একসময়ের খরস্রোতা হিসনা নদী এখন অস্বিত্ব সংকটে ভুগছে। নদীর জায়গা দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে দোকানপাটসহ বহুতল ভবন। কোথাও কোথাও বাঁধ দিয়ে নদীতে মাছও চাষ করা হচ্ছে। আবার কেউ কেউ নদীর বুকে ধানসহ বিভিন্ন ফসলের চাষাবাদ করছেন। দখল করে দফায় দফায় নদীর গতিপথ পরিবর্তন করা হচ্ছে। ফলে একসময়ের খরস্রোতা হিসনা এখন পরিণত হয়েছে মরা খালে। এতে পরিবেশসহ জীববৈচিত্র্য পড়েছে হুমকির মুখে।
কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা ও দৌলতপুর উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হিসনার উৎপত্তি পদ্মা থেকে। শেষ হয়েছে গাংনী উপজেলার মাথাভাঙ্গা নদীতে। নদীটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৫৫ কিলোমিটার। একসময় যে নদী দিয়ে চলত পালতোলা নৌকাসহ বড় বড় জাহাজ, সেই নদীর অনেক জায়গায় এখন পা ভেজানোর পানিও নেই। নদীর ভেতরেই চলছে ধানসহ বিভিন্ন ফসলের চাষাবাদ।
প্রভাবশালীরা নদীর জায়গা দখল করে গড়ে তুলেছেন দোকানপাটসহ বহুতল ভবন। পানির প্রবাহ না থাকায় এখন দেখে আর বোঝার উপায় নেই একসময় বড় বড় নৌকা, জাহাজ চলত এই নদীতে। বর্তমানে বিভিন্ন এলাকায় মাছ চাষের জন্য লিজ নিয়ে বাঁধ দিয়ে নদী দখল করে নদীটিকে পুকুরে পরিণত করা হয়েছে।
এ নিয়ে রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সিরাজ মন্ডল বলেন, আমরা দেখেছি একসময় হিসনা নদী ছিল খুবই প্রাণবন্ত। নদীতে নিয়মিত নৌকা চলত। নৌকা দিয়ে লোকজন চলাচল করত। কিন্তু মাছ চাষের নামে লিজ নিয়ে নদী দখল হয়ে গেছে। দখলদাররা জায়গায় জায়গায় বাঁধ দিয়ে নদীতে মাছ চাষ করছে।
ভেড়ামারা অংশে নদীর পাড়ে গিয়ে দেখা যায়, হিসনা ব্রিজ থেকে কাঠেরপুল পর্যন্ত নদীর পাড়ের কিছু বসবাসকারী পরিবার ও প্রতিষ্ঠান নদীর পাড়ে গাইড ওয়াল দিয়ে মাটি-বালু ভরাট করে বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে তুলেছেন।
কাঠের পুলের জামাল হোসেন নামে একজন বাসিন্দা বলেন, আমি নিজে এই নদীতে পাল তোলা বড় বড় পণ্যবাহী নৌকা চলতে দেখেছি। সে সময় স্রোতের কারণে উজানে নৌকা চালানো কঠিন ছিল। বড় বড় পাট বোঝায় নৌকা এই নদী দিয়ে পদ্মা নদী হয়ে কলকাতাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় যেত। চলাচল ও পণ্য পরিবহনের অন্যতম মাধ্যম ছিল এই নদীটি।
নদী দখল হয়ে যাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে ভেড়ামারা পৌরসভার মেয়র আনোয়ারুল কবির টুটুল জানান, হিসনা নদীর যতটুকু অংশ পৌর এলাকার মধ্যে আছে ততটুকু দখলমুক্ত করার জন্য ভেড়ামারা পৌরসভার পক্ষ থেকে নদী গবেষণা ইনস্টিটিউটের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে। তাদের চাহিদা মতো নথিপত্র প্রদান করা হয়েছে। যথাযথ কর্তৃপক্ষের সহায়তায় হিসনা নদীর ভেড়ামারা পৌরসভার মধ্যের অংশটুকু অবৈধ দখলদার মুক্ত করা হবে।
কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাশিদুর রহমান জানান, কুষ্টিয়ার দৌলতপুর ও ভেড়ামারা উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত নদীটির অনেক স্থানই প্রভাবশালীরা দখল করে চাষাবাদসহ বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে তুলেছেন। দখলদারের প্রকৃত সংখ্যা কত তা বলা মুশকিল। আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে নদীটি সার্ভে করে দখলদারের নাম-পরিচয়সহ প্রকৃত সংখ্যা নির্ণয় করে তালিকা প্রস্তুতের কাজে হাত দিয়েছি। তিনি আরো জানান, তালিকা প্রস্তুত হওয়ার পর দখলদারদের উচ্ছেদ করার জন্য অভিযান শুরু হবে।
পরিবেশকর্মী খলিলুর রহমান মজু বলেন, এভাবে দিনের পর দিন প্রভাবশালীরা নদীটিকে গিলে খাবে, এটা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। বর্তমান সরকারের কাছে আমাদের জোর দাবি, নদীটিকে অবিলম্বে দখলমুক্ত করে খননের উদ্যোগ গ্রহণ করা হোক।
ভোরের আকাশ/নি