logo
আপডেট : ২৩ জুলাই, ২০২৩ ১১:২৫
পাল্টে গেছে নগরীর বাঁশবাড়ি কলোনি
মীর বাবুল, ময়মনসিংহ

পাল্টে গেছে নগরীর বাঁশবাড়ি কলোনি

ময়মনসিংহ নগরীর বাঁশবাড়ি কলোনির রাস্তার পাশঘেঁষা দেয়ালে ঝুলছে বাহারি ফুলের গাছ

ময়মনসিংহ নগরীর বাঁশবাড়ি কলোনির সড়কটি কিছুদিন আগেও ছিল অপরিচ্ছন্ন, আবর্জনায় পূর্ণ। কিন্তু এখন চোখ আটকে যাবে যেকোনো পথচারীর। কারণ রাস্তার পাশঘেঁষা দেয়ালে ঝুলছে বাহারি ফুলের গাছ, পাতাবাহার, অর্কিড। হেঁটে যেতে যেতে আনমনে অনেকেই থমকে দাঁড়াচ্ছেন; নান্দনিকতায় মুগ্ধ হচ্ছেন। থোকায় থোকায় ফুল ফুটে আছে, ছড়াচ্ছে সুবাস। চিকচিক করা সবুজ পাতার ফাঁকে এসব ফুল যেন অন্য এক রূপ দিয়েছে বাঁশবাড়ি কলোনিকে।

 

কীভাবে বদলে গেল বাঁশবাড়ি কলোনি? নগরীর ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের এ কলোনির বাসিন্দা বেশিরভাগই নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী মানুষ। সম্প্রতি কলোনির ভাঙাচোরা রাস্তা ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার আধুনিকায়ন করে সিটি করপোরেশন।

 

সংস্কার করা হয় রাস্তা ও পয়ঃবর্জ্য নিষ্কাশন ব্যবস্থা। এটি কাজে লাগিয়ে কলোনিকে রূপান্তরের পরিকল্পনা নেন চার তরুণ। মুরাদ হাসান কাননের সঙ্গে এ কাজে অংশ নেন মেহেদী হাসান মুহিত, সাইফুল ইসলাম ও উত্তর সরকার। তারা কলোনির বাসিন্দাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে নিজ এলাকাকে সুন্দর রাখতে তাদের দেয়াল বাগান করার পরিকল্পনাকে সবাই সাধুবাদ জানান।

 

এ এলাকার একাধিক বাসিন্দা জানান, চার তরুণের উদ্যোগে মাত্র তিন মাসে ৮০০ ফুট সড়কের দুই পাশ হয়ে উঠেছে নান্দনিক বাগান। ঘরের অব্যবহৃত ও ভাঙা ঝুড়ি, বালতি, মগ নানা কিছুকে করা হয়েছে টব। সেগুলো দেয়ালে আটকে লাগানো হয়েছে নানা প্রজাতির সৌন্দর্যবর্ধক গাছ। এসব গাছের কোনোটি পাতাবাহার, কোনোটি সুগন্ধি ফুলের। রাতে ঘ্রাণ ছড়ায় হাসনাহেনা। একসময় যেসব সড়কে আবর্জনার গন্ধ ছিল, আজ সেখানে ফুলের সৌরভ।

 

দেয়ালগুলোয় গাছের ফাঁকে সাঁটানো কাগজে লেখা ‘এ গাছগুলো বিক্রির জন্য নহে।’ কলোনির এসব গাছ টিকিয়ে রাখতে ছোট-বড় সবাই মনোযোগী। কেউ গাছের পাতা বা ফুল ছেঁড়ে না। সবাই নিজ নিজ বাগানকে বড় করার প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত। এখন অনেকে কলোনিতে ছুটে যান উদ্যোগটি দেখতে, ছবি তুলতে।

 

নগরীর আকুয়া এলাকার বাসিন্দা সামছুল আলম বলেন, কলোনির এ রাস্তা দিয়ে আগে যেতে মন চাইত না। এখন বদলে গেছে চিত্র। রাস্তাটি অনেক সুন্দর করে তুলেছে গাছগুলো। এ উদ্যোগ অন্যান্য সড়কে নেয়া গেলে পুরো নগরই নান্দনিক হবে।

 

আনন্দ মোহন কলেজের শিক্ষার্থী আসাদুল হক বলেন, আগে আবর্জনার কারণে চলাচল করা যেত না। এখন রাস্তা হয়েছে এবং পাশের দেয়ালগুলোতে গাছ লাগিয়ে সুন্দর করা হয়েছে। এখন এলাকাটি অনেক সুন্দর হয়েছে। দেয়ালে বাগান দেখতে অনেক ভালো লাগে।

 

উদ্যোক্তা মুরাদ হোসেন কানন জানান, কলোনি নিয়ে মানুষের ধারণা পাল্টে দিতে, আগামী প্রজন্মকে সুন্দর নগরী উপহার ও পরিবেশ সুন্দর রাখতে তারা এ উদ্যোগ নিয়েছেন। এরই মধ্যে কয়েক হাজার গাছ দেয়ালে লাগানো হয়েছে। উত্তম সরকার মনে করেন, ছোট উদ্যোগেও যে একটি এলাকার চেহারা বদলে দেয়া যায়, আমরা সেটি করে দেখিয়েছি। এ জন্য অর্থকড়ি নয়, ইচ্ছাশক্তিই যথেষ্ট।

 

এ বিষয়ে ময়মনসিংহের সিটি মেয়র ইকরামুল হক টিটু বলেন, এলাকাটি একসময় খুবই অনুন্নত ছিল। অবকাঠামো উন্নয়নের সময় বাসিন্দাদের অনুরোধ করা হয়েছিল পরিবেশের উন্নয়ন করতে। সেখানকার মানুষ দেয়ালগুলোকে বাগানে রূপ দিয়েছেন। এটি শিক্ষনীয়। আশা করব, নগরীর বাসিন্দারা নিজ নিজ এলাকাকে সবুজ ও ফুল দিয়ে সাজিয়ে তুলবেন।

 

ভোরের আকাশ/নি