logo
আপডেট : ২৪ জুলাই, ২০২৩ ১০:২১
ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহের আশঙ্কা
আরিফ সাওন

ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহের আশঙ্কা

আরিফ সাওন: চলতি জুলাই মাসের ২৩ দিনেই দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃত্যু বিগত বছরগুলোর রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। এর আগে কোনো জুলাইয়েই এত আক্রান্ত ও মৃত্যু হয়নি। চলতি বছর এ পর্যন্ত ভর্তি হয়েছে ৩২ হাজার ৯৭৭ জন। এর মধ্যে ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত ছয় মাসে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৭ হাজার ৯৭৮ জন। আর শুধুই জুলাই মাসের ২৩ দিনে ভর্তি হয়েছে ২৪ হাজার ৯৯৯ জন।

 

চলতি বছর যে পরিমাণ ভর্তি হয়েছে, তার প্রায় ৭৬ শতাংশই ভর্তি হয়েছে জুলাইয়ের ২৩ দিনে। শুধুই আক্রান্তের ক্ষেত্রেই নয়, মৃত্যুর ক্ষেত্রেও জুলাই ছাড়িয়ে গেছে অন্য ছয় মাসের মোট হিসাবকে। প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত মারা গেছেন মাত্র ৪৭ জন। আর গত ২৩ দিনেই মারা গেছেন ১২৯ জন। এ মৃত্যুহার চলতি বছরের ৭৩ শতাংশের বেশি।

 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারিতে ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয় ৫৬৬ জন, ফেব্রুয়ারিতে ১৬৬, মার্চে ১১১, এপ্রিলে ১৪৩, মে মাসে ১ হাজার ৩৬ ও জুন মাসে ৫ হাজার ৯৫৬ জন। এ ছয় মাসে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৭ হাজার ৯৭৮ জন। জানুয়ারি মাসে বিগত বছরের রেশ ছিল। ফেব্রুয়ারিতে এসে সেই রেশ কিছুটা কাটে। মার্চ এবং এপ্রিল মাসেও কম ছিল। মে মাসে আবার রোগী বাড়তে থাকে। জুনে এসে মে মাসের ৫ গুণ বৃদ্ধি পায়।

 

জানুয়ারিতে মৃত্যু হয়েছে ৬ জনের, ফেব্রুয়ারিতে ৩, মার্চে কারো মৃত্যু হয়নি। এপ্রিলে দুই এবং মে মাসে দুজনের মৃত্যু হয়। ৪ মাসে মৃত্যু হয় মাত্র ১৩ জনের। জুন মাসে মৃত্যুর দিক থিকে লাভ দেয়। শুধু জুন মাসে মৃত্যু হয় ৩৪ জন। জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ছয় মাসে মৃত্যু হয় ৪৭ জনের। শুধু জুলাই মাসে মৃত্যু হয়েছে ১২৯ জনের। সব মিলিয়ে চলতি বছরের এ পর্যন্ত মারা গেছেন ১৭৬ জন।

 

এমন পরিস্থিতিতে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশের ১১টি এলাকা রোড জোন ঘোষণা করা হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় ডিএনসিসি কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতাল ডেঙ্গু ডেডিকেটেড করা হয়েছে। সেখানে জেনারেল আইসিইউ ও এইচডিইউ মিলে ৮০০ শয্যা রয়েছে। এছাড়া সারা দেশে হাসপাতালগুলো প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এর আগে ২০১৯ সালে ডেঙ্গু পরিস্থিতি বেশ খারাপ হয়। ওই বছরের জুলাই মাসের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। তবে ওই বছর পরিস্থিতি বেশি খারাপ ছিল আগস্ট মাসে।

 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চলতি বছরের জুলাইয়ে যে পরিমাণ আক্রান্ত ও মৃত্যু হয়েছে, তাতে আগস্ট-সেপ্টেম্বরের পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হতে পারে। তারা বলছেন, ১৯ সালের আগস্টের চেয়ে এ বছরের আগস্ট আরো ভয়াবহ হতে পারে।

 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১৯ সালের জুলাই মাসে মৃত্যু হয় ৩৫ জনের, ভর্তি হয় ১৬ হাজার ২৫৩ জনের। এ বছর বেশি ভর্তি হয় আগস্ট মাসে; ৫২ হাজার ৬৩৬ জন। মৃত্যু হয় ৮৩ জনের। সেপ্টেম্বর থেকে কমতে থাকে। সেপ্টেম্বর মাসেও ১৬ হাজার ৮৫৬ জন ভর্তি হয়, মৃত্যু হয় ১৭ জনের। এ বছর মৃত্যু হয় ১৬৪ জনের। ভর্তি হয় ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জন। ২০ সালের তথ্য পাওয়া যায়নি।

 

২০২১ সালের জুলাই মাসে পর্যন্ত কোনো মৃত্যু ছিল না। জুলাই মাসে ভর্তি হয় ২ হাজার ২৮৬ জন। ২০২২ সালের জুলাই মাসে মৃত্যু হয় ৯ জনের, ভর্তি হয় ১ হাজার ৫৭১ জন। এ বছর বেশি আক্রান্ত ও মৃত্যু হয় অক্টোরব এবং নভেম্বর মাসে। অক্টোবরে ২১ হাজার ৯৩২ জন ভর্তি হয়, মৃত্যু হয় ৮৬ জনের। নভেম্বরে ভর্তি হয় ১৯ হাজার ৩৩৪ জন, মৃত্যু হয় ১১৩ জনের। এ বছর মোট ভর্তি হয় ৬২ হাজার ৩৮২ জন, মৃত্যু হয় ২৮১ জনের।

 

আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, গত বছর আমরা দেখেছি অক্টোবর এবং নভেম্বরে বেশি আক্রান্ত ও মৃত্যু হয়েছে। এবার আরো এগিয়ে জুলাইয়ে থেকেই শুরু হয়েছে। জুলাইয়ে যদি এ অবস্থা হয়। তাহলে আগস্ট-সেপ্টেম্বরে পরিস্থিতি আরে ভয়াবহ হতে পারে। এ বছর শুধু ঢাকায় নয়; ঢাকার বাইরেও রোগী বাড়ছে। কাজেই আমরা যদি এখনই সচেতন না হই।

 

সামনের মাসগুলোয় আমাদের বিগত বছরগুলোর চেয়ে আরো ভয়াবহ পরিস্থিতিতে সম্মুখীন হওয়া লাগতে পারে। সেজন্য আমাদের সচেতন হওয়ার তাগিদ দেন এ বিশেষজ্ঞ। তিনি বলেন, এডিস মশা যাতে বিস্তার লাভ করতে না পারে, সেজন্য নিজ নিজ জায়গা থেকে সবাইকে কাজ করতে হবে। কোথাও জমা পানি দেখলে তা ফেলে দিতে হবে। বাসায় ফুলের টবে বা অন্য কোথাও যাতে পানি জমে না থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

 

দুই সিটির ১১ এলাকা রেড জোন: ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ১১টি এলাকাকে ‘রেড জোন’ ঘোষণা করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ছয়টি এলাকা এবং উত্তর সিটি করপোরেশনে (ডিএনসিসি) পাঁচটি এলাকা।

 

এলাকাগুলো হচ্ছে যাত্রাবাড়ী, মুগদা, কদমতলী, জুরাইন, মানিকনগর, সবুজবাগ, উত্তরা, মোহাম্মদপুর, মিরপুর, তেজগাঁও ও বাড্ডা।

 

রোববার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, এলাকাভিত্তিক তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, দক্ষিণের যাত্রাবাড়ী, মুগদা, কদমতলী, জুরাইন, ধানমন্ডি এবং বাসাবো এলকায় আক্রান্তের হার বেশি। উত্তর সিটি করপোরেশনের উত্তরা, মোহাম্মদপুর, মিরপুর, তেজগাঁও এবং বাড্ডা এলাকায় ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি।

 

এক দিনে ৯ জনের মৃত্যু, ভর্তি ২২৯২: ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে এক দিনে ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতদের ৮ জন ঢাকায়, ১ জন ঢাকার বাইরে। এ নিয়ে চলতি বছরে ডেঙ্গুতে ১৭৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। যাদের মধ্যে ঢাকায় ১৩৯ এবং ঢাকার বাইরে ৩৭ জন। মৃতদের মধ্যে ১০১ নারী এবং ৭৫ পুরুষ। শুধু চলতি জুলাই মাসেই মৃত্যু হয়েছে ১২৯ জনের। জুনে মৃত্যু হয় ৩৪ জনের। তার আগে ৪ মাসে মারা যায় ১৩ জন। শুধু মার্চ মাসে ডেঙ্গুতে কারো মৃত্যু হয়নি। গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম এ তথ্য জানায়।

 

কন্ট্রোল রুম জানায়, শনিবার সকাল ৮টা থেকে রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত ডেঙ্গু নিয়ে ২ হাজার ২৯২ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এদের মধ্যে ঢাকায় ১ হাজার ৬৪ এবং ঢাকার বাইরে ১ হাজার ২২৮ জন। চলতি বছরের এ পর্যন্ত ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩২ হাজার ৯৭৭ জন। এর মধ্যে ঢাকায় ১৯ হাজার ৯৪৯ এবং ঢাকার বাইরে ১৩ হাজার ২৮ জন।

 

বর্তমানে সারা দেশের হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে ৭ হাজার ১৭৫ জন। এর মধ্যে ঢাকায় ৪ হাজার ১৪৯ এবং ঢাকার বাইরে ৩ হাজার ২৬ জন। হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন ২৫ হাজার ৬২৬ জন। এর মধ্যে ঢাকায় ১৫ হাজার ৬৬১ এবং ঢাকার বাইরে ৯ হাজার ৯৬৫ জন।

 

ভোরের আকাশ/নি