logo
আপডেট : ৬ জুলাই, ২০২৩ ১১:৫২
চট্টগ্রামে ভয়ংকর রূপ নিচ্ছে ডেঙ্গু পরিস্থিতি
চট্টগ্রাম ব্যুরো

চট্টগ্রামে ভয়ংকর রূপ নিচ্ছে ডেঙ্গু পরিস্থিতি

চট্টগ্রামের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ডেঙ্গু রোগী

চট্টগ্রামে চলতি বছরে ৬১৩ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছে ১০৫ জন। এ বছর জুনে ৩১৮ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে।

 

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সর্বশেষ ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত রোগীদের শনাক্ত করা হয়। সোমবার ডেঙ্গুতে একজনের মৃত্যু হয়েছে এবং নতুন করে ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে ৩৩ জনের। সিভিল সার্জন কার্যালয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ডেঙ্গুতে সোমবার মারা যাওয়া ব্যক্তির নাম মো. মাহিদুল। তিনি চট্টগ্রাম নগরের চান্দগাঁও এলাকার বাসিন্দা ছিলেন। শনিবার নগরের পাঁচলাইশে পার্ক ভিউ হাসপাতালে ডেঙ্গু নিয়ে ভর্তি হন মাহিদুল। এরপর সোমবার সেখানেই তার মৃত্যু হয়। জেলায় ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়ংকর রূপ নিচ্ছে বলে অভিমত বিশেষজ্ঞদের।

 

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের দেখা দিচ্ছে ‘শক সিনড্রোম’। শুধুমাত্র চলতি বছরের জুনে ২৪৮ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে এটি শনাক্ত হয়েছে। ডেঙ্গুর চারটি ধরণ রয়েছে। যারা আগে একবার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন এবং দ্বিতীয়বার এই চার ধরনের অন্য একটিতে আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের ঝুঁকি অনেক বেশি। তারাই মূলত শক সিনড্রোমে চলে যান বেশি। ডেঙ্গু শক সিনড্রোম হলে শ্বাস-প্রশ্বাসে অসুবিধা কিংবা গতি বেড়ে যায়।

 

ত্বক শীতল হয়ে যায়, ত্বকের ভেতরের অংশে রক্তক্ষরণের কারণে ত্বকের ওপর লাল ছোপ হয়। বমি, মল কিংবা প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত যাওয়া, প্রচন্ড পেটব্যথা ও অনবরত বমি হওয়া, নাক ও দাঁতের মাড়ি থেকে রক্তক্ষরণ, অবসাদ দেখা দেয়। এছাড়া গত ছয় মাসে ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ৯ জন। এর মধ্যে ৬ জনই গত জুন মাসে মারা গেছেন শক সিনড্রোমে আক্রান্ত হয়ে। বাকি ৩ জনের মৃত্যু হয় জানুয়ারিতে। চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত শক সিনড্রোমের ধরন মিলেছিল চলতি বছরের ৭ জুন পার্কভিউ হাসপাতালে।

 

চিকিৎসকরা আরো জানিয়েছেন, ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর শক সিনড্রোম হলে তাকে বাঁচানো কঠিন হয়ে যায়। যারা আগে থেকেই বড় কোনো অসুখে ভুগছেন, যাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদেরও শক সিনড্রোমের ঝুঁকি বেশি।

 

সিভিল সার্জন কার্যালয়ের হিসাবে এ নিয়ে চলতি বছর চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে ১১ জনের মৃত্যু হলো। এ বছরের জুলাইয়ের প্রথম তিন দিনে ১১২ জনসহ চট্টগ্রামে এ বছর ৬১৩ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ১০৫ জন এবং জুনে আরো ৩১৮ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। এদিকে চলতি বছর দেশে এক দিনে ডেঙ্গুতে মৃত্যু ও আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তির রেকর্ড হয়েছে।

 

সোমবার সকাল আটটা থেকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময়ে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ৬৭৮ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

 

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেলের মেডিসিন বিভাগের বিশেষজ্ঞরা বলেন, একজন সুস্থ মানুষের শরীরে দেড় লাখ থেকে চার লাখ প্লাটিলেট থাকে। শরীরে রক্তজমাট বাধার ক্ষেত্রে প্লাটিলেট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্লাটিলেট যখন ২০ হাজারের নিচে নেমে যাবে, তখন রক্তজমাট বাধার প্রক্রিয়া নিষ্ক্রিয় হয়ে শরীরের বিভিন্ন জায়গা থেকে রক্ত বের হতে থাকে।

 

বিশেষজ্ঞরা আরো বলেন, ডেঙ্গুর চারটি ধরণ রয়েছে। যারা আগে একবার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন এবং দ্বিতীয়বার এই চারটি ধরণের অন্য আরেকটিতে আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের ঝুঁকি অনেক বেশি। তারাই মূলত শক সিনড্রোমে চলে যান বেশি।

 

চট্টগ্রাম মেডিকেলের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান বলেন, ‘ডেঙ্গু পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে পর্যাপ্ত কিট রয়েছে। চিকিৎসকদের প্রতিনিয়ত প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। চিকিৎসা নির্দেশিকা সরবরাহ করা হয়েছে চিকিৎসকদের। সরকারি প্রতিষ্ঠানে ডেঙ্গু পরীক্ষার ফি ১০০ টাকা, বেসরকারি হাসপাতালে ৩০০ টাকা করে নেয়া হচ্ছে।

 

ভোরের আকাশ/নি