লক্ষীপুরের রামগতির উপকূলীয় এলাকায় মেঘনা নদীর গভীরতা কমে গেছে। জন্ম নিয়েছে বহু চর ও ডুবোচর। এতে কমে গেছে গভীর জলের মাছ ইলিশ। মেঘনাপাড়ের ২৫-৩০ জন বাসিন্দা, জেলে এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। রামগতি ঘাট সংলগ্ন দুটি এবং চর আলেকজান্ডার ঘাটের দক্ষিণে তিনটিসহ লক্ষীপুর জেলার ৭৬ কিলোমিটার মেঘনা এলাকায় গত ৫-৭ বছরে ১০টি চর দৃশ্যমান হয়েছে।
অন্যদিকে রামগতি থেকে নোয়াখালীর হাতিয়া পর্যন্ত রয়েছে অনেক চর। গত ৫-৭ বছরে চাঁদপুর সীমানা থেকে নোয়াখালীর হাতিয়া পর্যন্ত মেঘনা নদীর বিশাল এলাকায় অসংখ্য চর-ডুবোচর সৃষ্টি হয়েছে। এ চরগুলো ছাড়াও রামগতির টাংকি বাজার পর্যন্ত অন্তত ৬টি বড় ডুবোচর রয়েছে। এমন তথ্য দিলেন জেলে জব্বার মাঝি।
স্থানীয় বাসিন্দা সুজিত দেবনাথ জানান, নদীতে চরের কারণে নানা ধরনের সমস্যা তৈরি হচ্ছে। চরগুলো বর্ষায় দেখা না গেলেও শীত মৌসুমে ভাটার সময় দেখা যায়। পুরো মেঘনা নদীর রামগতির সীমানায় এখন অসংখ্য চর। মৌসুমে ইলিশ ধরা না পড়ায় জেলে, আড়তদার, পাইকার, দাদন ব্যবসায়ী, মৎস্য শ্রমিক ও জেলে পরিবারগুলোতে নেমে এসেছে বিষাদের ছায়া।
বলছিলেন উপজেলা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের আড়তদার মীর হাসান মাহমুদ। রামগতি বাজারের মাছ ব্যবসায়ী শরিফুল ইসলাম হাবিবের ভাষ্য, রামগতির মেঘনা নদীতে ইলিশ কমে গেছে প্রায় ৬০-৭০ শতাংশ। চলতি মৌসুমে মেঘনায় ইলিশের দেখা পাচ্ছেন না জেলেরা। দু-চারটি করে ইলিশ পেলেও তাতে নৌকার জ্বালানী খরচও ওঠে না।
জেলে রহিম মাঝি জানান, বর্তমানে বর্ষা মৌসুমেও মেঘনা নদীতে ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে না। ইলিশের জন্য জেলেদের ৫০-৬০ কিলোমিটার দূরে সাগরে যেতে হচ্ছে। সাগর থেকে ইলিশ এনে জেলেরা নদীর ঘাটে বিক্রি করছেন। বর্ষায় এখন আর নদীতে প্রচুর ইলিশ আসে না।
সেন্টার খালের জয়নাল মাঝি জানান, এ বর্ষায় ভালোভাবে বৃষ্টিও হচ্ছে না। বৃষ্টিতে নদীতে পানি বাড়লে চলে আসত ইলিশ। এবার নিজেরাও ঠিকমতো খেতে পারেননি ইলিশ। এমন অভাব আর চোখে দেখেননি বলে জানান তিনি।
চর আলেকজান্ডার ঘাটের নৌকার মালিক শাহ আলম জানান, চর ও অনাবৃষ্টির কারণে ইলিশ মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। নদীতে যত বেশি পানি থাকবে তত বেশি ইলিশ আসবে। এ কারণেই ঝড়-বৃষ্টিতে নদীতে বেশি ইলিশ পাওয়া যায়।
সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন বলেন, রামগতিতে নিবন্ধিত ২০ হাজার জেলে। জেলার অধিংকাংশ জেলে রামগতির উপক‚লের। কিন্তু দুই বছর ধরে নদীতে আশানুরূপ ইলিশ ধরা না পড়ায় জেলেদের জীবিকা নিয়ে সংশয় তৈরি হচ্ছে। ইলিশ গভীর জলের মাছ, তাই নদীতে গভীরতা না থাকলে ইলিশও গতিবিধি পরিবর্তন করে। ফলে আশানুরূপ ইলিশ আসতে পারছে না।
লক্ষীপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম জানান, জলবায়ু পরিবর্তনে নদীতে চর পড়ে গেছে এবং পানি কমে গেছে। তাই ইলিশ মাছ কম পাওয়া যাচ্ছে। নদীতে সৃষ্ট বহু চর ও নদীর নাব্য হ্রাস পাওয়ায় সমুদ্র থেকে ইলিশ মিঠাপানিতে আসতে বাধা পেয়ে গতিপথ পরিবর্তন করছে। সামনে এ অবস্থা চলতে থাকলে মেঘনায় ইলিশ আরো কমে যাবে। তবে নদীতে পানি বাড়লে ইলিশের পরিমাণও বাড়বে।
মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট নদীকেন্দ্র চাঁদপুরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আমিরুল ইসলাম বলেন, মেঘনায় ইলিশ না আসার অনেক কারণের মধ্যে চর বা ডুবোচর একটি। এ ছাড়া ইলিশের প্রজনন মৌসুমে মাছ ধরা ও জাটকা নিধন বন্ধ হলে উৎপাদনও বাড়বে।
ভোরের আকাশ/নি