logo
আপডেট : ২৪ জুলাই, ২০২৩ ১১:২২
সম্পাদকীয়
রেলের ডাবল লাইন উদ্বোধন এবার ভোগান্তি আরো কম

রেলের ডাবল লাইন উদ্বোধন এবার ভোগান্তি আরো কম

বর্তমান সরকার রেলপথ উন্নয়নে নানামুখী কাজ করছে। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া থেকে কুমিল্লার লাকসাম পর্যন্ত ৭২ কিলোমিটার ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মধ্য দিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে নিরবচ্ছিন্নভাবে নতুন যুগের সূচনা হলো। এতে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে আর কোনো ট্রেনকে ক্রসিংয়ে পড়তে হবে না। কমে আসবে ট্রেনযাত্রার সময়ও।

 

চাহিদা থাকায় বাংলাদেশে রেল সম্ভাবনা উজ্জ্বল। বাংলাদেশ রেলে সোনালি যুগের সূচনা করার সময় বয়ে চলেছে। দেশের ভেতরে যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম হয়ে উঠতে পারে রেল। কিন্তু নানা কারণে নিরাপদ বাহন হয়ে উঠেছে অনিরাপদ। বিষয়গুলো গুরুত্ব দেয়া উচিত।

 

জানা গেছে, আখাউড়া থেকে লাকসাম পর্যন্ত ৭২ কিলোমিটার অংশে আগে একটি রেললাইন ছিল। এখন তা দুই লেন করা হয়েছে। এই ৭২ কিলোমিটার ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন নির্মাণ হওয়ায় ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথ ৩২১ কিলোমিটার ডাবল লাইনে উন্নীত হলো। ‘আখাউড়া থেকে লাকসাম পর্যন্ত ডুয়েলগেজ ডাবল রেললাইন নির্মাণ এবং বিদ্যমান রেললাইনকে ডুয়েলগেজে রূপান্তর’ প্রকল্পে খরচ হয়েছে ৫ হাজার ৫৮৩ কোটি টাকা। প্রায় ৭ বছর সময় লেগেছে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে।

 

নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় দুবার বাড়ানো হয়েছিল প্রকল্পের মেয়াদ। আখাউড়া থেকে লাকসাম পর্যন্ত রেল অংশটি দুই লেনে উন্নীত হওয়ায় অনেক ধরনের সুফল পাওয়া যাবে। বিশেষ করে আন্তঃনগর ট্রেনগুলোর যাতায়াত সময় অন্তত ১ ঘণ্টা কমে যাবে। আর পণ্যবাহী ট্রেন ও লোকাল ট্রেনগুলোকে আগে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হতো। দুই লেনের কারণে এসব ট্রেনের অপেক্ষার সময়ও কমে আসবে।

 

এ লাইনে একসময় শুধু মিটারগেজ ট্রেন চলতে পারত। দুই লেন চালু হওয়ার পর থেকে সেখানে মিটারগেজের পাশাপাশি ব্রডগেজ ট্রেনও চলতে পারবে। এদিকে ঢাকা-কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণের কাজ এগিয়ে চলেছে। এ পথে চলতি বছরই রেল যোগাযোগ শুরু হবে বলে আশা করছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এই নতুন রেলপথ চালু হলে বিশেষভাবে উপকৃত হবেন পর্যটকরা। রেলপথ সম্প্রসারণের এ পদক্ষেপ ইতিবাচক। তবে বিভিন্ন সময়ে রেলের উন্নয়ন পরিকল্পনার মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

 

এ ছাড়া দেশের অধিকাংশ রেলপথে ঝুঁকি নিয়ে চলছে রেল। লাইনচ্যুত হওয়াসহ ছোটখাটো দুর্ঘটনা লেগেই আছে রেলপথে। যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনায় বিপুল প্রাণহানি ঘটলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। রেললাইনে পাথর থাকা অপরিহার্য হলেও মাইলের পর মাইল রেললাইনে পাথর নেই, চুরি হয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ রেলওয়ের অধিকাংশ সেতুই নির্মিত হয়েছে ব্রিটিশ আমলে। এসব সেতুর বেশিরভাগই ঝুঁকিপূর্ণ-জরাজীর্ণ।

 

জোড়াতালি দিয়ে মেরামত করা এসব সেতুর ওপর দিয়েই চলছে ট্রেন। ফলে একটু উনিশ-বিশ হলেই ঘটছে দুর্ঘটনা। দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার অন্যতম প্রধান মাধ্যম হলো রেলওয়ে। অথচ দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে অবহেলার শিকার হয়ে আসছিল রেলওয়ে। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতাসীন হয়ে রেলের দিকে দৃষ্টি ফেরায়। স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয় হয়েছে রেলওয়ে।

 

রেল উন্নয়ন মহাপরিকল্পনাও হাতে নেয়া হয়েছে, যা দেশবাসীকে খুবই আশান্বিত করেছে। তবে এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নে শ্লথগতি, সংশ্লিষ্ট উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি অনাকাক্সিক্ষত প্রতিবন্ধকতায় পড়ার খবর আমাদের স্বভাবতই হতাশ করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী সময়মতো প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলে সত্যিকার অর্থে রেল যোগাযোগে একটা বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটবে। তার সুফল পড়বে দেশের সার্বিক অগ্রগতিতে।

 

ভোরের আকাশ/নি