logo
আপডেট : ২৬ জুলাই, ২০২৩ ১২:৪১
সম্পাদকীয় গ্রামীণবান্ধব সরকারের অঙ্গীকার
বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে আমার গ্রাম আমার শহর

বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে আমার গ্রাম আমার শহর

বর্তমান গ্রামীণবান্ধব সরকারের অন্যতম একটি নির্বাচনী অঙ্গীকার আমার গ্রাম আমার শহর প্রকল্প বাস্তবায়ন। যেখানে আবহমান গ্রামাঞ্চলে প্রতিবেশ পরিবেশ অক্ষুণ্ণ রেখে শহরের সব সুযোগ-সুবিধা সম্প্রসারণ করা হবে। প্রকল্পটি গত সপ্তাহে অনুমোদন দেয়া হয়েছে একনেক বৈঠকে। প্রথমত ১৫টি পাইলট গ্রামে বাস্তবায়ন করা হবে প্রকল্পটি।

 

চলতি বছরের জুলাই থেকে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর এবং জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৮০০ কোটি টাকা। প্রকল্প ব্যয় আর যেন না বাড়ে সে বিষয়েও সতর্ক থাকতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। পরে এই মডেল অনুসরণ করা হবে অন্যান্য গ্রামেও পর্যায়ক্রমে। তবে উন্নয়ন কার্যক্রমে কোনোক্রমেই কৃষি জমি, জলাশয়সহ গাছপালা প্রতিবেশ পরিবেশ ক্ষুণ্ণ করা হবে না।

 

এর পাশাপাশি বাংলাদেশের গ্রামীণ রাস্তা ও অবকাঠামো নিয়ে জাতীয় মাস্টারপ্ল্যান তৈরি এবং বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গ্রামীণ অবকাঠামো ও রাস্তাঘাট যে নেই, তা নয়। স্বাধীনতার পর বিশেষ করে গত কয়েক বছরে দেশব্যাপী গড়ে উঠেছে ব্যাপক সড়ক ও মহাসড়ক নেটওয়ার্ক। এখন ছোট-বড় যানবাহন নিয়ে বর্ষা মৌসুম বাদে দেশের প্রায় সর্বত্র যাওয়া যায়।

 

তবে অধিকাংশ রাস্তাঘাটের বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের রাস্তার মান নিয়ে প্রশ্ন আছে। মাঝে মধ্যেই মহাসড়কগুলোর হয় বেহাল অবস্থা। স্থানীয় ঠিকাদাররা অধিকাংশ রাস্তাঘাট অবকাঠামো নির্মাণে প্রায়ই নিম্ন মানের ইট সুরকি বালু কংক্রিট, পিচ ঢালাই ব্যবহার করে থাকে। স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে যোগসাজশে আর্থিক লেনদেনসহ ঘুষ দুর্নীতি অনিয়মের অভিযোগও আছে বিস্তর।

 

আছে অপরিকল্পিত ব্রিজ কালভার্ট সংযোগ সড়ক তৈরির অভিযোগ। এর ওপর রয়েছে প্রতিবছরের প্রাকৃতিক দুর্যোগ অতি বৃষ্টি, বন্যা, জলোচ্ছাস, ঘূর্ণিঝড়, সিডর, আমফান ইত্যাদির ছোবল। ফলে, অধিকাংশ রাস্তাঘাট ব্রিজ কালভার্ট টেকসই ও মানসম্মত হয় না। এতে ব্যাহত হয় অর্থের অপচয়সহ সার্বিক উন্নয়ন। ভোগান্তি বাড়ে মানুষের। অথচ দেশে টেকসই সড়ক উন্নয়ন অবকাঠামো গড়ে তোলা সম্ভব হলে পণ্য পরিবহনসহ মানুষের চলাচলের পথ সহজ ও সুগম হতে পারে।

 

সর্বোপরি রোধ হবে অর্থের অপচয়। পাশাপাশি নজর দিতে হবে নদীভাঙন প্রতিরোধসহ দখল দূষণের বিরুদ্ধে। এসব ক্ষেত্রে অর্থায়ন ও বরাদ্দ কোনো সমস্যা নয়। সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকেই অর্থ সংস্থান করা হবে। তবে নিয়মিত নজরদারি ও দেখভাল করতে হবে স্থানীয় সরকার বিভাগকে। উপক‚লীয় সুবিস্তৃত বেড়িবাঁধসহ হাওর অঞ্চলের বাঁধগুলো নিয়মিত সংস্কার করতে হবে পরিকল্পিত উপায়ে।

 

পরিকল্পনাবিদদের মতে, বর্তমানে দেশের ৩০ শতাংশ লোক বসবাস করে শহরে। ২০৪০ সাল নাগাদ জনসংখ্যার অর্ধেক লোক বসবাস করবে শহরে। অতঃপর বিদ্যমান শহরগুলোর পরিকল্পনামাফিক উন্নয়ন করতে গেলে লোকজন সরাতে হবে। ভেঙে নতুন করে গড়তে হবে সব। বাস্তবে তা কখনোই সম্ভব নয়। সেজন্য এখন চোখ ফেরানোর সময় এসেছে উপজেলা ও গ্রাম পর্যায়ে।

 

প্রতিটি উপজেলায় গড়ে তুলতে হবে পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগ। যত্রতত্র আবাসন, স্থাপনা ও কলকারখানা না করে স্থানীয় জনসংখ্যা ও চাহিদার প্রেক্ষাপটে নিতে হবে সুদূরপ্রসারী ও পরিকল্পিত উন্নয়ন। আর তাহলেই কেবল সম্ভব একটি আধুনিক ও ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ। আবহমান গ্রামবাংলার চিরায়ত সৌন্দর্য ও প্রাকৃতিক আবেদনকে যথাসম্ভব অক্ষুণ্ণ রেখেই গ্রহণ করতে হবে গ্রামোন্নয়ন পরিকল্পনা।

 

ভোরের আকাশ/নি