logo
আপডেট : ২৪ জুলাই, ২০২৩ ১৫:৩৫
আনারসের দাম কম, দুশ্চিন্তায় কৃষক
ময়মনসিংহ প্রতিনিধি

আনারসের দাম কম, দুশ্চিন্তায় কৃষক

ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার আনারস

পুষ্টিসমৃদ্ধ ও স্বাস্থ্যকর ফল আনারস চাষে প্রসিদ্ধ ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার আনারসের সুনাম রয়েছে। এবারো ব্যাপক আনারস আবাদ হয়েছে। ফলনও হয়েছে বেশ ভালো। তবে গত দুই বছরের তুলনায় এবার দাম অনেক কম। তাই আনারস নিয়ে উপজেলার চার হাজার কৃষক দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। করোনাকালে যেসব কৃষক ও ব্যবসায়ীদের মুখে ছিল হাসির ঝিলিক আজ সেসব চাষি ও ব্যবসায়ীদের কপালে পড়েছে চিন্তার ভাঁজ।

 

আনারসচাষি ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত দুই বছরের তুলনায় এবার করোনা সংক্রমণ নাই বললেই চলে। তাই আনারসের চাহিদা ও দাম দুটোই কমে গেছে বলে জানিয়েছেন আনারস ব্যবসায়ী ও আনারসচাষিরা।

 

ফুলবাড়িয়া বন বিট সন্তোষপুর (বিট) অফিসের তথ্যসূত্রে ৩ হাজার ৬৩৯ পয়েন্ট ১৪ দশমিক একর সরকারি জমি আছে। তার মধ্যে বাংলাদেশ বনশিল্প উন্নয়ন করপোরেশন রাবার প্রক্রিয়াজাত (কারখানার) জন্য ১৯৮৯ সালে মে মাসে ১৩৬১.৯৭ পয়েন্ট (একর) সরকার ৯৯ বছরের নামে চুক্তি অনুযায়ী বরাদ্দ দিয়েছে। বাকি ২৩শ একর জমির পরিমাণ থেকে মূলত সরকারের কাছ থেকে বেশিরভাগ অংশগ্রহণকারী বা উপকারভোগী সাধারণ কৃষকেরা বিভিন্ন ধরনের ফসল আবাদের জন্য লিজ নিয়ে কৃষকেরা বন বিভাগের আওতায় বনজ ঔষধী গাছের নিচে চাষাবাদের উপযোগী করে এ আনারস চাষ করেন।

 

প্রতি একর জমিতে ১২ হাজার থেকে ১৪ হাজার চারা রোপণ করা যায়। এ কাজে পুরুষের পাশাপাশি উপজাতী গারো নারীরা কাজ করেন। বেশ কয়েক প্রকার আনারস চাষ করা হয়। তার মধ্যে জলডিঙ্গি ও কেলেন্ডার প্রসিদ্ধ। বর্তমানে কেলেন্ডার ফল বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে। এ বছর উৎপাদন ও ফলন ভালো হয়েছে। রাঙ্গামাটিয়া, নাওগাঁও ইউনিয়নের সন্তোষপুরে বেশি পরিমাণ আনারস উৎপাদন ও বাজারজাত করা হয়।

 

কৃষক সাইদুল ইসলাম জানান, জমির ভাড়া, সার বীজ, কাজের মজুরিসহ আনুষঙ্গিক খরচ মিলে চারা রোপণ থেকে শুরু করে বাজারে বিক্রি করা পর্যন্ত প্রতি পিস ফল ১৫ থেকে ২০ টাকা খরচ হয়। কিন্তু বাজারে আনারসের রপ্তানিরও চাহিদা খুবই কম। তাই আমাদের লোকসান গুণতে হচ্ছে ১০ টাকা প্রতি পিস।

 

রাঙ্গামাটিয়া গ্রামে আরেক কৃষক শান্ত মিয়া বলেন, বিগত ২ বছর আগে করোনা মহামারিতেও এত কম দামে আনারস বেচা বিক্রি করি নাই। এ বছরও দাম কম।

 

ব্যবসায়ী শ্রী রঞ্জিত চন্দ্র দত্তের সাথে কথা হয়। তার বাড়ি নাওগাঁও। তিনি বলেন, আমি ১ লাখ ফল প্রতি পিস ২০ টাকার বেশি দরে অগ্রিম টাকা দিয়ে কিনেছি। এখন বাজারে ১০ থেকে ১৫ টাকা বিক্রি করা যায়। যদি এমন বাজার থাকে তাহলে আমি পথে নেমে যাব। প্রায় ২০ বছর ধরে ব্যবসা করি কিন্তু এত খারাব সময় এর আগে কখনো যায়নি।

 

অপর ব্যবসায়ী আ. বারেক। তিনি দিনাজপুরে ট্রাকে করে মাল দেন। তিনি বলেন, ২ লাখ পিস আনারস কৃষকের কাছ থেকে অগ্রিম কিনেছি। আমার কমপক্ষে ৫ লাখ টাকা লোকসান যাবে। রাঙ্গামাটিয়া ইউনিয়নের ইউপি সদস্য বাবুল মিয়া প্রায় ১৫ একর জমিতে আনারসের বাগান করেছেন।

 

তিনি বলেন, মানুষ অন্যান্য ফলের বাগান ছাদে কিংবা বাড়ির আঙিনায় করে নিজেদের অভাব পূরণ করছে বিধায় আনারসের প্রতি তেমন চাহিদা নেই।

 

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রকিব আল রানা বলেন, ৯৫০ হেক্টর জমিতে এবার আনারস আবাদ হয়েছে। প্রায় ৪ হাজার কৃষক আনারস চাষ করেছে। ফুলবাড়িয়ার উপজেলার আনারস প্রসিদ্ধ। বাজারে দাম কিছুটা কম। এ বছর প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টিপাত হওয়ার কারণে একসাথে আনারসগুলো পেকে গেছে। ফলে বাজারে চাহিদার তুলনায় জোগান বেশি। পাশাপাশি মৌসুমী ফলের জোগান বেশি থাকায় আনারসের পরিবর্তে অন্যান্য ফল মানুষ কিনছে।

 

ভোরের আকাশ/নি