রুদ্র মিজান: মহাসড়কে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ও নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে হাইওয়ে পুলিশ। জনবল, পরিবহন ও অত্যাধুনিক যন্ত্রের অভাবে এই কার্যক্রম পরিচালনা করতে বেগ পেতে হচ্ছে তাদের। বিশেষ করে বছরে দুটি ঈদে অত্যন্ত চাপ সামলাতে হয় তাদের। দুর্ঘটনা প্রতিরোধ, ট্রাফিক জ্যাম নিয়ন্ত্রণ, সড়ক পরিবহন আইন প্রয়োগ, ট্রাফিক আইন ভঙ্গকারী যানবাহন ও চালকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করে হাইওয়ে পুলিশ। এছাড়াও নিয়মিত টহল ডিউটির মাধ্যমে নিরাপদ হাইওয়ে প্রতিষ্ঠায় প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে পুলিশের এই বিশেষায়িত ইউনিট।
তথ্যপ্রযুক্তির এই সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আরএফআইডি মেশিনের মাধ্যমে অনলাইনে যানবাহনের বৈধ কাগজপত্র যাচাই, অ্যালকোহল ডিটেক্টর দিয়ে চালকের মাদকাসক্তি পরীক্ষা, স্পিডগানের মাধ্যমে গতি নিয়ন্ত্রণ করছে হাইওয়ে পুলিশ। এমনকি দুর্ঘটনা ব্যবস্থাপনায় স্বল্প সময়ের মধ্যে আহত যাত্রীকে ফার্স্ট এইড সেবা প্রদান, হাসপাতালে পৌঁছাতে সহায়তা ও ক্ষতিগ্রস্ত যানবাহন উদ্ধার কার্যক্রমও করছে হাইওয়ে পুলিশের সদস্যরা।
যাত্রীদের মধ্যে ৭৩ ভাগই যাতায়াত করেন সড়ক-মহাসড়কে। অন্যদিকে পণ্যের ৮৩ ভাগই স্থানান্তর হয় সড়কপথে। এর নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে হাইওয়ে পুলিশ। যাত্রীদের সেবার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে হাইওয়ে পুলিশ চালু করেছে ‘হ্যালো এইচপি অ্যাপ’। এই অ্যাপের মাধ্যমে সড়কে কোনো বিপদে পড়লে তাৎক্ষণিকভাবে তা হাইওয়ে পুলিশকে অবগত করা যাবে।
হাইওয়েতে যেকোনো বিষয়ে অভিযোগ পাঠানো, সাহায্য পাওয়া, হাইওয়ে থানার নম্বরসহ বেশ কয়েকটি সেবা পাওয়া যাবে হ্যালো এইচপির মাধ্যমে। কোনো রাস্তা বন্ধ, বিকল্প সড়ক রয়েছে কিনা, বিকল্প সড়ক কোনদিকে, কোথায় যানজট মুহূর্তেই এসব জানা যাবে এই অ্যাপসে। এমনকি হাইওয়েতে ঘটে যাওয়া যেকোনো বিষয়ে হাইওয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ পাঠানো যাবে এর মাধ্যমে।
এছাড়া মহাসড়কে যানবাহনের ভাড়ার তালিকা, সেতুর টোলের হারসহ গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাদি রয়েছে এতে। জরুরি সাহায্য বাটন চাপলে তা পৌঁছে যাবে নিকটবর্তী হাইওয়ে পুলিশ পেট্রোল টিমের কাছে। এর মাধ্যমে লোকেশন অনুসারে দ্রুত তারা ছুটে যেতে পারছে ঘটনাস্থলে। এই অ্যাপসে রয়েছে হাইওয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ রিজিয়নভিত্তিক সব সিনিয়র অফিসার ও হাইওয়ে থানার মোবাইল ফোন নম্বর। রয়েছে মহাসড়ক সংলগ্ন ও নিকটবর্তী সকল হাসপাতাল ও ফায়ার সার্ভিস স্টেশনসমূহের মোবাইল ফোন নম্বরও। এই অ্যাপটি পাওয়া যাচ্ছে গুগল প্লে স্টোরে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সড়ক-মহাসড়কের উন্নয়ন হয়েছে। সড়ক প্রশস্ত হয়েছে। লেন বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে করে মহাসড়কে বিভিন্ন ধরনের যানবাহনের চাপও বেড়েছে। অনেক সময় এই চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে হাইওয়ে পুলিশকে। ৩৬টি থানা ও ৩৭টি ফাঁড়ি মিলিয়ে ৭৩টি থানা ও ফাঁড়ি রয়েছে হাইওয়ে পুলিশের। প্রতিটি ফাঁড়িতে রয়েছে একটি করে গাড়ি। রয়েছে ২ হাজার ৮৬১ জন পুলিশ সদস্য।
সড়ক-মহাসড়ক মিলিয়ে এই স্বল্প সংখ্যক পুলিশের আওতায় রয়েছে ৮ হাজার ৮০০ কিলোমিটার সড়ক। তবে ৩ হাজার কিলোমিটার সড়কের নিরাপত্তা দিচ্ছে হাইওয়ে পুলিশ। এছাড়া নতুন ইউনিট, নতুন থানা ও ফাঁড়ি স্থাপন ও প্রয়োজনীয় জনবলের প্রস্তাবনা রয়েছে সরকারের কাছে। দুটি ঈদে বেশ বেগ পোহাতে হয় হাইওয়ে পুলিশকে। ওই সময়ে মহাসড়র সংশ্লিষ্ট জেলা পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করে দায়িত্ব পালন করে হাইওয়ে পুলিশ।
২০০৫ সালের ১১ জুন প্রতিষ্ঠিত হয় হাইওয়ে পুলিশ। মোটর যানবাহন অধ্যাদেশের কয়েকটি বিভাগের অধীনে মহাসড়ক নিরাপদ রাখতে এবং যানজটমুক্ত ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে সরকার হাইওয়ে পুলিশ গঠনের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেছিল তৎকালীন সরকার।
এ বিষয়ে হাইওয়ে পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মো. শাহাবুদ্দিন খান বলেন, প্রয়োজনের তুলনায় কম জনবল ও যানবাহন নিয়ে দায়িত্ব পালন করছে হাইওয়ে পুলিশ। তবে হাইওয়ে পুলিশেও তথ্যপ্রযুক্তির ছোঁয়া লেগেছে।
আমাদের ‘হ্যালো এইচপি অ্যাপ’ রয়েছে। এর মাধ্যমে সহজেই ভুক্তভোগীরা হাইওয়ে পুলিশের সেবা পেতে পারেন। মহাসড়কে যানবাহন ও যাত্রীদের নিরাপত্তায় হাইওয়ে পুলিশকে আরো শক্তিশালী ও আধুনিকায়ন করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
ভোরের আকাশ/নি