logo
আপডেট : ১৩ আগস্ট, ২০২৩ ১০:৫৯
সম্পাদকীয়
ছাত্র আন্দোলনে ডাকসুর অর্জন ফিরে আসুক ঐতিহ্য

ছাত্র আন্দোলনে ডাকসুর অর্জন ফিরে আসুক ঐতিহ্য

ছাত্র আন্দোলনের ইতিহাসে ডাকসুর কী অর্জন কমবেশি সবাই জানেন। সেই বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন থেকে নব্বই পর্যন্ত তরুণ নেতৃত্বের কী অসাধারণ অবদান রয়েছে ডাকসুর মাধ্যমে, তা অনেকেরই জানা। আজ জাতীয় পর্যায়ে অনেক নেতৃত্বই আছেন, যারা ডাকসুতে অসামান্য অবদান রেখেছেন। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীর, বিভিন্ন সমস্যার ক্ষেত্রে তাদের অবদান চিরস্মরণীয়।

 

আজকের তোফায়েল আহমেদ, রাশেদ খান মেনন, মতিয়া চৌধুরী, নুরুল ইসলাম নাহিদ, আ স ম আবদুর রব, মাহমুদুর রহমান মান্নাসহ অনেকেই ছিলেন ডাকসুর জননন্দিত নেতা। ঢাবি কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদকে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সংসদ বলা হয়। গণতান্ত্রিক চেতনা ও স্বাধিকার আন্দোলনের অন্যতম সূতিকাগার হলো এই ছাত্র সংসদ।

 

৫২-এর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে পরবর্তী সময়ে ৬২-এর শিক্ষা আন্দোলন, ৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান, ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীন বাংলাদেশে স্বৈরাচার ও সামরিকতন্ত্রের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে গণতান্ত্রিক কাঠামোর বাংলাদেশ গঠনে সাহায্য করেছে ডাকসুই। এই নেতাদের সাহসী ও বলিষ্ঠ উদ্যোগেই ১৯৭১ সালের ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহাসিক বটতলায় প্রথম স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করা হয়।

 

২৯ বছরের অচলাবস্থা ভেঙে ২০১৯ সালের ১১ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। নির্বাচনে ২৫টি পদের মধ্যে ২৩টিতেই নির্বাচিত হয় বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সমর্থিত সম্মিলিত শিক্ষার্থী সংসদের র্প্রার্থীরা। অন্যদিকে ভিপি এবং সমাজসেবাবিষয়ক সম্পাদকের পদে জয়ী হয় বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ মনোনীত প্রার্থীরা।

 

কিন্তু তারপর আর নির্বাচনের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা হয়নি। কেন হয়নি? বিষয়টি রীতিমতো গবেষণার বিষয়। প্রকাশ্যে যে যাই বলুক, আসলে ডাকসুর নেতারা সরকারি নেতাদের জন্য এক ধরনের হুমকি। অনেকেই মনে করেন দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনুকূলে না থাকলে, সরকারের প্রতি সাধারণ মানুষের সমর্থন কমতে থাকলে, তার প্রভাব ছাত্রদের মধ্যেও পড়ে।

 

আবার সরকারি দলের ছাত্র সংগঠনের একচ্ছত্র আধিপত্য যাতে কোনোভাবেই ক্ষুণ্ণ না হয়, সে কারণে ছাত্রনেতাদের রাখা হয় ‘হাঁদারাম’ হিসেবে। সরকারের প্রয়োজনে বা জাতীয় নেতৃত্বের দরকারি মুহূর্তেই তাদের নামানো হয় রাস্তায়। এ ছাড়া নিজস্ব চৌহদ্দির মধ্যেই সময় কাটে তাদের। সুদীর্ঘ সময় ডাকসুকে নিষ্ক্রিয় রেখে, মূলত ছাত্র আন্দোলনের স্পিরিটকেই স্তব্ধ করা হয়েছে। বর্তমানে এমন একটি সময় আমরা উপস্থিত হয়েছি, যখন ডাকসুই নিতে পারত দেশের রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানে অগ্রণী ভূমিকা। কিন্তু তা হওয়ার নয়, বাস্তবতা ভিন্ন।

 

শুক্রবার দেশ একটি দৈনিকে প্রকাশিত ‘পুরনো চক্করে ডাকসু নির্বাচন’ প্রতিবেদনে বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হচ্ছে ডাকসু শিক্ষার্থীদের কথা বলার একটি প্ল্যাটফরম। তারা বিশ্ববিদ্যালয় ও ছাত্রাবাসের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে সেখানে কথা বলতে পারে। নতুন করে নির্বাচন না হওয়ায় শিক্ষার্থীদের কথা বলার জায়গা আবারও সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে।

 

সরকারের সংকেত না পাওয়া, সরকারপক্ষের ছাত্র সংগঠনকে সুবিধা দেওয়া এবং ক্যাম্পাসে পরিবেশ বিঘ্নিত হওয়ার শঙ্কায় ডাকসু নির্বাচন করতে পারছে না বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কেউ কেউ এমন অভিযোগ করছেন। প্রশাসনের বিরুদ্ধে সরকার-ঘনিষ্ঠতার অভিযোগও উঠছে। তবে ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়মিত হওয়ার পক্ষেই মত দিয়েছেন ঢাবি শিক্ষক সমিতির নেতারা।

 

এর মানে কী? ছাত্ররা কি নির্বাচন চাইছে না! বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ছাত্র সংগঠনের নেতারা তো নির্বাচনের পক্ষেই বলছেন? প্রতিবেদনে তেমনটিই উল্লেখ করা হয়েছে! তাহলে মূল সমস্যা কোথায়? আসলে জাতীয় রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠন হিসেবে, লেজুড়বৃত্তি বন্ধ করতে না পারলে কখনোই ছাত্র আন্দোলনের গৌরবজনক অধ্যায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়।

 

অনেকেই দোহাই দেবেন, শিক্ষাঙ্গনে অস্থির রাজনৈতিক পরিবেশের। এ দোহাই চলবেই। তবে ছাত্ররাজনীতিতে গৌরবময় সৌহার্দ্যপূর্ণ অধ্যায় ফিরিয়ে আনা ছাড়া কখনোই নিয়মিতভাবে ডাকসু নির্বাচন সম্ভব নয়।

 

ভোরের আকাশ/নি