রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দুই গ্রুপের গোলাগুলিতে ৫ রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে। শুক্রবার ভোরে উখিয়ার ক্যাম্প-৮ ওয়েস্টে এ ঘটনা ঘটে। গণমাধ্যমের খবরে জানা গেছে, ক্যাম্প নিয়ন্ত্রণে কিছুদিন ধরে ওই দুই গ্রুপে মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছিল। এরই সূত্র ধরে খুনোখুনির ঘটনা ঘটে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অপরাধপ্রবণতা দিন দিন বাড়ছেই। আমরা শুরু থেকেই এ বিষয়ে শঙ্কার কথা জানিয়ে আসছি। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন না হলে স্বাভাবিকভাবেই সন্ত্রাসবাদের উত্থান হবে।
খুন, ধর্ষণ, মাদক পাচার, শিশু পাচার, ডাকাতি, অপহরণ, পতিতাবৃত্তিসহ সব ভয়ংকর অপরাধে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে রোহিঙ্গারা। উত্তরণের একমাত্র পথ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া দ্রুত শুরু করতে হবে। কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সক্রিয় একাধিক সশস্ত্র গ্রুপ। ওরা ভয়ংকর, তুচ্ছ ঘটনায় এক পক্ষ অন্য পক্ষকে খুন করতে দ্বিধা করে না। কোনো কিছুতেই থামানো যাচ্ছে না হত্যাকান্ড।
তাদের মধ্যে মাদক, চাঁদাবাজি, অপহরণ ও চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ নিয়ে প্রায়ই ঘটছে খুনোখুনি। একসময়ের শান্তিপূর্ণ এলাকাগুলোতে এখন অপহরণ আতঙ্কে দিন কাটছে স্থানীয় সাধারণ মানুষের। স্থানীয় বাসিন্দার পাশাপাশি সাধারণ রোহিঙ্গাও অপহরণের শিকার হচ্ছে প্রতিনিয়ত। উখিয়া-টেকনাফের পাহাড়-জঙ্গলে আস্তানা গড়ে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করছে সন্ত্রাসীরা। মুক্তিপণ দিলেও পুড়িয়ে ফেলে লাশ মাটির গর্তে পুঁতে রাখা হচ্ছে।
পরে সেসব কঙ্কাল উদ্ধার করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পরিস্থিতি দিন দিন ভয়াবহতার দিকে যাচ্ছে। পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, গত সাড়ে ৫ বছরে ক্যাম্পে বসবাসকারী রোহিঙ্গা নেতা, স্বেচ্ছাসেবক ও সাধারণ রোহিঙ্গাসহ ১৭৩টি হত্যাকান্ড ঘটেছে। গত জুন মাসে ক্যাম্প থেকে ৫ রোহিঙ্গাকে অপহরণ, এক মাদ্রাসা ছাত্রসহ ৫ জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। হাত-পায়ের রগ কেটে ১ জনকে হত্যা এবং এক কিশোরীকে ধর্ষণ করা হয়।
সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোকে প্রতিহত করতে গিয়ে প্রায়ই ঘটছে বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা।
থানার তথ্যমতে, ২০২২ সালের ১ নভেম্বর থেকে এ বছরের ৩০ মে পর্যন্ত ৭ মাসে টেকনাফ থানায় অপহরণের মামলা হয়েছে ৮টি। এসব মামলায় আসামির সংখ্যা অন্তত ৫০। এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে ২০ জনকে। একই সময়ে অপহৃত অনেককে উদ্ধার করেছে পুলিশ। জাতিগত নির্মূল অভিযানের ফলে ২০১৯ সালের আগস্ট থেকে মিয়ানমারের ৭ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এর আগেও এখানে অবস্থান করছিল ৩ লাখের বেশি রোহিঙ্গা।
অবৈধ অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের কারণে আমাদের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোয় আর্থ-সামাজিক ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি ঘটছে। অনেক রোহিঙ্গা বাংলাদেশি পাসপোর্ট ব্যবহার করে বিদেশ গিয়ে নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছে এবং এর দায়ভার বর্তাচ্ছে বাংলাদেশের ওপর। এত বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গাকে নিয়মশৃঙ্খলার মধ্যে রাখা কঠিন কাজ বটে।
শুধু ক্যাম্পের অভ্যন্তরে নয়, ক্যাম্পের বাইরেও রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা স্থানীয় গ্রামবাসীর সঙ্গেও বিভিন্ন সময় সংঘর্ষে লেগে যায়। স্থানীয় অনেকে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীর হাতে অপহরণ ও হত্যার শিকার হয়েছে। নানাভাবে তারা অপরাধ প্রবণতায় জড়িত। এরা আক্রোশী মনোভাবের। সব বিবেচনা করেই প্রশাসনকে অত্যন্ত কঠোর হতে হবে। অন্যথায় আরো অপরাধ বাড়তে পারে। যা আমাদের নিরাপত্তার জন্য হুমকি বটে।
ভোরের আকাশ/নি