মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলায় ভূমি রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে নিয়মনীতি উপেক্ষা করে দলিল লেখক সমিতির অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও বেপরোয়া চাঁদাবাজি ব্যাপকহারে বৃদ্ধির অভিযোগ উঠেছে। সমিতির হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছেন জমির ক্রেতা-বিক্রেতারা। দলিল রেজিস্ট্রেশন করতে গেলে সরকারি নিয়মনীতি উপেক্ষা করে সমিতির নামে একটি নির্ধারিত হারে চাঁদা আদায় করছে সভাপতি আবজাল হোসের। এতে সাধারণ দলিল লেখকরাও জিম্মি হয়ে পড়েছেন সমিতির নেতাদের কাছে।
জানা গেছে, সমিতির নির্বাচন দিয়ে কমিটি করার নিয়ম থাকলেও মনগড়াভাবে কমিটি বানিয়ে বর্তমান কমিটির নেতারা সমিতির দায়িত্বে রয়েছে দীর্ঘদিন যাবত। সভাপতি বিএনপির কিছু উপজেলা ও ইউনিয়নের পদধারী নেতা নিয়ে বলয় সৃষ্টি করে অনিয়ম দুর্নীতির মাধ্যমে সমিতি চালাচ্ছেন। সমিতির ক্যাশিয়ার আবুল কালাম আজীবন একই পদে বহাল রয়েছেন। আগে পরের সব কমিটির তিনিই ক্যাশিয়ারের দায়িত্ব পালন করেন। মেয়াদহীন কমিটির সভাপতি সাধারণ দলিল লেখকদের জিম্মি করে সংগঠনের নামে চাঁদাবাজি করে যাচ্ছে। দলিল লেখক ও তাদের পরিবারের সুবিধার জন্য সমিতির কার্যকম করার কথা থাকলে সব সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ দলিল লেখকরা।
দলিল লেখকদের রেজিস্ট্রি অফিসের ভেতরে বসার জন্য প্রত্যেকের কাছ থেকে ৫ হাজার করে টাকা চাঁদা নিয়ে এখন পর্যন্ত বসার ব্যবস্থা করে দিতে পারেনি এবং ওই টাকার কোনো হিসাব সাধারণ দলিল লেখকদের দেয়া হচ্ছে না। সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে ভেতরে জনগণের ও দলিল লেখকদের বসার ব্যবস্থা না হওয়ায় দলিল দাতা গ্রহীতাদের পোহাতে হচ্ছে নানা দুর্ভোগ।
সেরেস্তা নামে অতিরিক্ত হারে ২ হাজার ৭শ করে টাকা নেয়া হচ্ছে দলিল লেখকদের কাছ থেকে। এমনকি দলিলের নকল তুলতে নেয়া হচ্ছে ১ হাজার ৭শ টাকা করে। অথচ সমিতির নেই কোনো কার্যক্রম। সমিতির সুবিধা থেকে বঞ্চিত সাধারণ দলিল লেখকেরা। তারা সমিতির বাইরে গিয়ে কোনো ভ‚মি রেজিস্ট্রেশন করতে পারছেন না। রেজিস্ট্রি অফিসকে জিম্মি করে সরকারি নির্ধারিত ফিসের ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ অতিরিক্ত টাকা আদায় করছে সমিতি। সাধারণ ও নিরীহ মানুষ অতিরিক্ত টাকা দিয়ে জমি রেজিস্ট্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। জমির ক্রেতা ও বিক্রেতাদের জিম্মি করে আদায়কৃত টাকা ভাগ করে নিচ্ছেন সমিতির নামধারী কতিপয় নেতারা।
সরেজমিন গিয়ে সাটুরিয়া সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের সমিতির কাছে জমির দাতা ও গ্রহীতাদের জিম্মিদশার ভয়াবহ চিত্র পাওয়া গেছে। সমিতির বিনা অনুমতিতে সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে কোনো জমি রেজিস্ট্রি হয় না বলে ব্যাপক অভিযোগ আছে। সাধারণ দলিল লেখকদেরও সমিতির বিনা অনুমতিতে দলিল করার নেই ক্ষমতা। দলিল লেখার যাবতীয় টাকা দিতে হয় সমিতিকে।
তারপর সমিতির গোপনীয় একটি সাংকেতিক চিহ্ন ব্যবহার করার পরই দলিল যায় সাব-রেজিস্ট্রারের টেবিলে। সেখানেও প্রতি টেবিলে দলিল প্রতি ১০০ থেকে ২০০ টাকা এবং ভূমির শ্রেণি পরিবর্তন ও কাগজের ত্রুটি থাকলে সংশ্লিষ্ট করণিক সাব-রেজিস্ট্রারের সঙ্গে শলাপরামর্শ করে প্রকারভেদে আদায় করেন লাখ টাকা পর্যন্ত। এমনটাই বলছেন ভুক্তভোগী ও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক দলিল লেখক।
জানা যায়, এ অফিসে সনদপ্রাপ্ত দলিল লেখক রয়েছেন ৫০ জন। আইন অনুযায়ী দলিল লেখকরা দলিল লেখার বিনিময়ে প্রতি পৃষ্ঠা বাবদ ও সরকারি ফি’র হার নির্ধারণ করে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের সামনে একটি করে তালিকা টানিয়ে রাখার নির্দেশনা রয়েছে। এ ছাড়া লাইসেন্সধারী কোনো দলিল লেখক আইন লঙ্ঘন করলে সাব-রেজিস্ট্রার তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবেন। কিন্তু সাটুরিয়া এসব নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা করা হচ্ছে না। সাব-রেজিস্ট্রারও সমিতির অনিয়ম, দুর্নীতি ও চাঁদাবাজির সঙ্গে অনেকটা তাল মিলিয়ে চলছেন।
সিনিয়র দলিল লেখক সিরাজুল ইসলাম বলেন, নামে শুধু সমিতি আছে? কামে নাই। আমি এসব বাদ দিয়ে দিয়েছি। দলিল লেখকদের ভেতরে বসার জন্য ৫ হাজার টাকা করে সব দলিল লেখক দিয়েছিল ১ বছর আগে। সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওই টাকার হিসাব চাইলে তিনি বিভিন্ন তালবাহানা করে বলে ওই টাকা দিয়ে খুঁটি বানানো হয়েছে।
দলিল লেখক ছাত্তার বলেন, রেজিস্ট্রি অফিসের ভেতরে বসার জন্য আমিও ৫ হাজার টাকা দিয়েছি। একটু ঝামেলার কারণে বিষয়টি আটকে আছে। বিভিন্ন খরচাপাতির জন্য আমাদের এ অফিসে একটু বেশি সেরেস্তা নেয়া হচ্ছে।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক দলিল লেখক জানান, ৫০ জন দলিল লেখকদের কাছ থেকে ৫ হাজার করে টাকা নিয়েছে সমিতির নেতারা। সেই টাকা তারা নিজেদের পকেটস্থ করেছে। সমিতির কোনো হিসাব-নিকাশ নেই। দুই একজন মিলে হরিলুট করে খাচ্ছে।
ভোরের আকাশ/নি