logo
আপডেট : ৩ আগস্ট, ২০২৩ ১১:৫৬
সম্পাদকীয়
ওষুধের কৃত্রিম সংকট কাম্য নয়

ওষুধের কৃত্রিম সংকট কাম্য নয়

ডেঙ্গু প্রাণঘাতীও হয়ে উঠছে। প্রতিদিন প্রাণ হারাচ্ছে মানুষ। এ রোগের সঙ্গে সঙ্গে প্যারাসিটামল জাতীয় ট্যাবলেট ও সিরাপের চাহিদা ব্যাপক বেড়ে গেছে। গ্লুকোজ স্যালাইনেরও একই অবস্থা। এ ছাড়া ঘরে ঘরে জ্বর, সর্দি ও ঠান্ডাজনিত রোগী বৃদ্ধি পাওয়ায় প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধের চাহিদা স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েকগুণ বেড়েছে।

 

ঢাকার পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন এলাকায় এসব ওষুধ সংকটের খবর গণমাধ্যমে আসছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রয়োজনীয় ওষুধের সংকট উদ্বেগজনক। বহুল প্রচলিত ব্র্যান্ডের প্যারাসিটামল ওষুধের সরবরাহ নেই। কোম্পানির প্রতিনিধিরা চাহিদা অনুসারে ওষুধ দিচ্ছেন না।

 

অন্যদিকে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা বলছেন, হঠাৎ করে প্যারাসিটামল ও স্যালাইন জাতীয় ওষুধের চাহিদা বেড়ে যাবে, তা আগে থেকে বোঝা যায়নি। ফলে উৎপাদন ও বাজারজাতকরণে বড় ধরনের ধাক্কা এসেছে। নাপা, নাপা এক্সট্রা, এইচ প্লাস, নাপা সিরাপ ও জিংক ট্যাবলেটসহ প্যারাসিটামল জাতীয় কয়েকটি কোম্পানির ওষুধের সংকট দেখা দিয়েছে। এ দুঃসময়ে ওষুধ না পেয়ে ভোগান্তিতে পড়েছে সাধারণ মানুষ। চাহিদার সঙ্গে বেড়েছে প্রয়োজনীয় ট্যাবলেটের দাম।

 

চট্টগ্রাম, পটুয়াখালী, রংপুর অঞ্চলের দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, লালমনিরহাটসহ বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি হয়েছে। অনেক জায়গায় ফার্মেসিতে ওষুধ না পেয়ে রোগী ও তাদের স্বজনরা হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরছেন। আবার কোথাও কৃত্রিম সংকট তৈরির অভিযোগ মিলছে ফার্মেসি মালিকদের বিরুদ্ধে।

 

ক্রেতাদের অভিযোগ, ঘরে ঘরে জ্বর-সর্দি বেড়ে যাওয়ায় লাভের আশায় ফার্মেসি মালিকরা এই কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে সাধারণ মানুষকে দুর্ভোগে ফেলেছেন। বিক্রেতারা বলছেন, চাহিদার তুলনায় কোম্পানিগুলো আমাদের ওষুধ সরবরাহ করতে পারছে না। বিশেষ করে নাপা ট্যাবলেট, নাপা সিরাপ, এইচ ট্যাবলেট ও এইচ সিরাপের চাহিদা অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় কয়েক গুণ বেড়ে গেছে। চাহিদার তুলনায় ওষুধের সরবরাহ কম থাকায় সংকট দেখা দিয়েছে।

 

এ ছাড়া অনেক মানুষ অপ্রয়োজনে আগে থেকেই এসব ওষুধ ঘরে মজুত রাখছেন। এ প্রবণতাকেও সংকটের জন্য দায়ী করছেন তারা। ওষুধ কোনো বিলাসী ভোগ্যপণ্য নয়। এর ওপর মানুষের জীবন-মরণ নির্ভর করে থাকে। এ ক্ষেত্রে ক্রেতার স্বার্থ রক্ষা করাই অনেক বেশি জরুরি। ওষুধের মূল্য বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হিসেবে কোম্পানিগুলোর উচ্চাভিলাষী বিপণন নীতি ও অধিক মুনাফা করার প্রবণতাকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা।

 

ওষুধ কোম্পানিগুলোর অতি মুনাফা প্রবণতার বলি হচ্ছে সাধারণ মানুষ, এটি অনৈতিক। সরকারকে অবিলম্বে এদিকে দৃষ্টি দিতে হবে। কৃত্রিম সংকট সৃষ্টিকারী অসাধু ব্যবসায়ীদের এই মনোভাব অমানবিক। জীবন রক্ষাকারী ওষুধের সরবরাহ চালু রাখা জরুরি। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন বলেই প্রত্যাশা।

 

উদ্বেগের বিষয়, ওষুধের দাম নিয়ন্ত্রণে দেশে তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই। কার্যত প্রায় গোটা ওষুধের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে ওষুধ শিল্প মালিক সমিতি। সরকারের আইনের দুর্বলতার কারণেই ওষুধের দাম নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না। এ জন্য আইন সংশোধন করা প্রয়োজন। এ সময়ে কেউ যদি ওষুধের সংকট তৈরি করে বা বেশি দাম নেয়, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।

 

শুধু তা-ই নয়, অভিযোগ পেলে সেখানে অভিযান পরিচালনা করতে হবে।

 

ভোরের আকাশ/নি