ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (মমেক) বেডের তুলনায় চারগুণ রোগী ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। অতিরিক্ত রোগীর চাপে ওয়ার্ডের ভেতরে তো দূরের কথা বারান্দায়ও জায়গা হচ্ছে না। চিকিৎসাসেবা, ওষুধ এবং খাবার পাওয়া নিয়ে অভিযোগ না থাকলেও বেড না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা। এতে চিকিৎসা পেতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে তাদের।
হাসপাতালের পরিচালক জানিয়েছেন, এক হাজার শয্যার এ হাসপাতালে প্রতিদিন সাড়ে ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার রোগী ভর্তি থেকে চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষা, খাবার-দাবার এবং ওষুধের সংকট না থাকলেও বেড সংকটের কারণে চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হয় রোগীদের।
সরেজমিনে হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগের ওয়ার্ডগুলো ঘুরে দেখা যায়, মেডিসিন বিভাগে ১৭০ বেডের বিপরীতে রোগী ভর্তি আছেন ৯৬৮, সার্জারি বিভাগে ১৫০ বেডের বিপরীতে ৫২৩, অর্থোপেডিক সার্জারি বিভাগে ৬৫ বেডের বিপরীতে ২২৮, নাক-কান-গলা বিভাগে ৪০ বেডের বিপরীতে ১৬৫, চক্ষু বিভাগে ৪০ বেডের বিপরীতে ১১৪, শিশু বিভাগে ৬০ বেডের বিপরীতে ৩৪৪, নবজাতক নিউনেটাল কেয়ার বিভাগে ৫০ বেডের বিপরীতে ১৩৮, গাইনি বিভাগে ১২০ বেডের বিপরীতে ৪০৩, মানসিক চিকিৎসা বিভাগে ১২ বেডের বিপরীতে ১৬, চর্ম বিভাগে ১০ বেডের বিপরীতে ৭, করোনারি কেয়ার ইউনিট সিসিইউ বিভাগে ৫০ বেডের বিপরীতে ১৮১, আইসিইউ বিভাগে ১০ বেডের বিপরীতে ১২, নিউরো সার্জারি বিভাগে ২০ বেডের বিপরীতে ৫৪, শিশু সার্জারি বিভাগে ৩০ বেডের বিপরীতে ৮২, বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগে ২০ বেডের বিপরীতে ৪০, হেপাটোলজি অ্যান্ড গ্যাস্ট্রোলজি বিভাগে ১০ বেডের বিপরীতে ৬০, নেফ্রোলজি বিভাগে ১০ বেডের বিপরীতে ২৫, ইউরোলজি বিভাগে ২০ বেডের বিপরীতে ৪১, নিউরো মেডিসিন বিভাগে বেড না থাকলেও ভর্তি ১০৬, ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ৬০ বেডের বিপরীতে ৩২ রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন।
এ ছাড়া অন্য বিভাগে আরো ৭০ জন রোগী ভর্তি আছেন। এই হিসাবে ১ হাজার বেডের বিপরীতে রোগী ভর্তি আছেন ৩ হাজার ৬০৯ জন।
হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের তিন নম্বর ইউনিটে ভর্তি আছেন ভালুকার উথুরা গ্রামের কলেজছাত্রী ঝর্ণা আক্তার। পেটের ব্যথা নিয়ে ১৭ জুলাই হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। ওয়ার্ডের ভেতরে জায়গা না পেয়ে বারান্দার এক কোণে অবস্থান করছেন। ভর্তির পর থেকে স্যালাইন এবং ইনজেকশন চলছে তার।
ঝর্ণা আক্তার বলেন, ‘হাসপাতালের চিকিৎসা খুবই ভালো। চিকিৎসক এবং নার্সরা যত্ন করেন। ওষুধ এবং খাবার ঠিকমতো দেন। কিন্তু ওয়ার্ডের ভেতরে জায়গা না থাকায় বারান্দায় থেকে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। বারান্দায় ফ্যান না থাকায় গরমে প্রচন্ড কষ্ট করে চিকিৎসাসেবা নিচ্ছি। রোগী বেশি হওয়ায় বেড পাইনি।’
গত ১৬ জুলাই শেরপুরের ভাতশালা গ্রাম থেকে পায়ের সমস্যা নিয়ে সার্জারি বিভাগের ১০ নম্বর ওয়ার্ডের তিন নম্বর ইউনিটে ভর্তি হন আমিনা বেগম। ওয়ার্ডের ভেতরে জায়গা না পেয়ে পুরোনো ভবনের দোতলার লিফটের সামনে বিছানা পেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
আমিনার মেয়ে শরীফা বেগম বলেন, মায়ের ডান পায়ে পচন ধরায় এর আগে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে পা কাটতে হয়েছিল। এখন বাঁ পায়ে পচন ধরেছে। চিকিৎসার জন্য ভর্তি করেছি। ওয়ার্ডে বেড না পেয়ে লিফটের সামনে খালি জায়গায় বিছানা পেতে মায়ের চিকিৎসা করাচ্ছি। এ পর্যন্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষাসহ প্রায় ১০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। তবে হাসপাতাল থেকে ওষুধ এবং খাবার দেয়া হচ্ছে। কবে নাগাদ অপারেশন হবে, তা জানাননি চিকিৎসকরা।
হাসপাতালের ৮ নম্বর সার্জারি ওয়ার্ডের ২ নম্বর ইউনিটে ১৪ জুলাই ভর্তি হয়েছেন নেত্রকোনা সদরের হাসানউরা গ্রামের ইনসাফ আলী রিপন। প্রস্রাবের রাস্তায় পাথর হওয়ায় হাসপাতালে ভর্তি হন। ওয়ার্ডে বেড না পেয়ে প্রশাসনিক ভবনের পাশের সিঁড়ির সামনে বিছানা পেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
তিনি বলেন, আমার মতো অনেক রোগী ওয়ার্ডে বেড না পেয়ে বারান্দায়, সিঁড়ির সামনে ও বিভিন্ন ফ্লোরে বিছানা পেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। বারান্দায় থাকা রোগীদের স্যালাইন নিতে সমস্যায় পড়তে হয়। বারান্দার দুই পাশে রোগীর বিছানা থাকায় মাঝখান দিয়ে চলাচলে রোগী ও স্বজনদের কষ্ট হয়। তবু জায়গা না পেয়ে বাধ্য হয়ে এখানে থাকছি। এ ছাড়া কোনো ওপায় নেই।
হাসপাতালে বেডের তুলনায় তিন-চারগুণ রোগী প্রতিদিন ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে জানালেন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. গোলাম ফেরদৌস। তিনি বলেন, অনেকে বারান্দায় বিছানা করে চিকিৎসা নেন। এতে অন্য রোগীদের সমস্যায় পড়তে হয়। তবে চিকিৎসক-নার্স ও কর্মচারীরা সেবা দেয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন।
ভর্তিকৃত রোগীরা সরকারি সব ওষুধ পাচ্ছেন, খাবারো পাচ্ছেন ঠিকমতো। হাসপাতালের ভেতরে সব রোগের পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা আছে। রোগীর চাপ সামলাতে এবং সুন্দরভাবে চিকিৎসাসেবা দেয়ার জন্য এখানে আরো ১৫০০ বেড বাড়াতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পত্র দেয়া হয়েছে।
ভোরের আকাশ/নি