ঢাকার পর সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু আক্রান্ত হচ্ছে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী। যার হার ৯০ শতাংশ। মৃত্যুর হার শতভাগ।
পর্যটন জেলা কক্সবাজার সিভিল সার্জন কার্যালয় বলছে, উখিয়া ও টেকনাফের ক্যাম্পগুলোয় ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বসবাস করে। ক্যাম্পগুলোয় ঘনবসতিপূর্ণ বসবাস, নাজুক ড্রেনেজ ব্যবস্থা, অপ্রবহমান খাল ও জলাশয়, পলিথিন, ত্রিপল দিয়ে তৈরি ঘর ডেঙ্গু মশার বংশবিস্তারে ভূমিকা রাখছে।
তাছাড়া ভিন্ন ভাষার পত্রিকা, টেলিভিশন চ্যানেল কিংবা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সচেতনতামূলক প্রচারের সঙ্গে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী সম্পৃক্ত হতে না পারায় ক্যাম্পে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে বলে মনে করছে জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের দেয়া তথ্যে দেখা গেছে, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১৫ জুলাই পর্যন্ত কক্সবাজারে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে ২ হাজার ২৩ জন। তাদের মধ্যে ১ হাজার ৯০৫ জনই রোহিঙ্গা।
কক্সবাজার সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মেডিকেল অফিসার ডা. ইমরুল কায়েস এ বিষয়ে বলেন, ‘ডেঙ্গু একসময় আরবান এলাকার রোগ হলেও বর্তমানে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে। ঢাকার পর কক্সবাজারে ডেঙ্গু বিস্তার বেড়ে যাওয়ার একাধিক কারণ রয়েছে। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী ক্যাম্পে খুবই ঘনবসতিপূর্ণভাবে বসবাস করে।
তাছাড়া ক্যাম্পগুলোর জলাধার, ড্রেনেজ সিস্টেম, অপ্রবহমান জলাধার এবং ক্যাম্পের ঘরবাড়ি ও পানির ট্যাঙ্কগুলোর কারণে ডেঙ্গু মশার প্রজনন ঝুঁকি বেশি। আবার ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন শহর থেকে পর্যটকের আগমনের কারণেও কক্সবাজারে ডেঙ্গুর ঝুঁকি বেড়েছে।’
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, বাংলাদেশের মানুষ ডেঙ্গু সম্পর্কে আগে থেকেই অবগত। তাছাড়া ডেঙ্গুর মৌসুম শুরু হয়ে যাওয়ার পর প্রায় সব ধরনের মিডিয়ায় সচেতনতা বাড়াতে প্রচারণা চালানো হচ্ছে।
রোহিঙ্গারা প্রমিত ভাষায় অভ্যস্ত না হওয়ায় সহজেই ডেঙ্গু সম্পর্কে সচেতন করা সম্ভব নয়। তাছাড়া দেশের অন্য এলাকার মতো দ্রুত সময়ের মধ্যে চাইলেই ক্যাম্প এলাকায় মশক নিধনসহ সিভিল ওয়ার্কের সুযোগ না থাকায় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মধ্যে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ছে বলে মনে করছেন তারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজের সিভিল সার্জন বিপাশ খিসা বলেন, ‘ডেঙ্গু মোকাবিলায় আমরা জেলা প্রশাসনসহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছি। ডেঙ্গুর ভয়াবহতা সম্পর্কে সচেতন করা ছাড়া সিভিল সার্জন অফিসের কাজ সেভাবে নেই। পর্যটন এলাকা হওয়ার কারণে কক্সবাজারের বাইরে থেকে আসা মানুষকেও সচেতন করার পাশাপাশি রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোয় ভিন্নভাবে হলেও সচেতনতা বাড়ানো জরুরি বলে মনে করেন তিনি।
জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুসারে, এফডিএমএন ডেঙ্গু রোগীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আধিক্য দেখা গেছে পাঁচটি ক্যাম্পে। এর মধ্যে ৯ জুলাই পর্যন্ত ক্যাম্প-৩-এ ৩৬০ জন, ক্যাম্প-১৭-এ ১৭১, ক্যাম্প-৪-এ ১৬৭, ক্যাম্প-১ ডব্লিও-এ ১১৫ এবং ক্যাম্প-২৪-এ রোহিঙ্গা ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে ৯১ জন।
আর কক্সবাজারের উপজেলাগুলোর মধ্যে পৌরসভায় ২৫ জন, টেকনাফে ২১, সদরে ১৯, উখিয়ায় ২০, মহেশখালীতে ১২ ও রামুতে ৮জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। ১৫ জুলাই নতুন রোগী পাওয়া গেছে ৫ জন। এর মধ্যে পৌরসভায় ৩ জন, উখিয়ায় ১ জন, চকরিয়ায় ১ জন ছাড়াও এফডিএমএন ডেঙ্গু রোগী এসেছে ২ জন। কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে ১৯ ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী। অন্যদিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোয় ভর্তি রয়েছে ২৯ ডেঙ্গু রোগী।
কক্সবাজারে গত বছর মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছিল ১৭ হাজার ৩৯০ জন। এর মধ্যে ১৫ হাজার ৩৫২ জনই ছিল রোহিঙ্গা। ওই বছরের প্রথম ছয় মাস স্থানীয় জনগোষ্ঠীর কেউই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত না হলেও চলতি বছরের একই সময়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে ৬৮ জন স্থানীয়। যদিও জুলাই মাসেই স্থানীয় জনগোষ্ঠী ১৫ জুলাই পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে ৪৯ জন।
এছাড়া গত বছর ৩০ রোহিঙ্গা ও ৯ জন স্থানীয়সহ মোট ৩৯ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা যায় কক্সবাজারে। চলতি বছরের এখন পর্যন্ত জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ৪ জন। তাদের সবাই আবার রোহিঙ্গা বলে জানিয়েছে জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়।
ভোরের আকাশ/নি