logo
আপডেট : ১০ জুলাই, ২০২৩ ১০:৩৬
রাজধানীর বুকে মাদকের হাট
ইমরান খান

রাজধানীর বুকে মাদকের হাট

ইমরান খান: প্রতিদিনই মাদকবিরোধী অভিযানে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে মাদক বিক্রেতাদের। এরপরও থেমে নেই মাদকের বেচাকেনা। রাজধানীর পল্লবীজুড়েই অবাধে চলছে মাদকের হাট। প্রকাশ্যেই গ্রাহক ডেকে ডেকে বিক্রি করা হচ্ছে ইয়াবা ও হেরোইনের মতো মরণনেশা। বেশিরভাগ মাদক ব্যবসায়ীর পুরো পরিবার জড়িয়ে পড়েছে মাদক ব্যবসায়।

 

একসঙ্গে বাবা, ছেলে, বোন ও চাচিসহ সবাই পরিচালনা করছে মাদকের স্পট। এ মাদক দেশের তরুণ সমাজকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। এর সঙ্গে ধ্বংস হচ্ছে সমাজের হাজারো পরিবারের সুখের সংসার। এসব মাদক কারবারিকে ধরতে বিশেষ অভিযানে নেমেছে পুলিশ। এর মধ্যেই বেশ কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর পল্লবীর সেকশন ১০, ১১ ও ১২ নম্বরে অবস্থিত বিভিন্ন বিহারি ক্যাম্পে গড়ে উঠেছে মাদকের স্পট। এসব স্পট পরিচালনা করছে মাদক ব্যবসায়ী মফিজ, সনু, সায়মা, শাম্মী, আজহার ও লেংড়া রুবেলসহ ১২ মাদক ব্যবসায়ী। বিহারি ক্যাম্পের বাইরে ১২ নম্বর সেকশনের বাউনিয়াবাধ বস্তি ও মিরপুর ৬ নম্বরের মিল্কভিটা বস্তিতেও রয়েছে একাধিক মাদকের স্পট।

 

সূত্র বলছে, ইয়াবা মফিজ প্রায় ২৬ বছর ধরে মিরপুর ১০ নম্বরের থার্টিন হার্টস ক্যাম্পে মাদক ব্যবসা করছে। এর মধ্যে বহুবার পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে। কারাগারে থাকলেও কখনো থেমে থাকেনি তার মাদক ব্যবসা। সে কারাগারে থাকা অবস্থায় তার দুই ছেলে আলী ও হাসান হাল ধরে মাদক ব্যবসার। রাজধানীর পল্লবীর ১০ নম্বর সেকশনের এ-ব্লক এলাকার বিহারিদের থার্টিন হার্টস ও ওয়াবদাহ বিল্ডিং ক্যাম্পে প্রকাশ্যেই বিক্রি হয় তাদের হেরোইন ও ইয়াবা।

 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মিরপুরের অন্যতম প্রভাবশালী মাদক ব্যবসায়ী মফিজ ও তার দুই ছেলের বিরুদ্ধে অন্তত ২২টি মামলা রয়েছে। এরপরও অনেকটা প্রকাশ্যেই মাদক ব্যবসা করে এ মাদক কারবারি।

 

থার্টিন হার্টস ক্যাম্পে বাসিন্দা মো. আসিফ ইকবাল জানান, মফিজ ও তার ছেলেরা ক্যাম্পের কিশোর-যুবকদের দিয়ে মাদক বিক্রি করায়। এতে কেউ বাধা দিলে তাকেও মারধর করে। কিছুদিন আগেও মাদক ব্যবসায় বাধা দেয়ায় বাদল নামে এক যুবককে কুপিয়ে জখম করেছিল মফিজ ও তার দুই ছেলে।

 

গত ৪ জুলাই পুলিশ অভিযান চালিয়ে ১০০ গ্রাম হেরোইনসহ মফিজকে গ্রেপ্তার করেছে। এছাড়া মাদকের বিরুদ্ধে পুলিশের নিয়মিত অভিযান চলছে। তাকে গ্রেপ্তারে এলাকার লোকজন খুশি। একই ক্যাম্পের বাসিন্দা ইমরান বলেন, ৬ মাস আগে ১০০ গ্রাম হেরোইনসহ মফিজের দুই ছেলে আলী ও হাসানকে এ ক্যাম্প থেকে থানা-পুলিশ গ্রেপ্তার করেছিল। কিন্তু জামিনে বেরিয়ে আরো বড় পরিসরে মাদক ব্যবসা শুরু করে তারা।

 

শুধু মফিজ নয়, পল্লবীতে যারা পারিবারিকভাবে মাদক ব্যবসা করে, তাদের মধ্যে মোস্তাক ওরফে হেরোইন মোস্তাক অন্যতম। সে ও তার পরিবাররের সব সদস্যই মাদক ব্যবসায়ী। পল্লবীসহ বিভিন্ন থানায় মোস্তাক ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে।

 

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পল্লবীর ১১ নম্বরের মিল্লাত ক্যাম্প, ডুইপ প্লট, কনসার্ন ক্যাম্প এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে হেরোইন বিক্রি করে আসছে মোস্তাক ও তার পরিবারের সদস্যরা। শুধু মোস্তাক নয়, তার বোন আনোয়ারি ও শাকিলা, ছেলে সায়মুন, ভাগ্নি সায়মা, শাম্মী, জামিলা ও ভগ্নিপতি কামরানও এলাকাভেদে হেরোইনের স্পট চালায়। এদের মধ্যে কেউ গ্রেপ্তার হলে তার স্পটের হাল ধরে পরিবারের অন্য সদস্যরা।

 

এভাবেই দিনের পর দিন পারিবারিকভাবে হেরোইনের স্পট চালিয়ে যাচ্ছে মোস্তক ও তার স্বজনরা। গত ১৮ এপ্রিল পল্লবীর ১১ নম্বরের সি-ব্লক এলাকায় অভিযান চালিয়ে মোস্তাকের ছেলে সায়মুনকে গ্রেপ্তার করে পল্লবী থানা পুলিশ। এ সময় তার সঙ্গে থাকা ৩৭ গ্রাম লুজ হেরোইনও জব্দ করা হয়। অভিযানের নেতৃত্ব দেন পল্লবী থানার এসআই জহির উদ্দিন।

 

তিনি জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে প্রকাশ্যে হেরোইন বিক্রিয়কালে অভিযান চালিয়ে হেরোইন মোস্তাকের ছেলে সায়মুনকে মাদকসহ গ্রেপ্তার করা হয়। তার বিরুদ্ধে পল্লবী থানায় মামলা করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। এসআই জহির উদ্দিন বলেন, মোস্তাক, তার ছেলে সায়মুন, বোন আনয়ারিসহ তার পরিবারের সব সদস্য মাদক ব্যবসায় জড়িত। তারা মূলত হেরোইন স্পট চালায়। পারিবারিকভাবেই তারা মাদক ব্যবসায়ী।

 

এছাড়া চলতি বছরের ২৬ জানুয়ারি হেরোইন মোস্তাকের ভাগ্নি মাদকসম্রাজ্ঞী সায়মাকে ৮০ গ্রাম হেরোইনসহ গ্রেপ্তার করে পল্লবী থানা পুলিশ। এর আগে ২০২২ সালের ২৩ জুলাই এভিনিউ ৫ থেকে ১২৭ গ্রাম হেরোইনসহ থানা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয় সায়মা।

 

এছাড়া পল্লবীর ১০ নম্বর সেকশনের মাদরাসা ক্যাম্পে ও পরিত্যক্ত ডিএনসিসি মার্কেটে মাদক ব্যবসায়ী আজহারের মাদক বিক্রি হয়। ১২ নম্বর সেকশনের কুর্মিটোলা ক্যাম্প ও সাগুফতা রোডে মাদকের স্পট চালান শাহজাদী ও বিহারি নেতা হাবিবুল্লাহ পারভেজের ভাই সলিমুল্লাহ বাবু। মুসলিম ক্যাম্পে মাদক ব্যবসা পরিচালনা করে সনু ওরফে চেতুয়া সনু ও তার ভাই মীম।

 

সম্প্রতি এসব মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তারে বিশেষ অভিযান শুরু করেছে পল্লবী থানা পুলিশ। চলমান এ অভিযানে মাদক কারবারি মফিজসহ বেশকিছু মাদক ব্যবসায়ী গ্রেপ্তার হয়েছে। অভিযানের পাশাপাশি মাদকের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে প্রতিটি এলাকায় উঠান বৈঠকের আয়োজন করা হচ্ছে।

 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পল্লবী থানার ওসি মুহা. মাহফুজুর রহমান মিয়া ভোরের আকাশকে বলেন, মফিজসহ চার মাদক কারবারিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারদের কাছ থেকে ১৭৫ গ্রাম হেরোইন জব্দ করা হয়েছে।

 

এছাড়া মিল্লাত ক্যাম্প, কনসার্ন ক্যাম্পসহ পল্লবীর বিভিন্ন এলাকার মাদক কারবারিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলমান রয়েছে। এরই মধ্যে বেশকিছু মাদক ব্যবসায়ী গ্রেপ্তার হয়েছে। কোনো মাদক ব্যবসায়ীকে ছাড় দেয়া হচ্ছে না। অভিযানের পাশাপাশি আমরা প্রতিটি এলাকায় মাদকবিরোধী উঠান বৈঠকের মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা করছি।

 

ভোরের আকাশ/নি