logo
আপডেট : ১১ জুলাই, ২০২৩ ১৬:২২
বলছেন বিশেষজ্ঞরা
গ্রীষ্মের তাপপ্রবাহে গত বছর ইউরোপে ৬২ হাজার মৃত্যু
নিজস্ব প্রতিবেদক

গ্রীষ্মের তাপপ্রবাহে গত বছর ইউরোপে ৬২ হাজার মৃত্যু

স্পেনের মাদ্রিদে তীব্র তাপপ্রবাহের মধ্যে মাথায় পানি ঢালছেন এক ব্যক্তি। ছবিটি ২০২২ সালের ১২ জুলাই তোলা বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন দেশে তীব্র তাপপ্রবাহ চলছে। আর ইউরোপের দেশগুলোতে এই তাপপ্রবাহের প্রভাব যেন একটু বেশিই। এই পরিস্থিতিতে সামনে এসেছে নতুন তথ্য।

 

গত বছরের গ্রীষ্মে ইউরোপের উত্তপ্ত তাপপ্রবাহে প্রায় ৬২ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে বলে নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে। অন্যদিকে তাপ সংক্রান্ত সংকট মোকাবিলার প্রস্তুতির প্রচেষ্টা দেশগুলোর মধ্যে মারাত্মকভাবে কমে গেছে বলেও ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।

 

মঙ্গলবার (১১ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

 

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউরোপীয় স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের গবেষকদের গবেষণায় অনুমান করা হয়েছে, গত বছরের মে মাসের শেষ থেকে সেপ্টেম্বর মাসের শুরু পর্যন্ত ৩৫টি ইউরোপীয় দেশে তাপজনিত কারণে ৬১ হাজার ৬০০ জনেরও বেশি মানুষ মারা গেছেন। গত বছরের এই গ্রীষ্ম ছিল ইউরোপের ইতিহাসে সবচেয়ে উষ্ণ গ্রীষ্মকাল।

 

রয়টার্স বলছে, নেচার মেডিসিন জার্নালে সোমবার নতুন এই গবেষণার ফলাফল প্রকাশিত হয়। এতে দেখা গেছে, জনসংখ্যার আকার অনুসারে গ্রিস, ইতালি, পর্তুগাল এবং স্পেনের মতো ভূমধ্যসাগরীয় দেশগুলোতে মৃত্যুর হার ছিল সর্বোচ্চ।

 

বার্সেলোনা ইনস্টিটিউট ফর গ্লোবাল হেলথের অধ্যাপক এবং এই গবেষণার কো-অথর জোয়ান ব্যালেস্টার বলেন, ‘মরুকরণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলো, এই অঞ্চলের শুষ্ক অবস্থার কারণে এখানকার দেশগুলোতে গ্রীষ্মকালে তাপপ্রবাহ বৃদ্ধি পায়।’

 

গত বছরের গ্রীষ্মে ইউরোপীয় দেশগুলোকে তীব্র দাবানল এবং খরায় বিপর্যস্ত হতে দেখা গিয়েছিল। এমনকি গত বছরের জুলাই মাসে পর্তুগালে ৪৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।

 

অন্যদিকে সংখ্যার বিচারে তাপের কারণে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানির ঘটনা ঘটে ইতালি, স্পেন এবং জার্মানিতে। ইতালিতে গত বছরের গ্রীষ্মে মারা গেছেন ১৮ হাজার ১০ জন। স্পেন ও জার্মানিতে এই সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ১১ হাজার ৩২৪ জন এবং ৮ হাজার ১৭৩ জন।

 

রয়টার্স বলছে, মানব সৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় তাপপ্রবাহ আরও ঘন ঘন দেখা দিচ্ছে এবং দিনে দিনে তা আরও তীব্র হয়ে উঠছে। মারাত্মক গরম মানুষের শরীরে নানা ধরনের প্রভাব ফেলে। এটি হিট স্ট্রোকে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটাতে পারে।

 

এছাড়া প্রচন্ড তাপ কার্ডিওভাসকুলার এবং শ্বাসযন্ত্রের রোগকে বাড়িয়ে দিতে পারে। এতে সবচেয়ে ঝুঁকিতে পড়েন বয়স্ক ব্যক্তিরা।

 

এই পরিস্থিতিতে ফ্রান্সসহ বহু দেশ ইউরোপে মারাত্মক তাপপ্রবাহ দেখা দিলে তা মোকাবিলায় ২০০৩ সালে জাতীয় পরিকল্পনা প্রবর্তন করেছিল। এ সংক্রান্ত পরিকল্পনার মধ্যে ছিল প্রাথমিক সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ এবং শহরের ভেতরে আরও শীতল সবুজ স্থান তৈরি করা।

 

কিন্তু গবেষকরা বলেছেন, তীব্র গরমে গত বছর বিপুল সংখ্যক মানুষের মৃত্যুর এই সংখ্যা এটাই ইঙ্গিত দেয় যে, এই ধরনের কৌশল কাজ করছে না এবং এই কারণে জরুরিভাবে বাস্তবিক পদক্ষেপ আরও জোরদার করা উচিত।

 

অস্ট্রিয়ার গ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের জলবায়ু বিজ্ঞানী ক্লোই ব্রিমিকম্বে বলেছেন, ‘দেশগুলোকে তাদের পরিকল্পনা পর্যালোচনা করতে হবে এবং কী কী পদক্ষেপ কাজ করছে না তা দেখতে হবে।’

 

জার্মানির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গত মাসে তাপ সংক্রান্ত কর্ম পরিকল্পনা তৈরিতে পদক্ষেপ নিয়েছে। এই পদক্ষেপের মধ্যে গৃহহীন লোকদের সুরক্ষা আরও বাড়ানোর মাধ্যমে বা পাবলিক স্পেসে আরও পানীয় জল সরবরাহ করার মতো ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে গাইড করার বিষয়টিও রয়েছে।

 

জার্মানির স্বাস্থ্যমন্ত্রী কার্ল লাউটারবাখ বলেছেন, ‘প্রতি বছরই মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে... আমাদের পরিকল্পনা থাকলে তাদের বাঁচানো তুলনামূলকভাবে সহজ।’

 

ভোরের আকাশ/নি