logo
আপডেট : ৪ জুলাই, ২০২৩ ০৯:৫১
জামায়াতের রাজনৈতিক ভাগ্য সর্বোচ্চ আদালতের হাতে
এম বদি-উজ-জামান

জামায়াতের রাজনৈতিক ভাগ্য সর্বোচ্চ আদালতের হাতে

এম বদি-উজ-জামান: রাজনৈতিক দল হিসেবে জনসমর্থনের দিক থেকে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টির পরেই জামায়াতে ইসলামীর অবস্থান। যদিও টানা ১০ বছর পর গত ১০ জুনের সমাবেশ থেকে নিজেদের তৃতীয় বৃহত্তম দল হিসেবে দাবি করেছেন দলটির নেতারা।

 

কিন্তু জামায়াতের এখন আর দেশের কোনো নির্বাচনে অংশ নেয়ার আইনগত অধিকার নেই। ২০১৩ সালে হাইকোর্টের রায়ের পর দলটির নিবন্ধন বাতিল হয়েছে। এরপর থেকে দলীয় প্রতীক নিয়ে বা ব্যানারে আর কোনো নির্বাচনে অংশ নিতে পারেনি দলটি।

 

নিবন্ধন ফিরে পেতে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে আপিল বিভাগে আপিল করলেও সেই আপিলের আর শুনানির উদ্যোগ নেয়নি দলটি। ফলে দশ বছর ধরে আপিল বিভাগে পড়ে আছে জামায়াতের নিবন্ধন সংক্রান্ত মামলাটি। এই সময়ের মধ্যে একটিবারের জন্যও এই আপিলের ওপর শুনানির উদ্যোগ নেয়নি দলটি। নিবন্ধন ফিরে পেতে দলটির আইনগত চেষ্টাও নেই। সর্বোচ্চ আদালত আপিলের সারসংক্ষেপ দাখিল করতে দলটির আইনজীবীদের সময়সীমা বেঁধে দিলেও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তা দাখিল করেননি। তারা আবারো আদালত থেকে সময় নিয়েছেন।

 

এমন অবস্থায় দলটি রাজনীতির মাঠে সক্রিয় হয়ে উঠছে। দলটি সারা দেশে বিভাগীয় পর্যায়ে সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে টানা দশ বছর পর হঠাৎ দলটির সক্রিয় হয়ে ওঠাকে ভালো চোখে দেখছেন না সংশ্লিষ্ট মহল। দলটির রাজনৈতিক তৎপরতা বন্ধে এরই মধ্যে দেশের সর্বোচ্চ আদালত আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতির আদালতে আবেদন করা হয়েছে।

 

২৬ জুন সোমবার করা আবেদনে দলটি যাতে সভা-সমাবেশ ও মিছিল করতে না পারে সেজন্য নিষেধাজ্ঞা চাওয়া হয়েছে। এই আবেদনের ওপর আগামী ৩১ জুলাই আপিল বিভাগে শুনানি হবে। আবেদনকারীর পক্ষে আইনজীবী ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর বলেছেন, দলটির নিবন্ধন বাতিল করেছেন হাইকোর্ট। তাদের নেতাদের যুদ্ধাপরাধে ফাঁসি হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ে দলটির বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের প্রমাণ মিলেছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশে ওই নামে কোনো রাজনৈতিক দল তৎপরতা চালাতে পারে না। আমরা আদালতে সেটাই তুলে ধরব।

 

তবে জামায়াতের আইনজীবী ও দলীয় কেন্দ্রীয় নেতা অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ বলেছেন, স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করা, মিছিল-মিটিং করা একজন মানুষের সাংবিধানিক অধিকার। এ অধিকার খর্ব করা যায় না। তাই আইনিভাবেই মোকাবিলা করে জামায়াতের রাজনৈতিক অধিকার ফিরিয়ে আনা হবে।

 

হাইকোর্টের রায়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল হয়েছে সেই ২০১৩ সালের নভেম্বরে। এর এক মাসের মধ্যে ওই বছরের ডিসেম্বরে আপিল বিভাগে আপিল করলেও সেই আপিলের আর শুনানির উদ্যোগ নেয়নি দলটি। ফলে আট বছর ধরে আপিল বিভাগে পড়ে আছে জামায়াতের নিবন্ধন সংক্রান্ত মামলাটি। নিবন্ধন হারিয়ে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) রাজনৈতিক দল হিসেবে দেশের সব নির্বাচনে অংশ নেয়ার অধিকার হারিয়েছে।

 

এরপর থেকে দলীয় প্রতীক নিয়ে বা ব্যানারে আর কোনো নির্বাচনে অংশ নিতে পারেনি দলটি। কিন্তু নিবন্ধন ফিরে পাওয়ার জন্য দলটির আইনি তৎপরতাও চোখে পড়েনি। একাত্তরে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে দলটির শীর্ষ নেতাদের রায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল দলটিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে উল্লেখ করেছে। এসব রায়ের পর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের পক্ষ থেকে দলটিকে নিষিদ্ধের দাবি ওঠে।

 

কিন্তু সরকার আজ পর্যন্ত নিষিদ্ধ করেনি। যদিও সরকারপ্রধানসহ সরকারদলীয় নেতারা জামায়াতকে সন্ত্রাসী, জঙ্গি সংগঠন হিসেবে অভিহিত করে। এরপরও জামায়াত বাংলাদেশে নিষিদ্ধ হয়নি। সংবিধানের ৩৮ অনুচ্ছেদের (গ) ও (ঘ) উপ অনুচ্ছেদ, রিপ্রেজেন্টেশন অব পিপল্স অর্ডিন্যান্স (আরপিও) ১৯৭২ ও দ্য পলিটিক্যাল পার্টিস অর্ডিন্যান্স-১৯৭৮-এর বিধিবিধান অনুসরণ করে যেকোনো রাজনৈতিক দল বা সংগঠন নিষিদ্ধ করার সুযোগ থাকার পরও সরকার তা করেনি।

 

নিবন্ধন সংক্রান্ত মামলার কথা বলে জামায়াতকে নিষিদ্ধের পথে হাটেনি সরকার। ফলে দলটির নেতাকর্মীরা আড়ালে-আবডালে থেকেই রাজনৈতিক কর্মকান্ড চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছে।

 

দলটি নিবন্ধন হারানোর আগেই ২০১০ সাল ও এর পরপরই একে একে দলটির শীর্ষ নেতা গোলাম আযম, মতিউর রহমান নিজামী, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, আব্দুল কাদের মোল্লা, মীর কাশেম আলী, এটিএম আজহারুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরবর্তীতে শীর্ষ ৫ নেতা নিজামী, মুজাহিদ, কামারুজ্জামান, কাদের মোল্লা ও মীর কাশেম আলীর ফাঁসি কার্যকর করা হয় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায়।

 

গোলাম আযম, মাওলানা আবদুস সোবহান, মকবুল আহমদসহ আরো কয়েকজন শীর্ষ নেতার স্বাভাবিক মৃত্যু হয়। মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হিসেবে কারাবন্দি আছেন দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, এটিএম আজহারুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন নেতা। ভিন্ন মামলায় দলটির বর্তমান আমির ডা. শফিক আহমেদ ও সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারও কারাবন্দি।

 

এ অবস্থায় গত ১০ বছরে দলটি একপ্রকার আন্ডারগ্রাউন্ডে থেকেই নিজেদের গুছিয়ে নিয়েছে। এখন তারা জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে।

 

ভোরের আকাশ/নি