logo
আপডেট : ৫ জুলাই, ২০২৩ ১২:০৫
ডেঙ্গুঝুঁকিতে রাজধানীর সবাই
নিজস্ব প্রতিবেদক

ডেঙ্গুঝুঁকিতে রাজধানীর সবাই

ডেঙ্গুঝুঁকিতে রয়েছেন রাজধানীর সব মানুষ। সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ২৭ এবং উত্তর সিটি করপোরেশনের ২৮টি ওয়ার্ডের মানুষ। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে মহাখালী স্বাস্থ্য ভবনে এক প্রেস বিফিংয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম।

 

জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল ও এডিসবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির আওতায় এডিসের মৌসুমপূর্ব সার্ভে প্রকাশ করা হয়। এ বছর ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ৩ হাজার ১৪৯টি বাড়ি পরিদর্শন করে, তার মধ্যে ৫৪৯টি বাড়িতে এডিসের লার্ভা পেয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ঢাকা উত্তরে ২৭২টি বাড়ি এবং দক্ষিণে ২৭৮টি বাড়িতে পজিটিভ পেয়েছে। এর আগে নির্মাণাধীন বাড়িতে লার্ভা বেশি পাওয়া গেলেও এবার বেশি পাওয়া গেগে বহুতল বাড়িতে। নাজমুল ইসলাম বলেন, আমরা ৩ হাজার ১৪৯টি বাড়ি পরিদর্শন করেছি। এর মধ্যে ৫৪৯টি বাড়ি আমরা পজিটিভ পেয়েছি। নিম্নআয়ের মানুষ যেসব জায়গায় বসবাস করেন, সেখানেও ১২ শতাংশ এবং জনশূন্য জমি, যেখানে কোনো স্থাপনা নেই, সেখানেও আমরা ৫ শতাংশ পজিটিভ পেয়েছি।

 

উত্তরে ৪০টি এবং দক্ষিণে ৫৮টি ওয়ার্ড পরিদর্শন করার কথা জানিয়ে নাজমুল ইসলাম বলেন, প্রাক-মৌসুস বা মৌসুম চলাকালীন যদি ব্লুটো ইনডেক্স ২০ ছাড়িয়ে যায়, তাহলে সামনে বিপদ হতে পারে বলে সেই আশঙ্কার কথা মনে করিয়ে দেয়। উত্তরে আমরা ৪০টির মধ্যে ২৭টি ওয়ার্ডে ব্লুটো ইনডেক্স ২০-এর বেশি পেয়েছি। দক্ষিণে ৫৮টি ওয়ার্ডের মাঝে বেশি পেয়েছি ২৮টিতে। পরিসংখ্যান বলে গোটা ঢাকা সিটিই ঝুঁকির মধ্যে আছে। হাউস ইনডেক্স ১০-এর নিচে থাকার কথা, কিন্তু সেটি আমরা উত্তরে ৩৫টি ওয়ার্ডে পেয়েছি ১০-এর বেশি এবং দক্ষিণে ৪৫টি ওয়ার্ডে ১০-এর বেশি। কাজেই উত্তর দক্ষিণ যেভাবেই আমরা বিবেচনা করি না কেন, পুরো ঢাকা মেট্রোপলিটন সিটিতেই এডিসের ব্যাপক উপস্থিতি। আমার সবাই কিন্তু ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছি।

 

ঢাকা উত্তরের মধ্যে ২, ৩, ৫, ৬, ১০, ১৩, ১৪, ১৫, ১৬, ১৭, ১৮, ১৯, ২০, ২১, ২২, ২৩, ২৫, ২৬, ২৭, ২৮, ২৯, ৩০, ৩১, ৩৩, ৩৫, ৩৭ এবং ৩৮নং ওয়ার্ড বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ এসব ওয়ার্ডে ব্লুটো ইনডেক্স ২০-এর বেশি। এছাড়া ঢাকা দক্ষিণে ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৯, ১১, ১২, ১৩, ১৫, ১৬, ১৮, ১৯, ২২, ২৩, ২৬, ৩৩, ৩৪, ৩৬, ৪১, ৪৪, ৪৬, ৪৮, ৫০, ৫১, ৫৪, ৫৫ ও ৫৬নং ওয়ার্ড বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। যতগুলো বাড়ি আমরা পরিদর্শন করেছি, তার মধ্যে উত্তরে ১৮.২১ শতাংশ, দক্ষিণে ১৫.৪৭ শতাংশ বাড়িতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। উত্তরে কনটেইনার যেগুলো রয়েছে, সেগুলোর ২৬.৭৯ শতাংশ এবং দক্ষিণে ১৯.৮২ শতাংশ ব্রুটো ইনডেক্স যেটি, তাতে উত্তরে ২৫.৫২ শতাংশ এবং দক্ষিণে ২০.৯৮ শতাংশ পাওয়া গেছে। বাসাবাড়ির মধ্য সবচেয়ে বেশি পাওয়া গেছে বহুতল ভবনে; ৪৩.৫৩ শতাংশ, একক বাসাবাড়ির ২১.৩১ শতাংশ, নির্মাণাধীন ভবনের ১৮ শতাংশ পাওয়া গেছে। বাসাবাড়িতে যেগুলোয় পাওয়া গেছে, সেসব বাসাবাড়ির ফ্লোরে ১৪.৫৪ শতাংশে, প্লাস্টিকের ড্রামে ৪.৭৩ শতাংশে, প্লাস্টিকের বাকেটে ৯.২৮ শতাংশে এবং ফুলের টবের ৮.০৩ শতাংশে লার্ভা পাওয়া গেছে।

 

নাজমুল ইসলাম বলেন, এ বছর এখনো কিন্তু মৌসুম শুরু হয়নি, তারই মধ্যে ৫৬টি অনাকাক্সিক্ষত মৃত্যু কিন্তু ঘটেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম বলেন, যেসব এলাকায় ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি দেখা যাচ্ছে, সেসব জায়গাগুলো আমরা চিহ্নিত করেছি। আমাদের হাসপাতালগুলোয় দেখতে পাচ্ছি ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি। যেসব হাসপাতালে সমস্যা আছে, আমরা চেষ্টা করছি জনবল এবং কারিগরি সহায়তা দেয়ার। সারা দেশের মধ্যে চট্টগ্রামে বেশি রোগী দেখতে পাচ্ছি।

 

আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডাঃ তাহমিনা শিরীন বলেন, গত বছর ছিল ডেন থ্রি এবং ডেন ফোর। এ বছর ডেন টু আর ডেন থ্রি। চারটি সেরোটাইপ গত বছর ছিল না। কক্সবাজারে ডেন ওয়ানের একটা কেইস পাওয়া গিয়েছিল। ব্যাপারটা হচ্ছে, পুরো বাংলাদেশের যদি চিত্র চিন্তা করি, তাহলে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন রকম থাকতে পারে। যেহেতু আমরা বিভিন্ন হসপিটাল থেকে স্যাম্পেল যেগুলো পাই সেটার উপরে সেরোটাইপ করে থাকি। ওইটার ভিত্তিতেই আমরা এবারে বলতে পারছি যে ডেট টু ৬২ শতাংশ এবং ডেন থ্রি ৩৮ শতাংশ ।

 

সেরোটাইপ নির্ণয় একটি চলমান প্রক্রিয়া জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের এখনো শেষ হয়নি। এ পর্যন্ত আমার ২০০-এর মতো স্যাম্পল থেকে এ পাস্টেনটেজ করেছি। জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে এবং এ পরিবর্তনের কারণে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশেও মশার বৃদ্ধি হচ্ছে বা ডেঙ্গুর প্রভাব বাড়ছে। পরিবর্তন তো হতেই থাকবে। তাহলে প্রতিকার উপায়টা কী?

 

এমন প্রশ্নে কিটতত্ববিদ কবিরুল বাশার বলেন, দারুণভাবেই এডিস মশা অ্যাডাপ্টেড। এডিস অত্যন্ত সুচতুর একটি মশা। যেকোনো পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সে নিজেকে খাপে উঠতে সক্ষম। ফিল্ডে কাজ করার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, ফিল্ডে গিয়েছি এমন এমন ছোট্ট জায়গায়, একটি গ্রিল কেটে রেখে দিয়েছে। ছোট্ট একটি ছিদ্র। সেখানে আমরা এডিস পেয়েছি। সব মিলিয়ে আসলে এর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা কিন্তু বেশ কঠিন। একটি কথা না বললেই নয়। আপনারা যদি রিপোর্টটায় দেখেন দেখবেন মাল্টি স্টেট বিল্ডিংয়ে আমরা এবার ৪৩ শতাংশ পেয়েছি, এর আগে ফোরটি পার্সেন্ট পেয়েছিলাম কনস্ট্রাকশনে। এবার কনস্ট্রাকশন চেঞ্জ হয়ে মাল্টি স্ট্রেট হয়েছে। তার মানে এডিস কিন্তু স্বভাব পরিবর্তন করে মাল্টি স্টেট বিল্ডিংয়ে জায়গা করে নিয়েছেন। এখন এ বিল্ডিংয়ে আমি প্রফেসর নাজমুল, ড. একরাম আমরা যখন ফিল্ডে যাই, তখন একটা বাড়িতে ঢুকতে গিয়ে আমাদের আধাঘণ্টা-এক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে। আমরা ঢুকলাম, ঢুকে আমরা পার্কিংয়ে পানি পেলাম। এডিস মশা পেলাম।

 

তিনি বলেন, যেখানে তাদের ঢুকতে আধাঘণ্টা-এক ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়েছে, সেখানে সিটি করপোরেশনে মশকনিধন কর্মী কীভাবে ঢুকতে পারবেন! এখানে নগরবাসী যদি এ মুহূর্তে সম্পৃক্ত না হয় এ কাজগুলোয়, নগরবাসী যদি একত্রিত না হয়, এ মুহূর্তে সিচুয়েশন হ্যান্ডল করা কঠিন।

 

ভোরের আকাশ/আসা