logo
আপডেট : ১১ জুলাই, ২০২৩ ১০:২০
পরিবেশবান্ধব শহর গড়তে মৌলভীবাজারে পলিথিনের হাট
পংকজ কুমার নাগ, মৌলভীবাজার

পরিবেশবান্ধব শহর গড়তে মৌলভীবাজারে পলিথিনের হাট

দেশে প্রথমবারের মতো মৌলভীবাজার পৌরসভার উদ্যোগে শুরু হলো পুরোনো পলিথিন কেনার হাট। মূলত পর্যটনখ্যাত জেলা মৌলভীবাজার পৌর এলাকাকে দূষণমুক্ত ও পরিবেশবান্ধব শহর হিসেবে গড়ে তুলতে এ উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন মৌলভীবাজার পৌরসভার মেয়র মো. ফজলুর রহমান।

 

সোমবার এ ব্যতিক্রমধর্মী হাটের উদ্বোধন করেন পৌর মেয়র মো. ফজলুর রহমান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন মৌলভীবাজার পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ নকিবুর রহমান, মৌলভীবাজার প্রেসক্লাব সাধারণ সম্পাদক পান্না দত্ত, ইলেকট্রনিক মিডিয়া জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন (ইমজা) সভাপতি তমাল ফেরদৌস, প্রেসক্লাব সাবেক সাধারণ সম্পাদক এসএম উমেদ আলী, কাউন্সিলর নাহিদ হোসেন, কাউন্সিলর সালেহ আহমেদ, কাউন্সিলর জালাল আহমদ, কাউন্সিলর ফয়ছল আহমদ, মৌলভীবাজার পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং বিভিন্ন ইলেকট্রনিক মিডিয়া, অনলাইন মিডিয়া ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকরা।

 

মেয়র জানান, হাটে প্রতি কেজি পলিথিন ৫০ টাকা দরে ক্রয় করবে মৌলভীবাজার পৌরসভা। এছাড়া যারা পলিথিন বিক্রয়ের জন্য নিয়ে আসবেন সেসব বিক্রেতাকে বিনামূল্যে একটি ৫০ কেজি বস্তা দেয়া হবে। মৌলভীবাজার পৌরসভার মেয়র চত্বরে সপ্তাহের প্রতি রোববার বিকেল সাড়ে ৩টায় বসবে এ হাট। প্রথম দিন ক্রয় করা হয়েছে ৪৯৭ কেজি পলিথিন।

 

পৌর মেয়র ফজলুর রহমান বলেন, মৌলভীবাজার পৌরসভার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আধুনিকায়ন করতে পচনশীল ও অপচনশীল বর্জ্য বাসাবাড়িতেই পৃথকীকরণ করা হবে। অর্থাৎ পচনশীল বর্জ্য থাকবে একটা বিনে। অপচনশীল বর্জ্য থাকবে অপর একটি বিনে। পৌরসভা থেকে ইতোমধ্যে ময়লা রাখার বিন দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি অপচনশীল বর্জ্য রাখার জন্য আরেকটি বিন দেয়ার কার্যক্রম চলছে।

 

মেয়র আরো জানান, ‘পৌর নাগরিকরা যেন পচনশীল ও অপচনশীল বর্জ্য বাসাবাড়িতেই পৃথকীকরণ করেন সেজন্য আমরা সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন শুরু করেছি। লিফলেট বিতরণসহ পৌর নাগরিকদের নিয়ে বেশ কয়েকটি উঠান বৈঠক করা হয়েছে।

 

পৌর কর্তৃপক্ষ জানায়, শহরকে দূষণমুক্ত করে পরিবেশবান্ধব পরিচ্ছন্ন শহর গড়তে এবং পানি নিষ্কাশনে ড্রেনেজ ব্যবস্থা যেন বাধাগ্রস্ত না হয়, সেজন্য পৌর নাগরিকরা উন্মুক্ত স্থানে ময়লা-আবর্জনা, প্লাস্টিক-পিলিথিন ফেলতে পারবে না। পৌরসভা প্লাস্টিক ও পলিথিন কিনে নিয়ে সেটা ডাম্পিং স্টেশনে পুড়িয়ে ফেলা হবে।

 

এছাড়া পচনশীল বর্জ্য দিয়ে জৈবসার এবং বায়োগ্যাস তৈরি করা হবে। এজন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ২৩ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে। তবে ভবিষ্যতে পিলিথিন পুনঃপ্রক্রিয়ার মাধ্যমে জালানি তেল তৈরির পরিকল্পনাও রয়েছে মৌলভীবাজার পৌরসভার।

 

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) জাতীয় পরিষদ সদস্য আসম সালেহ সোহেল বলেন, ‘মৌলভীবাজার পৌরসভার পক্ষ থেকে পরিত্যক্ত প্লাস্টিক পলিথিন কিনে নেয়ার যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, তা খুবই সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। আমরা পরিবেশ কর্মীরা পৌর মেয়রের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। পলিথিন ও প্লাস্টিক পচে না। ফলে মাটির উর্বরতা কমায়, ড্রেনেজ ব্যবস্থায় বাধাগ্রস্ত করে।

 

ফলে শহরের পানি নিষ্কাশনসহ পরিবেশের জন্য হুমকিস্বরূপ। আমরা চাই দেশের প্রতিটা পৌরসভায় এমন উদ্যোগ নেয়া হোক।’

 

উল্লেখ্য, শহরকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে এ উদ্যোগ নিয়েছে মৌলভীবাজার পৌরসভা। পলিথিন ও প্লাস্টিক সহজে পচে না এবং তা মাটির গুণাগুণ নষ্ট করে। আগুনে পোড়ালে কার্বন তৈরি হয়, যা বাতাসে মিশে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করে।

 

যত্রতত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা পরিত্যক্ত পলিথিন অপরিচ্ছন্ন করে রাস্তাঘাটসহ বাসাবাড়ির আঙিনাকে। আর এ পরিত্যক্ত পলিথিন ও প্লাস্টিক কিনে নেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে মৌলভীবাজার পৌরসভা।

 

ভোরের আকাশ/নি