logo
আপডেট : ১৫ জুলাই, ২০২৩ ১০:৩৮
উত্তরাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি
নিজস্ব প্রতিবেদক

উত্তরাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি

দেশের উত্তরাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। এসব জেলায় অবস্থিত নদীর পানি বেড়ে নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। সেইসঙ্গে লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ছে। উত্তরের জেলা লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, সিরাগঞ্জ ও গাইবান্ধায় বন্যায় কারণে দুর্ভোগে পড়ছে সাধারণ মানুষ।

 

পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, এসব এলাকায় তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমারের পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ কারণে চর ও নদীতীরবর্তী নিম্নাঞ্চল এলাকার দেড় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

 

তারা জানান, ব্রহ্মপুত্রসহ অন্যান্য নদনদীর পানিও বৃদ্ধি পাচ্ছে হুহু করে। বৃষ্টিপাত আর উজানে ভারত থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে নদনদীর পানি বেড়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, শুক্রবার ভোর ৬টা থেকে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলায় তিস্তা ব্যারাজে ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ৪০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।

 

উজানে থেকে আসা পানির চাপের কারণে খুলে রাখা হয়েছে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি গেটের সবগুলো। লালমনিরহাট সদর উপজেলার শিমুলবাড়ী পয়েন্টে ধরলার পানি বিপৎসীমার ২২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার পাটেশ্বরী পয়েন্টে দুধকুমারের পানি বিপৎসীমার ৪৮ সেন্টিমির ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

 

তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমারের বুকে ৮০টি চর ও নদীতীরবর্তী ৪০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকায় আমন ধানক্ষেত ও রাস্তাঘাট পানির নিচে তলিয়ে গেছে। কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান বলেন, ‘দুধকুমারের পানিতে গোটা ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। চরের পানিবন্দি মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছে বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রে।’

 

লালমনিরহাট সদর উপজেলার রাজপুর গ্রামের কৃষক নগেন চন্দ্র বর্মণ বলেন, ‘ঘরের ভেতর নদীর পানি ঢুকেছে। তারা বাড়িঘর ছেড়ে আসবাবপত্র ও গবাদি পশু নিয়ে সরকারি রাস্তার ওপর আশ্রয় নিয়েছেন। তিস্তার পানি এখনো বাড়ছে।’ লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শুনীল কুমার বলেন, ‘তিস্তা ও ধরলাপাড়ে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। নদীর পানি আরো বাড়ছে।’

 

এদিকে গত কয়েকদিন ধরে উজানে ভারী বর্ষণের ফলে যমুনা নদীর পানি সিরাজগঞ্জ ও কাজিপুর পয়েন্টে দ্রুত গতিতে বাড়ছে। অব্যাহত পানি বৃদ্ধির ফলে প্লাবিত হচ্ছে নিম্নাঞ্চল। শুক্রবার সকালে সিরাজগঞ্জ হার্ড পয়েন্টে যমুনা নদীর পানির সমতল রেকর্ড করা হয়েছে ১২.৩৩ মিটার। ২৪ ঘণ্টায় ১৮ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৫৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্যদিকে কাজিপুরের মেঘাই পয়েন্টে পানির সমতল রেকর্ড করা হয়েছে ১৩.৯৭ মিটার। ২৪ ঘণ্টায় ২২ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৮৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

 

এদিকে পানি বৃদ্ধির ফলে কাজিপুর, সিরাজগঞ্জ, চৌহালী, বেলকুচি ও শাহজাদপুরে যমুনার অভ্যন্তরের চরাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। তলিয়ে যেতে শুরু করেছে এসব এলাকার নিম্নভূমি। সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, উজানে ভারীবর্ষণে যমুনা নদীর পানি আরো ৩-৪ দিন বাড়বে। সিরাজগঞ্জ ও কাজিপুর পয়েন্টে পানি বিপৎসীমা অতিক্রমের সম্ভাবনাও রয়েছে।

 

অন্যদিকে গাইবান্ধায় তিস্তা, ঘাঘট, ব্রহ্মপুত্র ও করতোয়াসহ সবকটি নদনদীর পানি বেড়েছে। লোকালয় ও নিম্নাঞ্চলসহ নতুন নতুন জেগে ওঠা চরাঞ্চলগুলো প্লাবিত হচ্ছে। এতে বন্যা আতঙ্কে আছেন নদীপাড়ের বাসিন্দারা। শুক্রবার দুপুরে গাইবান্ধা সদর উপজেলার নতুন ব্রিজ পয়েন্টে ঘাঘট নদের পানি বিপৎসীমার ৯৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। একইভাবে তিস্তা নদীর পানি কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার, ফুলছড়ি পয়েন্টে যমুনা নদী ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপৎসীমার ৩৩ সেন্টিমিটার ও চক রহিমাপুর পয়েন্টে করতোয়া নদীর পানি বিপৎসীমার ৪০৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

 

সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বেলকা ইউনিয়নের নবাবগঞ্জ গ্রামের আমিনুল ইসলাম বলেন, গত দুদিন থেকে তিস্তার নদীর পানি ব্যাপকহারে বেড়েছে। মরিচ ও পাটের জমি পানিতে প্লাবিত হয়েছে। বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সদর উপজেলার গোমাট গ্রামের আরিফুল ইসলাম বলেন, বাড়ির চারদিকে পানি। ঠিকমতো বের হওয়া যাচ্ছে না। সবজিক্ষেত তলিয়ে গেছে। পানি যে হারে বাড়ছে তাতে সবজিক্ষেত পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যাবে।

 

বন্যা হলে তো বাড়িতেও থাকা কষ্ট সাধ্য হয়ে পড়বে। গাইবান্ধা জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাফিজুল হক বলেন, উজানের ঢল আর বৃষ্টির পানিতে জেলার সবগুলো নদনদীর পানি বেড়েছে। তবে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বর্তমানে নদীভাঙন নেই বললেই চলে। যেসব এলাকায় নদীভাঙন হচ্ছে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার চেষ্টা করছি।

 

কুড়িগ্রামের দুধকুমার ও ধরলা নদীর পানিও বেড়েই চলছে। গত কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে দুধকুমার নদের পানি ৩ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৫৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ধরলার পানি ৭ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ১৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া শিমুলবাড়ী পয়েন্টে ৩ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলেও এখনো বিপৎসীমার নিচে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

 

এভাবে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে এসব নদনদীর পানিও বিপৎসীমা অতিক্রম করার সম্ভাবনা রয়েছে। পানি বাড়ার কারণে নদনদীর অববাহিকার নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলের প্রায় ১৫ হাজারেরও বেশি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ভেঙে পড়েছে এসব এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা। তলিয়ে গেছে বিভিন্ন সড়ক।

 

অন্যদিকে জেলার নাগেশ্বরী উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউনিয়নে দুধকুমার নদের বাঁধ উপচে প্রায় ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, দুধকুমার নদের পানি পাটেশ্বরী পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫৩ সেন্টিমিটার, ধরলার পানি সেতু পয়েন্টে ১৭ সেন্টিমিটার ও তালুকশিমুলবাড়ী পয়েন্টে ২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদনদীর পানি আরো কিছুটা বাড়তে পারে।

 

ভোরের আকাশ/নি