logo
আপডেট : ১৩ জুলাই, ২০২৩ ১১:২২
সম্পাদকীয়
ডেঙ্গুর হানা : বিপদে পড়ছে শিশুরা

ডেঙ্গুর হানা : বিপদে পড়ছে শিশুরা

ডেঙ্গুর প্রকোপ দিন দিন বাড়ছে। সবচেয়ে বিপদে পড়ছে শিশুরা। অধিকাংশ শিশু জ্বর ছাড়াই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে। এ কারণে কিছু বুঝে ওঠার আগেই তাদের শারীরিক অবস্থা জটিল হয়ে পড়ছে। হাসপাতালে দেরিতে আসায় অধিকাংশ শিশুর ‘শক সিনড্রোম’ দেখা দিচ্ছে। অভিভাবকদের সঙ্গে সঙ্গে উদ্বিগ্ন চিকিৎসকরাও।

 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, এ পর্যন্ত সারা দেশে ৫৭ জেলার মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৬০ শতাংশ রোগী ঢাকায় আর বাকি রোগীগুলো সারা দেশে। সারা দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে বর্তমানে ২ হাজার ৭৫০ জন রোগী ভর্তি আছেন। এর মধ্যে ঢাকাতেই আছেন ১ হাজার ৯৬৮ জন। বাকি ৭৮২ জন ঢাকার বাইরে অন্য বিভাগে। ডেঙ্গুতে সবচেয়ে ঝুঁকিতে আছে শিশুরা।

 

১ জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত ১২ হাজার ৯৫৪ রোগী শনাক্ত হয়েছেন, এর ৩৫ শতাংশই শিশু। শুধু ঢাকা বিভাগে আড়াই হাজার শিশু ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। এ পর্যন্ত মারা গেছেন ৭৩ জন, এর ২৫ শতাংশই শিশু। আর জুলাইয়ের প্রথম ৯ দিনে মৃত্যু হয়েছে ২৬ জনের। গত বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন ৬২ হাজার ৩৮২ জন। এর মধ্যে শিশু ছিল ১৪ হাজার ৯৭২ জন।

 

স্বাস্থ্য বিভাগ ডেঙ্গু রোগীর যে হিসাব দিচ্ছে, বাস্তবে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা তার চেয়ে অনেক বেশি। ২০০০ সালের পর থেকে প্রতি বছর বহু মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে, মানুষ মারাও যাচ্ছে। করোনা মহামারি শুরুর বছর ২০২০ সালে ডেঙ্গুর প্রকোপ কিছুটা কম ছিল। কিন্তু গত বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ২৮ হাজার ৪২৯ জন হাসপাতালে ভর্তি হন। এর মধ্যে ১০৫ জনের মৃত্যু হয়।

 

চিকিৎসকরা বলছেন, ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুর শুরুতে জ্বর আসে, মাথাব্যথা হয়, শরীর, চোখ ও পেটব্যথা করে। অনেকের বমি হয়। প্রায় ৪ দিন টানা জ্বর থাকার পর কমে যায়। তখন থেকে ডেঙ্গুর কমপ্লিকেশন যেমন প্লাজমা লিকেজ, পেটে-বুকে পানি জমা ও রক্তের প্লাটিলেট কমে যায়। হেমোরেজিক বা দাঁত, নাক, ফুসফুস ও পায়খানার সঙ্গে রক্তক্ষরণ হয়। অনেক শিশু চেতনা হারাতে পারে। এভাবে নানা উপসর্গ নিয়ে শক সিনড্রোম দেখা দেয়।

 

তাই শিশুদের বিষয়ে বাড়তি যত্নের কথা বলছেন চিকিৎসক। এ বছর ঢাকার দুটি সিটি করপোরেশনের মোট ৯৮টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৫৫টিই ডেঙ্গুর উচ্চ ঝুঁকিতে আছে। এ অবস্থায় ডেঙ্গু প্রতিরোধে ২ সিটি করপোরেশনের উদ্যোগ হতাশাজনক। দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলোর সমন্বয়হীনতা, যথাযথ পরিকল্পনা, পূর্বপ্রস্তুতি ও কার্যকর বাস্তবায়নের ঘাটতির কারণেই ঢাকাসহ প্রায় সারা দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি মারাত্মক রূপ ধারণ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

 

সামনের দুই মাস আরো বাড়ার প্রবণতা রয়েছে, সবাইকে সজাগ থাকতে বলেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। রোগী যে হারে বাড়ছে, এতে হাসপাতালের সক্ষমতা ছাড়িয়ে যাবে। এজন্য এই মুহূর্তে করণীয় হলো কারিগরি কমিটি গঠন করা, করোনার সময়ে যেমনটি করা হয়েছিল। মশক নিধনে সবার সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগসহ সম্ভাব্য সব মাধ্যমে এডিস মশা ও এর লার্ভা, ডেঙ্গু রোগ নিয়ন্ত্রণ ও দ্রুত চিকিৎসার বিষয়ে জনসচেতনতা ও সতর্কতামূলক বার্তার কার্যকর প্রচার বাড়ানো জরুরি।

 

ভোরের আকাশ/নি