logo
আপডেট : ১১ জুলাই, ২০২৩ ১৭:৪১
মজুতদারদের কারসাজিতে বাড়ছে আলুর দাম
নিজস্ব প্রতিবেদক

মজুতদারদের কারসাজিতে বাড়ছে আলুর দাম

দীর্ঘদিন থেকে বাড়ছে সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম। প্রায় সব ধরনের জিনিষের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। তেল, চিনি, কাঁচা মরিচ, পেঁয়াজসহ আরো কিছু পণ্যের দাম বর্তমানে আলোচনায় আছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আলুর দাম। কয়েকদিনের ব্যবধানে অস্বাভাবিকহারে বাড়ছে আলুর দাম। মূলত মজুতদারদের কারসাজিতে আলুর দাম বাড়ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

 

গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে হঠাৎ করে আলুর দাম ৩৫ টাকা থেকে বেড়ে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে মূল্যবৃদ্ধির কারণ অনুসন্ধান করে অধিদপ্তর কৃষি মন্ত্রণালয়কে এ প্রতিবেদন দিয়েছে।

 

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ বছর প্রতি কেজি আলুর উৎপাদন খরচ হয়েছে ১০ টাকা ৫০ পয়সা। চাষিরা এ আলু বাজারে সর্বোচ্চ ১৫ টাকার মধ্যে বিক্রি করেছেন। যেটা সব খরচ মিলে খুচরা বাজারে কোনোভাবে ৩২ টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়।

 

বাংলাদেশে আলুর সরবরাহ ও মূল্যবৃদ্ধি প্রসঙ্গে ১০ জুলায় কৃষি মন্ত্রণালয়কে একটি প্রতিবেদন দিয়েছে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। কৃত্রিমভাবে আলুর বাজার অস্থির করার চেষ্টার কারণে অসাধু ব্যবসায়ীদের সরকারি বিভিন্ন তদারকি সংস্থা ও পুলিশ প্রশাসনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে বলেও প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়েছে।

 

বলা হচ্ছে, প্রতি বছরের মতো এবারো ফেব্রুয়ারি মাস থেকে দেশের আলু উঠতে শুরু করে। আলুর একটা অংশ কৃষক পর্যায় থেকে সরাসরি বাজারে আসে, কৃষকের কাছে কিছু মজুত থাকে এবং বাকিটা থাকে হিমাগারে। দেশের ৩৬৫টি হিমাগারে এ বছর ২৪ লাখ ৯২ হাজার টন আলু সংরক্ষণ করা হয়েছে। কৃষকের হাতে আলু শেষ হওয়ার পর জুন থেকে হিমাগারের আলু বাজারে সরবরাহ আসতে থাকে। কিন্তু এ সরবরাহ ঠিকভাবে হচ্ছে না। কৃত্রিমভাবে একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী আলুর দাম বাড়াচ্ছে। এর মধ্যে হিমাগার মালিকরা চাহিদার তুলনায় অপর্যাপ্ত পরিমাণ আলু বাজারে ছাড়ছেন।

 

জানা যায়, এ বছর আলু উৎপাদন হয়েছে এক কোটি ১১ লাখ টন, যেখানে স্থানীয় চাহিদা ৯০ লাখ টন। চাহিদার বিপরীতে প্রায় ২২ লাখ টন আলু বেশি উৎপাদন হওয়া সত্তে¡ও গত প্রায় ১৫ দিন ধরে আলু দাম বাড়ছে অস্বাভাবিকভাবে।

 

তথ্য বলছে, গত এক মাসে আলুর দাম ১০ শতাংশ এবং এক বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫৫ শতাংশ বেড়েছে। অথচ পাইকারি পর্যায়ে আলুর দাম কোনোভাবে ২৪ টাকার বেশি হওয়ার কথা নয় বলেই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

 

তবে এ প্রতিবেদন বিষয়ে হিমাগার মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ কোল্ডস্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন বলছে, এবছর আলু উৎপাদনের যে তথ্য সরকার দিচ্ছে তা ঠিক নয়। তার চেয়ে ২০ থেকে ২২ শতাংশ কম উৎপাদন হয়েছে। গত বছর সব কোল্ডস্টোরেজ ভরা থাকলেও এবার ২০ শতাংশ পর্যন্ত আলু কম রয়েছে। কৃষকের হাতে যে আলু জুন পর্যন্ত থাকে সেটা এবার এপ্রিলেই শেষ হয়েছে।

 

প্রতিবেদনে বলা হয়, জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে হিমাগার থেকে খাওয়ার আলু খালাস হয়েছে ২ লাখ ৬৯ হাজার টন এবং এখনো প্রায় ৯০ শতাংশ আলু হিমাগারে সংরক্ষিত। তবে কৃষকের ঘরে এখন কোনো আলু নেই।

 

কোল্ডস্টোরেজে যে আলু আছে তার মধ্যে ৬০ শতাংশ খাওয়ার এবং ৪০ শতাংশ বীজ আলু। এই ৬০ শতাংশের মধ্যে ১০ শতাংশ কোল্ডস্টোরেজ মালিকদের, ১০ শতাংশ কৃষকের এবং বাকি ৪০ শতাংশ স্টকারদের (মজুতদার)। উৎপাদন কমায় মজুতদাররা বাজারকে প্রভাবিত করছে। তারাই বাজারে আলু কম ছাড়ছে, অতিরিক্ত লাভ করছে।

 

কোল্ডস্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু বলেন, প্রথমত ওই প্রতিবেদনে যত আলু উৎপাদনের কথা বলা হচ্ছে এবছর উৎপাদন ততটা হয়নি। আর সরবরাহ কমায় হিমাগার মালিকদের দায় নেই। তিনি বলেন, যারা আলু স্টক করেছেন তারা বাজারে চাহিদার তুলনায় কম আলু দিচ্ছেন। আবার প্রতি কেজি আলু কোল্ডস্টোরেজ থেকে মানভেদে ৩০-৩১ টাকায় বিক্রি করছে।

 

তারাই কেজিপ্রতি ১২ থেকে ১৩ টাকা পর্যন্ত লাভ করছেন। এ কারণেই বাজারে অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের সিনিয়র কৃষি বিপণন কর্মকর্তা মো. মজিবর রহমান বলেন, অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয় থেকে বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের মনিটরিং সংশ্লিষ্ট সব কর্মকর্তাকে দ্রæত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য চিঠি দেয়া হয়েছে। ওই প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে দেয়া হয়েছে।

 

যেভাবে ব্যবস্থা নেয়া হবে: বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য বেশকিছু সুপারিশ করেছে বিপণন অধিদপ্তর।

 

সংস্থাটি বলছে, হিমাগার থেকে চাহিদা অনুযায়ী দ্রুত আলু খালাস করতে হবে। আলুর সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে নিশ্চিত করতে হবে পর্যাপ্ত পরিবহন সুবিধা। ফেরি ও টোলপ্লাজায় আলু বহনকারী পরিবহনকে অগ্রাধিকারভিত্তিতে পারাপার নিশ্চিত করতে হবে। সঙ্গে যেসব অসাধু ব্যবসায়ী কৃত্রিমভাবে আলুর বাজার অস্থির করার চেষ্টা করছেন তাদের বিভিন্ন তদারকি সংস্থা এবং পুলিশ প্রশাসনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

 

ভোরের আকাশ/নি