বলেন, প্রত্যেক বিভাগে ডেঙ্গু চিকিৎসায় পর্যাপ্ত প্রস্তুতি রাখা হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে মশকনিধন করাটা সব থেকে জরুরি। সিটি করপোরেশন ও স্থানীয় সরকার বিভাগসহ সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এটি সফল হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। একইসঙ্গে প্রত্যেক হাসপাতালে মশারি সরবরাহ করা হচ্ছে, তবে রোগীরা মশারির ভেতর থাকছেন না বলেও জানান তিনি।

 

হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখার পরিচালক শেইখ দাউদ আদনান জানান, ডেঙ্গু পরীক্ষায় গুরুত্ব দিতে সব হাসপাতালকে নির্দেশনা দেয়া আছে। এক্ষেত্রে আমাদের গত বছরই পরীক্ষার ফি নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছিল। প্রত্যেক হাসপাতালে গাইডলাইন সরবরাহ করা হয়েছে। রোগীদের জন্য মশারি নিশ্চিত করা হয়েছে। কিন্তু রোগীরা মশারির ভেতর থাকছেন না।

 

চিকিৎসক এলে তারা মশারির ভেতর থাকছেন, বাকি সময়টা বাইরে থাকছেন। রোগীদের মশারির ভেতরে রাখার বিষয়ে পুলিশিং ব্যবস্থা আমাদের নেই। এ বিষয়ে আমাদের রোগীদেরই সচেতন হতে হবে। এ সময় ডেঙ্গুজ্বর থেকে সুস্থ হওয়ার পর রোগীদের জটিলতা বেশি দেখা যাচ্ছে বলেও জানান তিনি।

 

ভোরের আকাশ/নি