চট্টগ্রাম মহানগরীত প্রতিদিন বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা। দীর্ঘ হচ্ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালের ভর্তির সংখ্যা। গত রোববার ছিল চট্টগ্রামে সর্বোচ্চ ডেঙ্গু আক্রান্ত। চলতি বছরে সর্বোচ্চ রোগী ভর্তি হয় রোববারে।
চলতি মাসের প্রথম ১০ দিনে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ৪৭৬ জন। বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা। এদিকে দিন দিন ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকায় হাসপাতালগুলোতে চাপ বেড়েছে রোগী ভর্তির। যার কারণে সরকারি তো বটেই, ঠাঁই নেই বেসরকারি হাসপাতালেও। প্রতিটি হাসপাতালই ডেঙ্গু রোগীতে ঠাসা। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (চমেক) স্থান সংকুলান না হওয়ায় মেঝেতেও সেবা দিতে হচ্ছে রোগীদের।
জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রাম জেলায় জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন মোট ৯৪০ জন। চট্টগ্রামে এ পর্যন্ত মোট ১৩ জন ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে জানুয়ারিতে মারা যান তিনজন। বাকি ১০ জনের মধ্যে জুনে ছয়জন এবং জুলাইয়ের প্রথম ১০ দিনে মৃত্যু হয়েছে চারজনের। বর্তমানে সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল মিলিয়ে ১৫৮ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছেন।
গত ২৪ ঘণ্টায় ৮১ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এদের মধ্যে বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে ৩৬ জন, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ২৪ জন, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ৬ জন এবং বিআইটিআইডিতে ১৫ জন রোগী চিকিৎসাধীন আছেন।
চমেক হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের ১৩, ১৪, ১৫ ও ১৬ এবং শিশু ওয়ার্ডে পৃথকভাবে ডেঙ্গু রোগীদের রাখা হয়েছে। তবে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকায় হাসপাতালের মেঝেতেও সেবা দিতে হচ্ছে রোগীদের। তাদের মধ্যে অনেকেই মশারি ছাড়াই থাকছেন। ফলে আক্রান্তদের থেকে মশার মাধ্যমে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা করছেন অন্য রোগী ও স্বজনরা।
এদিকে ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে উদ্বেগের কথা জানিয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী এবং রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালককে (সংক্রামক রোগনিয়ন্ত্রণ) প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী।
তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এ পরিস্থিতিতে আমরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোকে ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসার জন্য প্রস্তুত করে তুলেছি। বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসায় গুরুত্ব দিতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়ে ইতোমধ্যে ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছে।
এডিস মশা নিধন কার্যক্রম জোরালোভাবে কার্যকর করা না গেলে আগামীতে ডেঙ্গুর প্রকোপ আশঙ্কাজনক হারে বাড়তে পারে। তাই মশক নিধন কার্যক্রমকে আরো গতিশীল করতে চট্টগ্রামের মেয়র মহোদয়কে চিঠির মাধ্যমে অনুরোধ জানিয়েছি।’
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নগরে মশক নিধনে ১০০ দিনের ক্রাশ প্রোগ্রাম নিলেও তা পর্যাপ্ত নয় বলে মনে করছেন নগরবাসী। তবে চসিক মেয়র বলছেন, শুধু ওষুধ ছিটিয়ে মশা নিধন সম্ভব নয়, এ জন্য প্রয়োজন জনসচেতনতা।
চসিকের পক্ষ থেকে নগরের সদরঘাটের চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন জেনারেল হাসপাতালে বিনামূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষা করা হচ্ছে। সোমবার থেকে এ কার্যক্রম ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব কমা না পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে ৪টা পর্যন্ত চলমান থাকবে।
চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক (উপ-পরিচালক) ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, ‘চট্টগ্রামে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী। তবে আক্রান্ত বাড়ার সাথে সাথে চমেক হাসপাতালের করোনার ইউনিটকে ডেঙ্গু কর্নার করা হবে।’
চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান বলেন, ‘চসিক থেকে নিয়মিত ওষুধ ছিটানো হচ্ছে। তাছাড়া হাসপাতাল থেকে নিজস্ব মেশিন দিয়ে ১১ জুলাই থেকে ওষুধ ছিটানো হচ্ছে। হাসপাতাল পরিষ্কারে অভিযানে নামা হবে।’
ডেঙ্গু মোকাবিলায় কতটা প্রস্তুত চট্টগ্রাম ডেঙ্গু নিয়ে চিন্তিত স্বাস্থ্য বিভাগ। এ নিয়ে নানা প্রস্তুতির কথাও জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, ‘কিছুদিন বেশ গরম পড়লেও ঘূর্ণিঝড়ের পর থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি হয়েছে চট্টগ্রামে। বৃষ্টির কারণে বিভিন্ন স্থানে পানি জমে মশার লার্ভা সৃষ্টি হয়েছে, যেখানে এডিস মশার প্রজনন ঘটছে। মূলত এ কারণেই ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়তে শুরু করেছে।’
ডেঙ্গু প্রতিরোধের অন্যতম উপায় হচ্ছে মশার লার্ভা ধ্বংস করা, এডিস মশার বংশ বিস্তার রোধ করা। মোট কথা মশা নিধন কার্যক্রম ত্বরান্বিত করা। আর মশা নিধনের এ কাজ স্বাস্থ্য বিভাগের নয়, সিটি করপোরেশনের। স্বাস্থ্য বিভাগ মানুষের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টিতে ভ‚মিকা রাখতে পারে।
অন্যথায় ডেঙ্গু পরিস্থিতি ২০১৯ সালের মতো আগ্রাসী রূপে দেখা দিতে পারে। তবে ডেঙ্গু প্রতিরোধে মশক নিধন কার্যক্রমে জোর দিতে বলেছেন চিকিৎসকরা।
তারা বলছেন, সিটি করপোরেশনের মশক নিধন কার্যক্রম আরো গতিশীল করতে হবে। নয়তো ঢাকা ও কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মতো চট্টগ্রামেও ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, মশক নিধনে একশ দিনের ক্রাশ প্রোগ্রাম হাতে নিয়েছে চসিক। ২২ জুন চমেক হাসপাতাল এলাকায় এই প্রোগ্রামের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়।
ডেঙ্গুর চিকিৎসায় সার্বিক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান। তিনি বলেন, ‘আমাদের চিকিৎসক-নার্সরা আগে থেকেই ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা ও সেবা দিয়ে আসছেন। তাই রোগী বাড়লেও পরিস্থিতি মোকাবিলায় শতভাগ প্রস্তুতি আমাদের রয়েছে।’
ভোরের আকাশ/নি