ইউক্রেনের সঙ্গে শান্তি আলোচনা রাশিয়া প্রত্যাখ্যান করে না বলে দাবি করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তার মতে, আফ্রিকান শান্তি উদ্যোগের পাশাপাশি এ সম্পর্কিত চীনা প্রস্তাবও এর ভিত্তি হিসেবে কাজ করতে পারে।
শনিবার (২৯ জুলাই) তিনি এই মন্তব্য করেন। রোববার (৩০ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেছেন, তিনি ইউক্রেন নিয়ে শান্তি আলোচনার ধারণা প্রত্যাখ্যান করেন না। সেন্ট পিটার্সবার্গে আফ্রিকান নেতাদের সাথে সাক্ষাতের পর তিনি বলেন, আফ্রিকান শান্তি উদ্যোগের পাশাপাশি এ সম্পর্কিত চীনা প্রস্তাবও এর ভিত্তি হিসেবে কাজ করতে পারে।
প্রেসিডেন্ট পুতিন আরও বলেন, ইউক্রেনের সেনাবাহিনী যখন আক্রমণ চালাচ্ছে তখন যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়ন করা কঠিন। যদিও ইউক্রেন ও রাশিয়া উভয়ই এর আগে বলেছে, কিছু পূর্বশর্ত ছাড়া তারা আলোচনার টেবিলে আসবে না। ইউক্রেন চায় ১৯৯১ সালে তার সীমানা যেমন ছিল সেটাই পুনঃস্থাপিত হোক। তবে ইউক্রেনের এই দাবির গভীরভাবে বিরোধী রাশিয়া। এর পরিবর্তে মস্কোর যুক্তি, আলোচনার জন্য কিয়েভকে তার দেশের ‘নতুন আঞ্চলিক বাস্তবতা’ মেনে নিতে হবে।
এই পরিস্থিতিতে শনিবার গভীর রাতে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। সেখানে তিনি বলেন, ইউক্রেনের ফ্রন্টে আপাতত কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার কোনও পরিকল্পনা তার নেই। এদিন তিনি ক্রেমলিনের সমালোচনাকারী ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের বিষয়টির সমর্থনেও কথা বলেছেন। তার দাবি, কিছু লোক ভেতর থেকে রাশিয়ার ক্ষতি করছে।
বিবিসি বলছে, বিস্তৃত পরিসরের এই ব্রিফিংয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট এদিন সাংবাদিকদের বলেন, চলতি মাসের শুরুতে ক্রিমিয়ান সেতুতে বিস্ফোরণের পরে মস্কো কিছু ‘প্রতিরোধমূলক হামলা’ চালিয়েছিল।সেতুতে হামলার ঘটনায় দু’জন নিহত হয়েছিলেন এবং প্রেসিডেন্ট পুতিন এই ঘটনাকে ইউক্রেনের ‘সন্ত্রাসী’ কাজ বলে দাবি করে এর জবাব দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। যদিও কিয়েভ আনুষ্ঠানিকভাবে বলেনি যে, সেতুতে বিস্ফোরণের জন্য তারাই দায়ী ছিল।
এদিকে গত মাসে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এবং প্রেসিডেন্ট পুতিনের সাথে সাতটি দেশের নেতা ও প্রতিনিধিসহ একটি আফ্রিকান দল সাক্ষাৎ করার পরে রাশিয়া-আফ্রিকা শীর্ষ সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হলো।
ইউক্রেনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় শহর সুমিতে রকেট হামলায় একজন নিহত ও পাঁচজন আহত হয়েছেন। মন্ত্রণালয় টেলিগ্রামে বলেছে, শনিবার সন্ধ্যায় শহরের একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রুশ ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে। এতেই ওই হতাহতের ঘটনা ঘটে। বিবিসি অবশ্য এই তথ্য যাচাই করেনি।
এছাড়া শনিবার ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর জাপোরিঝিয়ায় ‘উন্মুক্ত এলাকায়’ ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানার পর দুইজন নিহত এবং অন্য একজন আহত হন বলে একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন। সিটি কাউন্সিলের সেক্রেটারি আনাতোলি কুর্তিয়েভ বলেছেন, ‘শত্রুর ক্ষেপণাস্ত্র’ বিস্ফোরণের ফলে অ্যাপার্টমেন্টের বেশ কিছু জানালা উড়ে গেছে এবং একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সুপারমার্কেট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বাখমুতের কাছে ইউক্রেনের বিশেষ বাহিনীর অবস্থান পরিদর্শন করেছেন। বর্তমানে এই শহরটিতে যুদ্ধের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর লড়াই চলছে। ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষ বলেছে, কিয়েভের সৈন্যরা ধীরে ধীরে দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় এই শহরের কাছে এগিয়ে যাচ্ছে। চলতি বছরের মে মাসে রুশ বাহিনী এই শহরটি দখল করে নেয়।
ভোরের আকাশ/নি