logo
আপডেট : ৭ আগস্ট, ২০২৩ ১৬:৫৮
পেয়ারার স্বর্গরাজ্য ‘ভিমরুলি ভাসমান বাজার’
বরিশাল ব্যুরো

পেয়ারার স্বর্গরাজ্য ‘ভিমরুলি ভাসমান বাজার’

ভাসমান পেয়ারা বাজার

বিল নদী খাল এই তিনে বরিশাল। আর এই বরিশালেই কীর্তিপাশা খালের ওপরে বিখ্যাত ভাসমান পেয়ারা বাজার অবস্থিত। ভিমরুল এলাকায় এই বাজার ও পেয়ারা বাগান গড়ে উঠায় এই বাজার ‘ভিমরুলি ভাসমান বাজার’ নামে অধিক পরিচিত।

 

ছোট ছোট ডিঙি নৌকায় ভিমরুলি বাজারের নৈসর্গিক দৃশ্য যে কাউকে মুগ্ধ করবে। ভ্রমণ পিপাসুদের তৃষ্ণা মিটিয়ে দেবে এই ভাসমান বাজারের নব যৌবনা ঢেউ। সকালের বাজারে পেয়ার কেনা-বেচার হুল্লোড়, কলোকাকলিতে মুখরিত থাকে। বিশাল নৌকার সারি নিয়ে ভেসে থাকে বিক্রেতা। ডিঙি নৌকায় চড়ে সেই পেয়ার কিনতে হয় ক্রেতাদের। পেয়ারার বাজারে শুধুই পেয়ারার সমাহার। পেয়ারার সবুজের গন্ধে অনন্য রূপ দেয় ভিমরুলিকে। মুগ্ধতা ছড়ায় জীবনানন্দের রূপসী বাংলায়।

 

বরিশালের ঝালকাঠি থেকে ১৫ কি.মি দূরে পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলার আটঘর কুড়িয়ানার কীর্তিপাশা খালের ওপর অবস্থিত এই ভাসমান পেয়ারা বাগান। জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলে এই বাজার। তবে পেয়ারার বাজার জমে উঠে জুলাইয়ের শেষের দিকে।

 

সন্ধ্যা নদীর অববাহিকায় কীর্তিপাশা খালের মনোমুগ্ধকর সৃষ্টি এই বাজার। এই ভাসমান বাজারে নৈসর্গিক প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে হলে অবশ্যই ডিঙি নৌকায় ভাসতে হবে। নৌকায় ভেসে ভেসে উপভোগ করতে পারবেন পেয়ারার বাগান। একে পেয়ারার স্বর্গরাজ্য বললেও অত্যুক্তি হবে না। ছোট ছোট খাল পেরিয়েই মূল পেয়ারা বাগান।

 

এরপর চোখে পড়বে সারি সারি পেয়ারা গাছ। কাঁচা-পাকা পেয়ারা ঝুলে আছে। কোনটা পাকা, কোনটা কাঁচা। হলুদ আর সবুজের মনকাড়া সমারোহ। গাছের তলায়ও বেশকিছু পেয়ারা। নৌকায় যেতে পেয়ারার মৃদু ছোঁয়া লাগবে। ইচ্ছে হবে পুরো বাগানটাই তুলে নেই।

 

পেয়ারা বাগানের মধ্যে সবজির আবাদ। বিভিন্ন রকম সবজি ঝুলে আছে। শসা, বেগুন, করোলা আরো কত কী.... কোথাও ছোট ছোট আখ চোখে পড়বে। আকাশছোঁয়া সারি সারি সুপারির গাছ আপনাকে চমকে দেবে। নৌকার বৈঠার সাথে জলের মিতালি, প্রকৃতির সাথে পর্যটকের, মাঝির সাথে নৌকার সবই চোখের সামনে হবে কিন্তু কোথাও রেখাচ্যুত হবে না, মনে ক্লান্তির দাগ কাটবে না। শূন্যস্থান তৈরি হবে না।

 

আঁকাবাঁকা খালের পথ। দু’পাশে সারি সারি পেয়ারা গাছ, কোথাও সুপারির গাছ আবার কোথাও বিশাল লেবুর বাগান। কীর্তিপাশা খালের মধ্য দিয়েই নৌকা চলে। ডিঙি নৌকায় বসে বসে এই মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য উপভোগ করতে আপনার খরচ হতে পারে এক হাজার টাকা।

 

মজার ব্যাপার হলো, এই বাজারে পেয়ারা বহনকারী সব নৌকার নকশা ও আকার প্রায় একই। মনে হয় একই কারিগর সব নৌকা বানিয়েছেন। পেয়ারা বাগানে প্রবেশের জন্য ছোট ছোট পরিখা করা হয়েছে। ছোট নৌকা নিয়ে সেখানে ঢুকে চাষিরা পেয়ারা পাড়েন। খালসংলগ্ন প্রতিটি বাড়িতে একটি করে ডিঙি নৌকা থাকে। স্থানীয়রা এগুলোকে ‘কষা নৌকা’ বলেন।

 

এগুলো দিয়েই বাজার-হাট, যাতায়াতসহ যাবতীয় কাজ করা হয়। বড় নৌকা পাড়ে রেখে ওই ছোট নৌকা নিয়ে চাষিরা বাগানে নেমে পড়েন। খালসংলগ্ন বাড়িঘর, স্কুল, ব্রিজ, রাস্তাঘাটের দৃশ্য যে কাউকে বাংলার বুকে এক টুকরো ভেনিসের অনুভ‚তি দেবে। দুপুরের বিশ্রামের জন্য খালের পাশের পেয়ারা বাগানে ছোট ছোট পার্ক রয়েছে। পার্কগুলো গ্রামীণ আবহে অনিন্দ্য সুন্দরভাবে তৈরি।

 

পেয়ারা বাগানকে ঘিরে গড়ে ওঠায় এখানেও পেয়ারার সমাহার। এখান থেকে পেট পুরে খেতে পারবেন পেয়ারা। আর এজন্য খরচ হবে মাত্র ৩০ টাকা। আপন হাতে পেয়ারা পাড়ার স্বাদ উপভোগ করতেই হয়তো এত মানুষের আনাগোনা। আর এসব দৃশ্য ডিঙি নৌকায় বসে উপভোগ করার স্বাদ প্রকাশ করার মতো ভাষা আপনি হয়তো খুঁজে পাবেন না।

 

ফেরার পথে আপনি বলতে বাধ্য হবেন, এই শহর জীবনানন্দের শহর, মুকুন্দরামের শহর। গ্রামবাংলার প্রকৃতির সমাহার এ শহর। কি নেই এই শহরে! আপনার স্মৃতিতে অমলিন হয়ে থাকবে আটঘর কুড়িয়ানা, চিরসবুজ হয়ে থাকবে ভিমরুলের ভাসমান পেয়ারা বাজার।

 

ভোরের আকাশ/নি