বরিশাল নগরীর প্রাণকেন্দ্র থেকে শুরু করে অলিগলিতে ঢেউ খেলছে পানি। তবে সেই ঢেউ কোনো জলযানের গতির কারণে নয়, স্থলযানের গতিতে। আর সেই হাঁটুসমান পানি পেরিয়ে নগরবাসীকে জরুরি কাজ সারতে মারাত্মক দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। পানির কারণে কাজ হারিয়ে বেকার বসে থাকা মানুষগুলো পরিবার-পরিজন নিয়ে পড়েছেন বিপাকে। তবে এ পানির জন্য ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও খালে পানি প্রবাহ না থাকাকেই দায়ী করছেন নগরবাসী।
রিকশাচালক জয়নাল জানান, সোমবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত নগরীর বিভিন্ন এলাকায় যাত্রী নিয়ে গিয়েছেন। কিন্তু একটি সড়কও পাননি যেখানে পানি নেই। সেই পানির মধ্যেই যাত্রীদের নির্ধারিত স্থানে পৌঁছে দিয়েছেন। আর এ পানি ঠেলে রিকশা চালানোর অভ্যাস বহু বছরের। এ কারণে ঘরে বসে না থেকে ইঞ্জিনচালিত রিকশা নিয়ে নেমে পড়েছেন। তবে এ দুর্ভোগ কবে শেষ হবে এ প্রশ্নের জবাব খুঁজছেন তিনি। বটতলা সড়ক এলাকায় জাল নিয়ে নেমেছেন দিনমজুর রফিক।
তিনি জানান, দৈনিক শ্রম বিক্রি করে যা আয় করেন তা দিয়ে তার সংসার চলে। কিন্তু আজ সর্বত্র পানি উঠে যাওয়ায় কেউ ডাকেনি। আর ঘরেও তেমন কিছু নেই। এ কারণে ছোট শিশু সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে সড়কে জাল মারছেন। এর পূর্বেও একইভাবে তার জাল মেরে মাছ ধরার অভিজ্ঞতা রয়েছে। বিভিন্ন দীঘি, পুকুর ও ডোবার পানিতে মাছ সড়কে চলে আসে। আর সেভাবে জাল মারতে পারলে মাছ ওঠে। সেই মাছ দিয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে দুপুর ও রাতের খাবার সারার ইচ্ছে রয়েছে তার।
নগরীর প্রাণকেন্দ্র সদর রোডের বই ব্যবসায়ী বুক ভিলার মালিক রুপন বলেন, সেই পৌরসভা থেকে ব্যবসা শুরু। এরপর সিটি করপোরেশন। সে রকম কোনো উন্নতি হয়েছে বলে মনে হয় না। তা না হলে একটি বিভাগীয় শহর হয়েও বছরের পর বছর ধরে একই সমস্যায় আটকে আছি আমরা। অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণেই সামান্য বৃষ্টি হলেই সকল সড়ক পানিতে সয়লাব হয়ে যাচ্ছে। যারাই দায়িত্বে আসছেন তারাই যথারীতি আশ্বাসের বাণী শুনিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু আমরা সেই পানিতেই ডুবে থাকছি। এ কারণে এখন আর কারো কাছে কেউ গিয়ে সমস্যা তুলে ধরেন না নগরবাসী।
তিনি আরো বলেন, রাত থেকে বর্ষণ শুরু হয়েছে। এরপর ড্রেনেজের কারণে পানিতে তলিয়ে গেছে সদর রোড। এর সঙ্গে পানি উঠেছে তার দোকানেও। এতে প্রতি বছর তার দেড় লাখ টাকার ঊর্ধ্বে ক্ষতি হচ্ছে। সেই ক্ষতি পোষাতে দ্রুত দোকানে এসে বই সরিয়ে কোনোভাবে পানি প্রবেশ আটকানোর চেষ্টা করছেন।
বটতলা বাজারের চাল ব্যবসায়ী আব্দুর রহমান বলেন, তার ২০ বস্তা চাল ভিজে গেছে। তবে এত দ্রুত দোকানের মধ্যে পানি প্রবেশ করবে তা তিনি আঁচ করতে পারেননি। দোকানে এসে দ্রুত চালের বস্তা সরিয়েছেন। কিন্তু শুকানোর কোনো জায়গা পাচ্ছেন না। গেল ১৫ বছর ধরে এভাবে ব্যবসা চালিয়ে আসার অনুযোগ করলেন তিনি।
এ ব্যবসায়ী প্রশ্ন রাখেন, আমরা কি কোনো বিভাগীয় শহরে নাকি জেলা উপজেলায় বাস করি। এটিকে বিভাগীয় শহর বলা ঠিক হবে না। কারণ একটি বিভাগীয় শহরের বাসিন্দারা যে সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করেন আমরা তার সামান্যটুকুও পাই না। তাহলে বিভাগীয় শহর হয়ে লাভ হলো কী? লাভ হয়েছে সরকারের। কারণ সরকার নগরবাসীর কাছ থেকে ভ্যাট-ট্যাক্স আদায় করছেন। কিন্তু সেই অনুপাতে কোনো সুযোগ সুবিধা পাচ্ছি না।
এ ব্যাপারে বিদায়ী সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ বিভিন্ন সভা-সেমিনারে অকপটে স্বীকার করেছেন তার আমলে সরকার থেকে কোনো বরাদ্দ দেয়া হয়নি। আর তা না পাওয়ার কারণে জলাবদ্ধতায় তেমন কোনো কাজ হয়নি। তবে জলাবদ্ধতা নিরসনে ড্রেনেজ ব্যবস্থা সচল রাখতে পরিষ্কারের ব্যবস্থা করেন।
নবনির্বাচিত সিটি মেয়র আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত জানিয়েছেন, বরিশাল সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব নেয়ার পর তার প্রথম কাজ হবে জলাবদ্ধতা নিরসন। এ কাজে তাকে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন স্থানীয় এমপি প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম। তারা একইসঙ্গে এ জলাবদ্ধতা নিরসন করবেন। এ জন্য পরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা থেকে শুরু করে খাল সংস্কার এবং নদীর পানি যাতে শহরে প্রবেশ করতে না পারে সে ব্যবস্থা করা হবে।
ভোরের আকাশ/নি