logo
আপডেট : ২২ জুলাই, ২০২৩ ১১:০০
বাঁশের সাঁকোয় পারাপার, শঙ্কায় এলাকাবাসী
সাতক্ষীরা প্রতিনিধি

বাঁশের সাঁকোয় পারাপার, শঙ্কায় এলাকাবাসী

কোমলমতি শিশুরা অনিরাপদ বাঁশের সাঁকো পেরিয়ে স্কুলে যাচ্ছে

সাতক্ষীরার কলারোয়ার হেলাতলা ইউনিয়নের এক নিভৃত গ্রাম কোঠাবাড়ী। এর পাশের গ্রাম শুভঙ্করকাটি ও হেলাতলা। বেত্রবতী নদীর তীরে এ গ্রামগুলোর অবস্থান।

 

এ জনপদের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি, বেত্রবতীর ওপর একটি টেকসই সেতু নির্মাণ করার। কোঠাবাড়ী গ্রামের ঠিক বিপরীতে নদীতীরবর্তী কুশোডাঙ্গা ইউনিয়নের রায়টা গ্রাম। এ দুই গ্রামকে বিভক্ত করেছে বেত্রবতী। নাব্য হারাতে বসা এ নদী বর্তমানে শ্যাওলা-কচুরিপানায় ঢাকা পড়ে গেছে।

 

নদীর দুইপাড়ের মানুষের যাতায়াতের জন্য রয়েছে অনিরাপদ এক বাঁশের সাঁকো। প্রায় ৭০ মিটার দীর্ঘ ও ৪ ফুট চওড়া এ সাঁকো দিয়ে প্রতিদিন ৩-৪ গ্রামের মানুষের যাতায়াত করতে হয়। কোনোমতে হেঁটে পার হতে হয় এ সাঁকো। একটি বাইসাইকেলও চালিয়ে যাওয়ার উপায় নেই। বর্ষাকালে পারাপার অনেক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। অবকাঠামো ও উপকরণ ভঙ্গুর হওয়ায় প্রায়ই এ সাঁকো চলাচলের অযোগ্য হয়ে যায়।

 

নদীতীরবর্তী রায়টা গ্রামে রয়েছে বাজার, স্কুল ও মাদরাসাসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় দোকানপাট ও বিপণিকেন্দ্র। রায়টা গ্রামের স্কুল শিক্ষক নুরুল হক জানান, রায়টায় সপ্তাহে শনি ও মঙ্গলবার সাপ্তাহিক হাট বসে। হাটের দিনগুলোয় কোঠাবাড়ী, হেলাতলা ও শুভঙ্করকাটি গ্রামের মানুষ এ সাঁকো পেরিয়ে রায়টা গ্রামের হাটে যান।

 

এছাড়া কোঠাবাড়ী গ্রামের স্কুলগামী কোমলমতি শিশুরা এ সাঁকো পেরিয়ে রায়টা সবুজবাগ সরকারি প্রাইমারি স্কুলে আসে। স্কুলপড়–য়া শিশুরা অনেক ঝুঁকির মধ্য দিয়ে বাঁশের এ সাঁকো পার হয়।

 

রায়টা সবুজবাগ সরকারি প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক মুজিবর রহমান জানান, নদীর বিপরীত পাশের গ্রাম কোঠাবাড়ী থেকে তার স্কুলে প্রায় ৬০ জনের মতো ছাত্রছাত্রী আসে। এদের সবাইকেই ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের এ সাঁকো দিয়েই স্কুলে আসতে হয়। প্রায়ই সাঁকোটির বাঁশ-খুঁটি যখন নষ্ট হয়ে যায়, তখন পারাপার ইচ্ছুক মানুষ অবর্ণনীয় দুর্ভোগের মুখে পড়েন।

 

সম্প্রতি বাঁশের এ সাঁকোটি সংস্কার করে চলাচলের উপযোগী করা হয়েছে, যা সরেজমিন প্রত্যক্ষ করা গেছে। তবে স্থানীয়দের দাবি, টেকসই কংক্রিট ব্রিজ, যা যানবাহনসহ মানুষ পারাপার সহজতর করে তুলবে। নিরাপদ হবে কোমলমতি শিশুদের পরাপার। এ সাঁকোর উভয় পাড়ের সড়ক কার্পেটিংও করা হয়েছে। একটি টেকসই সেতু নির্মাণ করা গেলে বেত্রবতীর দুই তীরের মানুষের বদলে যাবে জীবনযাত্রা। শুরু হবে এ জনপদের যোগাযোগের এক নবদিগন্তের।

 

এ বিষয়ে হেলাতলা ইউপির ২নং ওয়ার্ড সদস্য আমিরুল ইসলাম জানান, কোঠাবাড়ী গ্রামের লোকসংখ্যা ৩ হাজারের বেশি। গ্রামে প্রাইমারি স্কুল না থাকায় সংকীর্ণ সাঁকো দিয়ে রায়টা সবুজবাগ প্রাইমারি স্কুলে যেতে হয় শিশুদের। এছাড়া প্রতিদিনের বাজার ও সাপ্তাহিক হাটের জন্য এ গ্রামের মানুষকে রায়টা বাজারে যেতে হয়। তিনি স্থায়ী সেতু নির্মাণ দ্রুততার ভিত্তিতে করা দরকার বলে অভিমত ব্যক্ত করেন।

 

একই বিষয়ে হেলতলা ইউপি চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, এ বাঁশের সাঁকোর পরিবর্তে টেকসই সেতু নির্মাণ করা গেলে হেলাতলার সঙ্গে কয়লা ও কুশোডাঙ্গা ইউনিয়নের সহজ যোগাযোগ স্থাপিত হবে, যা বদলে দেবে মানুষের জীবনমান।

 

সাঁকোটির বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী সুদীপ্ত কর দীপ্ত জানান, টেকসই সেতু নির্মাণের ক্ষেত্রে এটি নিঃসন্দেহে জনগুরুত্বপূর্ণ। অনেক আগেই সাপোর্টিং রুরাল ব্রিজের আওতায় এখানকার সয়েল টেস্ট করিয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগে ব্রিজ নির্মাণের প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো দরপত্র আহব্বান করা হয়নি।

 

ভোরের আকাশ/নি