স্বাধীনতার বহু আগে থেকে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ষড়যন্ত্র শুরু। ক্রমেই তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ঘনীভূত হতে থাকে। পাকিস্তান ছাড়াও মোড়ল কিছু রাষ্ট্র এশিয়ার একটি নয়া দেশের উত্থানকে, ব্যক্তি শেখ মুজিবুর রহমানের বিশ্বনেতা হওয়ার সম্ভাবনাকে ইতিবাচকভাবে দেখছে না। এমন শঙ্কার কথা জানিয়ে একাধিক উৎস থেকে সাবধান হওয়ার পরামর্শ এসেছিল বুঙ্গবন্ধুর কাছে।
কিন্তু যে দেশ ও জনতার জন্য সারাজীবন উৎসর্গ করেছেন, তাদের ওপর জাতির পিতার ছিল অগাধ স্নেহ আর বিশ্বাস। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার ষড়যন্ত্র শুরু হয় স্বাধীনতার বহু আগে থেকেই। ’৭২-এর ১০ জানুয়ারি পাকিস্তানের বন্দিদশা থেকে ফিরেই বঙ্গবন্ধু সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশ পুনর্গঠনে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন।
কেবল দেশেই নয়, বিশ্ব প্ল্যাটফরমে জনপ্রিয় হয়ে উঠছেন বাংলার মহানায়ক শেখ মুজিবুর রহমান। এদিকে বসে নেই পরাজিত শক্তি। আবারো জোট বাঁধছে স্বাধীনতার বিপক্ষীয়রা। সঙ্গে যোগ দেয় ক্ষমতালোভী একটি শ্রেণি। শুরু হয় নানা অপপ্রচার। কিন্তু জাতির পিতার জনপ্রিয়তায় এতটুকু ফাটল ধরাতে পারেনি। আর তাই তারা বেছে নেয় সহিংসতার পথ।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে হত্যা-ষড়যন্ত্রের বিষয়ে অনেক আগেই সতর্কবার্তা দিয়েছিলেন তৎকালীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। ’৭৪-এর মে মাসে ৫ দিন ভারত সফরে বঙ্গবন্ধুকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের খবর জানিয়ে তাকে সতর্ক করেছিলেন। বন্ধু কিউবার প্রেসিডেন্ট ফিদেল ক্যাস্ত্রো ১৯৭৩ সালের সেপ্টেম্বরে আলজেরিয়ায় জোট নিরপেক্ষ সম্মেলনে যোগ দেয়ার সময় সাবধান করেছিলেন।
প্রতিউত্তরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বলেছিলেন, ‘পরিণতি যাই হোক, কোনো আপস হবে না।’ শেখ মুজিব প্রায়ই সঙ্গীদের বলতেন, ‘একটি বুলেট তাড়া করে ফিরছে’। কিন্তু তিনি মৃত্যুভয়ে ভীত ছিলেন না। ‘আমার জনগণ আমাকে ভালোবাসে’। এ কথাটি মন্ত্রের মতো বিশ্বাস করতেন। রাজনৈতিক সহচররাও একাধিকবার সতর্ক করেছিলেন বঙ্গবন্ধুকে। সাবধানবার্তা উচ্চারণের পরও বঙ্গবন্ধু ছিলেন অবিচল।
১৪ আগস্ট রাতে বঙ্গবন্ধু সদনের আশপাশে সেনা মহড়ার আভাস দেখে উদ্বেগের কথাও জানিয়েছিলেন তরুণ মুক্তিযোদ্ধা বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী। জাতির পিতার মৃত্যুতে সারা বিশ্বের শোষিত মানুষ হারায় তাদের একজন মহান নেতাকে।
ভোরের আকাশ/নি