আজ ১৭ ও আগামীকাল ১৮ জুলাই সারাদেশে প্রাইভেট চেম্বার এবং প্রাইভেট অপারেশন বন্ধ রাখবেন চিকিৎসকরা ।
সেন্ট্রাল হাসপাতালের দুই চিকিৎসকের মুক্তির দাবিতে গত ১৫ জুলাই তিন দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করে অবস্ট্রিক্যাল অ্যান্ড গাইনিকোলজিকাল সোসাইটি বাংলাদেশ (ওজিএসবি)। এর সঙ্গে ৩৬ টি সংগঠন একাত্মতা প্রকাশ করে কার্যক্রম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। এর আগে গতকাল রোববার প্রথমদিনের কর্মসূচি- দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন চিকিৎসকরা।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বাগান গেটের সামনে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে চিকিৎসকরা তিন চিকিৎসকের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানান। তিনজনের দুইজন জেলে এবং একজনকে ৪ সপ্তাহের মধ্যে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
রাজধানীর সেন্ট্রাল হাসপাতালে ‘ভুল চিকিৎসায়’ নবজাতক ও প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের করা মামলায় গত ১৪ জুন রাতে ডা. শাহজাদী ও ডা. মুনা সাহাকে হাসপাতাল থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ১৫ জুন ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন তারা। তবে তাদের পক্ষে আইনজীবীরা জামিন আবেদন করলে আদালত জামিন নাকচ করে কারাগারে পাঠানো নির্দেশ দেয়। সেই থেকে এই দুই চিকিৎসক জেলে রয়েছেন।
এই মামলায় ডা. মিলি, সহকারী জমির, এহসান ও হাসপাতালের ম্যানেজার পারভেজকেও আসামি করা হয়। এছাড়াও অজ্ঞাতপরিচয় আরো কয়েকজনকেও আসামি করা হয়েছে। আসামিদের মধ্যে ডা. বেগম মাকসুদা ফরিদা আক্তার মিলি গত ২৬ জুন আগাম জামিন আবেদনে করেন। শুনানি শেষে ৫ জুলাই চার সপ্তাহের মধ্যে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। তবে এ সময়ের মধ্যে তাকে গ্রেপ্তার বা হয়রানি না করতে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর প্রতি নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
ঘটনার পর ওজিএসবিসহ চিকিৎসকদের সংগঠনগুলো বেশ কয়েকদিন নীবর ছিল। তাদের তেমন কোনো তৎপরতা দৃশ্যমান ছিলো না। সম্প্রতি দৃশ্যমান হয়েছে। প্রথমে নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দেয় ওজিএসবিসহ অন্য আরো সংগঠন। সম্প্রতি শহীদ মিনারে মুক্তির দাবিতে কর্মসূচি পালন করেছে ওজিএসবি। এরপর বিএমএ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠক করে তিন দিনের কর্মসূচি দিয়েছে ওজিএসবি।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বাগান গেটের সামনে মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ডা. আহমেদ হোসেন চৌধুরী, গাইনি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. শিখা গাঙ্গুলীসহ হাসপাতালের অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক, কনসালট্যান্ট ও কর্মরত চিকিৎসকরা।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ডা. আহমেদ হোসেন চৌধুরী বলেন, আমরা রোগীদের সুস্থ করার জন্যই এ পেশায় নিজেদের নিয়োজিত করেছি। আমরা যদি প্রথমেই সিদ্ধান্ত নিই রোগী বাঁচবেন না তাহলে তো তার চিকিৎসাই হবে না। আমরা চেষ্টা করি একটি রোগীকে সুস্থ করে তুলতে। এক্ষেত্রে কোনো রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠেন আবার কেউ মারাও যান। এজন্য যদি প্রথমেই আমাদের দায়ী করা হয়, তাহলে আমরা চিকিৎসা সেবা দেব কী করে। এ বিষয়টি সামনে রেখেই আজ আমাদের এ প্রতিবাদ সমাবেশ।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেন সেখানে কর্মরত চিকিৎিসকরা। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাইনি বিভাগের প্রধান ডা রোকেয়া বলেন, প্রায় এক মাস ধরে আমাদের দুই জন গাইনোকোলোজিস্ট ঢাকার সেন্ট্রাল হাসপাতালে রোগীর সেবা দিতে গিয়ে দুর্ঘটনাবশত মা ও শিশু মারা যায়। তারই পরিপ্রেক্ষিতে ডাক্তার দুইজনকে অ্যারেস্ট করা হয়েছে। তাদের জামিন দেয়া হয়নি। ঈদের আগে তাদের গ্রেপ্তার করায় ঈদটাও তাদের জেলে কেটেছে।
তিনি বলেন, আমাদের বক্তব্য হচ্ছে একজন মুমূর্ষ রোগীকে আমরা সেবা দিতে তো যাবই। রোগী অনেক সময় মারা তো যাবেই। কিন্তু কোনো রকম তদন্ত ছাড়া সম্মানিত দুইজন ডাক্তারকে জেলে নেয়া যায় কিনা এটা আমাদের প্রশ্ন।
স্বাচিপের এক কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, আমার যদি ১০০ রোগী দেখি, তার মধ্যে এক-দুইজন মারা যেতেই পারে। তারপরও কোথাও যদি অবহেলা থাকে সেটি তদন্ত করা হোক।
গত ১৫ জুলাই ওজিএসবির প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ফারহানা দেওয়ান ও সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক ডা. সালমা রউফ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরো জানানো হয়, এই কর্মসূচি শেষে আগামী ১৮ জুলাই আবারো বিএমএর সঙ্গে বসে পরবর্তী আন্দোলনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।
কুমিল্লা থেকে সন্তান প্রসবের জন্য রাজধানীর সেন্ট্রাল হাসপাতালে আসেন মাহবুবা রহমান আঁখি। স্বামীর অভিযোগ আঁখি অবহেলা আর ভুল চিকিৎসার শিকার হয়েছেন। ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১৮ জুন মাহবুবা রহমান আঁখির মৃত্যু হয়। তার আগে গত ১০ জুন বিকেলে আঁখির নবজাতক সন্তান মারা যায়। সন্তানের মৃত্যুর পর আঁখির স্বামী ইয়াকুব আলী ধানমন্ডি থানায় ‘অবহেলাজনিত মৃত্যু’র অভিযোগে একটি মামলা করেন।
ভোরের আকাশ/নি