logo
আপডেট : ৩ আগস্ট, ২০২৩ ১১:১৮
সীতাকুন্ডে বাড়ছে অগ্নিঝুঁকি, শঙ্কিত ব্যবসায়ীরা
মো. নাছির উদ্দিন, সীতাকুন্ড(চট্টগ্রাম)

সীতাকুন্ডে বাড়ছে অগ্নিঝুঁকি, শঙ্কিত ব্যবসায়ীরা

সীতাকুন্ডে বিএম ডিপোতে আগুন নেভাতে ব্যস্ত দমকলকর্মীরা (ফাইল ছবি)

সীতাকুন্ডে অপরিকল্পিতভাবে প্রতিনিয়ত গড়ে উঠছে মার্কেট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। পৌরসদরের মার্কেট ও বিপণিবিতানগুলোতে নেই অগ্নিপ্রতিরোধমূলক পর্যাপ্ত ব্যবস্থা। অধিকাংশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে নেই অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রও। নেই দুর্ঘটনার সময় ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি প্রবেশের সুব্যবস্থা।

 

ভূমির মালিকানা সংক্রান্ত জটিলতা, সীমানা নিয়ে বিরোধ কিংবা দেওয়ানি মোকদ্দমার বিষয়টি চিন্তা করে ভবন নির্মাণে হচ্ছে তাড়াহুড়া। এতে ভবন নির্মাণ সংক্রান্ত নীতিমালা কিংবা ঝুঁকির বিষয়টি খুব বেশি আমলে নেয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে না অধিকাংশ ভবন মালিক। সিতাকুন্ডে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ভবনে অগ্নিঝুঁকি বেড়ে গেছে। এ কারণে শঙ্কায় রয়েছেন ব্যবসায়ীসহ স্থানীয়রা।

 

অপরিকল্পিত নগরায়ন-শিল্পায়ন, পুকুর-জলাশয় ভরাট ও যত্রতত্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ বসতবাড়ি গড়ে উঠায় উপজেলায় প্রতিনিয়ত কমছে জলাধার। ফলে দুর্ঘটনাকালীন ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি চলাচলে যেমন প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হচ্ছে, ঠিক তেমনিভাবে অগ্নিনির্বাপণে সংকট তৈরি হচ্ছে।

 

সমবায় মার্কেটের চৌধুরী ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড ক্রোকারিজ সাইকেল মার্টের স্বত্বাধিকারী মো. আবুল হাসেম চৌধুরী জানান, পাশাপাশি বহুতল মার্কেট ও দোকানের মাঝে সুবিধাজনক গলিপথ সংরক্ষিত রাখা খুবই প্রয়োজন যেন দুর্ঘটনার সময় দ্রুত ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি অনায়াসে চলাচল করতে পারে।

 

এছাড়া মার্কেটের সব বৈদ্যুতিক সুইচকে একটি নিয়ন্ত্রণ বেগারের আওতায় আনা প্রয়োজন যেন সেটি ব্যবহার করে দুর্ঘটনাকালিন একইসঙ্গে সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বিদ্যুৎসংযোগ বন্ধ করা যায়। শর্টসার্কিটের কারণে আগুন যেন সর্বত্র ছড়িয়ে পড়তে না পারে।

 

সাম্প্রতিক সময়ে উপজেলার কয়েকটি স্থানে বড় ধরনের অগ্নিদুর্ঘটনার ফলে প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সব সেক্টরই নড়েচড়ে বসে। বিশেষ করে বিএম কন্টেইনার ডিপো, তুলার গুদাম ও ৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর দিদারুল আলম অ্যাপোলোর মালিকানাধিন কলেজ রোডের অ্যাপোলো শপিং সেন্টারে কয়েক দফা অগ্নিকান্ড হয়। পৌরসদরের বিভিন্ন মার্কেট ও বিপণিবিতানগুলোর অগ্নি প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা না থাকায় ঝুঁকির বিষয়টি বেশ আলোচনায় আসে।

 

অগ্নিকান্ডের এসব ঘটনা উপজেলার গন্ডি অতিক্রম করে দেশব্যাপী বেশ হইচই পড়ে যায়। বিশেষ করে ২০২২ সালের ৪ জুন মধ্যরাতে সোনাইছড়ি ইউনিয়নস্থ বিএম ডিপো ও এ বছর বড় কুমিরায় তুলার গুদামের অগ্নিকান্ডের ঘটনায় ঝুঁকির বিষয়টি যথেষ্ট গুরুত্ব পায়। এসব ঘটনার পাশাপাশি বিশ্ব জিৎ সিংহের লেপ-তোষকের দোকানে কয়েক দফায় অগ্নিকান্ড সহ পৌরসদরের বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকার বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত ব্যবসায়ীরা।

 

সব মিলিয়ে অগ্নিঝুঁকি কমিয়ে আনতে প্রশাসন ও ব্যবসায়ী কমিটির তৎপরতা বাড়ানো জরুরি হয়ে পড়েছে। মার্কেট ও বিপণিবিতানগুলোর অগ্নিঝুঁকি নিয়ন্ত্রণের সক্ষমতা বাড়াতে সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও ব্যবসায়ী কর্তৃপক্ষের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা অপরিহার্য হয়ে পড়েছে।

 

ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিজস্ব অগ্নিপ্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলার পাশাপাশি বহুতল ভবন নির্মাণ পূর্ববর্তী সতর্কতা প্রয়োজন। এ বিষয়ে সীতাকুন্ড পৌরসদর ব্যবসায়ী ও দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. রেজাউল করিম বাহার বলেন প্রশাসন, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সহায়তায় ব্যবসায়ীদের অগ্নিপ্রতিরোধের নিজস্ব ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।

 

সাম্প্রতিক দুর্ঘটনাগুলোতে ব্যবসায়ীরাও ঝুঁকির বিষয়টি গুরুত্ব অনুধাবন করছেন। বাজারে অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কোন গলি নেই, কিংবা থাকলেও অনেকটা সরু। তাতে ফায়ার সার্ভিসের গাড়িগুলো চলাচলের অনুপযোগী। তিনি আরো বলেন, পর্যায়ক্রমে ব্যবসায়ীরা নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সক্ষমতা আরো বাড়ানোর উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারবে।

 

উপজেলা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মো. নুরুল আলম দুলাল বলেন, সীতাকুন্ড বাজারে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। যেকোনো কারণে অগ্নিকান্ড ঘটলে প্রথমেই প্রয়োজন হয় পানির। পৌরবাজার ও পাশের মার্কেটগুলোর জন্য লালদীঘি ও থানা সংলগ্ন দীঘির পানি ছাড়া বিকল্প ব্যবস্থা নেই। অথচ সেই দীঘিগুলোর পাড় ঘেঁষেই গড়ে উঠেছে দোকান-পাটসহ বহুতল মার্কেট। ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি পানি বহন করে যাতায়াত করার মতো নেই সুব্যবস্থা।

 

তিনি জানান, পৌরসদরের কলেজ রোড এবং পুরাতন ডিটি রোডে যত্রতত্র সিএনজি অটোরিকশাসহ ভাসমান ব্যবসায়ীদের ভ্যানগাড়িতে প্রতিনিয়ত যানজট লেগেই থাকে। ফলে দুর্ঘটনাকালিন সময়ে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি গন্তব্যে পৌঁছতে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়।

 

ভোরের আকাশ/নি