logo
আপডেট : ১ আগস্ট, ২০২৩ ১০:৫৯
দেড় বছর যাবৎ বিদ্যালয়ের নির্মাণ কাজ বন্ধ, ক্লাস চলছে টলঘরে
ঝালকাঠি প্রতিনিধি

দেড় বছর যাবৎ বিদ্যালয়ের নির্মাণ কাজ বন্ধ, ক্লাস চলছে টলঘরে

বিদ্যালয়ের নির্মাণ কাজ বন্ধ ক্লাস চলছে টলঘরে

ঝালকাঠির রাজাপুরে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও ঠিকাদারের মধ্যে দ্বন্দ্বের বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণ কাজ প্রায় দেড় বছর যাবৎ বন্ধ রয়েছে। শ্রেণিকক্ষ না থাকায় বাধ্য হয়ে বিদ্যালয়ের সিঁড়ির নিচেসহ পাশের একটি বাজারের খোলা টলঘরে ক্লাস চালানো হচ্ছে। উপজেলার বড়ইয়া ইউনিয়নের নিজামিয়া বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এমন অবস্থা চলছে দীর্ঘদিন ধরে।

 

জানা যায়, মেসার্স চাঁন এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ৮৫ লাখ টাকা ব্যয়ে নিজামিয়া বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের চার কক্ষ বিশিষ্ট একতলা একটি ভবন নির্মাণের কাজ পায়। পরে নির্মাণ সামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ায় আরো ১৭ লাখ টাকা বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হয়। কাজটি ২০২২ সালের আগস্ট মাসে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ঠিকাদার মাটি কাটা শুরু করার পরই নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেন।

 

বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, ২০২২ সালের ২০ মার্চ বিদ্যালয়ের পুরাতন ভবন ভেঙে নতুন ভবন নির্মাণ কাজ শুরু হয়। নির্মাণ সামগ্রীও আনা হয়। কিন্তু নির্মাণ কাজের শুরুতেই মানেজিং কমিটির সভাপতির সঙ্গে কাজের স্থানের বৈদ্যুতিক খুঁটিসহ সঞ্চালন লাইন সড়ানো নিয়ে ঠিকাদারের দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এতেই বন্ধ হয়ে যায় নির্মাণ কাজ। এরপর থেকেই বিদ্যালয়ের দুইটি পুরাতন শ্রেণিকক্ষে পাটিশন দিয়ে চারটি, সিঁড়ির নিচে একটি ও তিনটি বাজারের টলঘরে ক্লাস চলছে।

 

অফিস কক্ষ করা হয়েছে পাশের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের মধ্যে। সেটি যেকোনো সময় ভেঙে পরতে পারে। ক্লাসের ভালো পরিবেশ না থাকায় দিনে দিনে শিক্ষার্থীর সংখ্যাও কমে যাচ্ছে। বিদ্যালয়ে ২২৪ জন শিক্ষার্থী ছিল কমতে কমতে বর্তমানে ১২০ জন রয়েছে।

 

স্কুলের ৭ম শ্রেণির শিক্ষার্থী লামিয়া জানায়, টলঘরে খোলা জায়গায় ক্লাস করতে খুবই অসুবিধা হয়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রোদের তাপ বেড়ে যায়, তখন আর বসা যায় না। আবার বৃষ্টি আসলে পানিতে বই খাতা ভিজে যায়। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আলবাকি, লাইসা ও নয়ন বলে, আমাদের সিঁড়ির নিচে ক্লাস হয়। এখানে শিক্ষার কোনো পরিবেশ নেই। আমাদের নতুন ভবনের কাজ শুরু করার দাবি জানাচ্ছি।

 

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. হারুন-অর-রশিদ বলেন, স্কুলের পুরাতন ভবন ভেঙে কাজ শুরু করলেও সভাপতি-ঠিকাদারের দ্বন্দ্বের কারণে প্রায় দেড় বছর ধরে নতুন ভবন নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে। ভবন না থাকায় সামনে নতুন বছরে নতুন ক্লাসে কোনো শিক্ষার্থী ভর্তি করতে পারব না। তাই দ্রুত ভবন নির্মাণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

 

বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. জাহিদুল আবেদীন বলেন, খেলার মাঠ ছোট করা যাবে না আর কাজের মান ঠিক রেখে কাজ করতে বলা হয়েছিল ঠিকাদারকে। ঠিকাদারের কাজের মান খুব খারাপ, সে কাজের জন্য যে সব নির্মাণ সামগ্রী এনেছে তা নিম্নমানের। বিদ্যুতের খুঁটি সড়াতে যে খরচ হবে তা ঠিকাদারকেই বহন করতে হবে, আমরা তাকে সহায়তা করব। কিন্তু তিনি কাজ বন্ধ করে রেখেছেন।

 

অন্যদিকে ঠিকাদার মো. আনোয়ার হোসেন মৃধা মজিবর বলেন, ‘বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আমার কাছে কিছু টাকা দাবি করেছিল। তাদের দেখানো জায়গায় মাটি কাটা হয়েছিল। এখন টাকা না দিয়ে কাজ শুরু করায় বিদ্যুতের খুঁটি সরিয়ে এখন পিছনে নিয়ে যেতে বলে। বিদ্যুতের খুঁটি সরানোর একটা অজুহাত দেখিয়ে কাজ বন্ধ করতে বলেছেন।

 

এ ব্যাপারে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. গোলাম মোস্তফা বলেন, আমি নতুন এসেছি। কাজের সাইট পরিদর্শন করে শীঘ্রই কাজ শুরু করতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে একটি চিঠি দেয়া হয়েছে।

 

ভোরের আকাশ/নি