logo
আপডেট : ১৬ আগস্ট, ২০২৩ ১৫:৩০
বৃষ্টির দিনে মেঘকন্যা সাজেক ভ্যালি ভ্রমণ
মো. ইব্রাহিম শেখ, চট্টগ্রাম ব্যুরো

বৃষ্টির দিনে মেঘকন্যা সাজেক ভ্যালি ভ্রমণ

সাজেক ভ্যালি

বর্ষায় পাহাড়ের রূপ বদলায়। তাই বৃষ্টি-বাদল দিনেও পাহাড়ে সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থান নিঃসন্দেহে সাজেক। যারা অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় মানুষ তারা ছুটে যান গভীরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ঝরনা, কেওক্রাডংয়ের চূড়া, বগা লেকে। তবে, শহুরে মানুষের নিরাপদ ভ্রমণের জন্য সাজেকই সেরা। সবুজ পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে ভাসমান সাদা মেঘের ছোঁয়া পেতে এই বর্ষায় মানুষ ছুটছেন মেঘকন্যা সাজেকে।

 

ভারতের মিজোরাম রাজ্যের সীমান্তবর্তী চোখ জুড়ানো সৌন্দর্যের এ সাজেক ভ্যালি পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলায় অবস্থিত। সমতল থেকে প্রায় ৩ হাজার ফুট উঁচু পাহাড়ের চূড়ায় সাজেক হলো বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ইউনিয়ন। এর আয়তন ৭০২ বর্গমাইল। তবে, খাগড়াছড়ি হয়ে যাওয়ার পথ সহজ। এমনকি সাজেকে থাকার জন্য বেশ ভালো ব্যবস্থা রয়েছে।

 

শুভ্র মেঘের ভেলায় হারিয়ে যেতে, আকাশের মেঘেদের সঙ্গে কথা বলতে হারিয়ে যেতে পারেন মেঘের রাজ্যে সাজেকে। মেঘের ভেলায় ভেসে যেতে চাইলে অপরূপ সৌন্দর্যে ঘেরা এই জায়গাটি অতুলনীয়। সাজেকে গেলে সর্বত্র মেঘ পাহাড় আর শুধু সবুজ আর সবুজ দেখতে পাবেন। সাজেক ভ্যালি থেকেই সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখা যায়। সাজেকের রুইলুই পাড়া যেখান থেকে ট্রেকিং করে কংলাক পাহাড়ে যাওয়া যায়। কংলাক হচ্ছে সাজেক ভ্যালির সর্বোচ্চ চূড়া। কংলাকে যাবার পথে মিজোরাম সীমান্তের বড় বড় পাহাড়, আদিবাসীদের জীবনযাপন ও চারদিকে মেঘের আনাগোনা দেখা যায়। এ ছাড়াও উপভোগ করবেন সাজেকের সকাল, দুপুর, বিকাল, সন্ধ্যা এবং রাতসহ সব বেলার এক ভিন্ন ভিন্ন সৌন্দর্য।

 

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে উন্নত সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা, আধুনিক পর্যটনের আদলে সাজেককে সাজানো হয়েছে। সাজেককে জনসাধারণের সুবিধার্থে আরো দৃষ্টিনন্দন করতে কাজ করছে সেনাবাহিনী। পাশাপাশি উন্নত জীবনযাত্রার সঙ্গে সংযুক্ত হচ্ছে সেখানে বসবাসরত পাংখোয়া, লুসাই ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর মানুষ। পর্যটনসংশ্লিষ্ট নানা কর্মসংস্থান ও আর্থিক কাজে জড়িত থেকে তাদের জীবনমানেরও উন্নতি ঘটেছে। তবে, সাজেকে যত্রতত্র গড়ে উঠছে রিসোর্ট, হোটেল বা পাকা স্থাপনা। কোনো পরিকল্পনা না থাকায় তা পাহাড়ের সৌন্দর্য নষ্ট করছে।

 

সাজেক বিলাস করবেন যেভাবে
সাজেক পৌঁছে খাওয়া-দাওয়া করার পর দীর্ঘ যাত্রার শেষে আপনাকে একটু বিশ্রাম নিতেই হবে। এ ছাড়া সাজেকের কাঠফাটা দুপুরের রোদে না ঘোরাঘুরি করে রোদ পড়ার অপেক্ষা করাই ভালো। বিকেলে জিপে করে আপনি ঘুরে আসতে পারেন সাজেক ভ্যালির আরো ভেতরে। সেখানে একটু উঁচু টিলায় উঠলেই উপভোগ করতে পারবেন সূর্যাস্ত। সাজেকের সন্ধ্যা নামে অপরূপ এক সৌন্দর্য নিয়ে। দেখবেন মেঘমুক্ত নীলাকাশ একটু একটু করে অন্ধকারে আচ্ছন্ন হয়ে যাচ্ছে আর মিটিমিটি করে জ্বলে উঠছে একটি দুটি করে তারা। কিছুক্ষণের মধ্যে একটি দুটি থেকে সহস্র তারা আপনার চোখের সামনে জ্বলজ্বল করে উঠবে।

 

যেভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ি রুটে শ্যামলী, হানিফ, এস আলম, সৌদিয়া ও শান্তি পরিবহনের বাস চলাচল করে। গাবতলী, কলাবাগানসহ ঢাকা শহরের বিভিন্ন প্রান্তে রয়েছে পরিবহনগুলোর কাউন্টার। ঢাকা থেকে বাস ছেড়ে কুমিল্লা, ফেনী হয়ে চট্টগ্রামের মিরসরাই দিয়ে খাগড়াছড়ি শহরে পৌঁছায়। এতে সময় লাগে ৮ ঘণ্টার মতো। সবুজ পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে ভাসমান সাদা মেঘের ছোঁয়া পেতে এই বর্ষায় মানুষ ছুটে আসছেন মেঘকন্যা সাজেকে খাগড়াছড়ি থেকে সাজেকে যেতে হবে খোলা জিপে করে, যা চান্দের গাড়ি নামেই পরিচিত। দুই দিনের জন্য ভাড়া করলে আপনাকে গুনতে হবে ৬৫০০-১০,০০০ টাকা। চান্দের গাড়িতে আসন সংখ্যা ১২। সাজেক যেতে প্রথমে যেতে হবে দীঘিনালায়। দীঘিনালা নেমে আধা ঘণ্টার জন্য ঘুরে আসতে পারেন হাজাছড়া ঝর্ণা থেকে। সঙ্গে সেরে নিতে পারেন গোসলটাও। কারণ সাজেকে পানির বড্ড অভাব। তবে চিন্তার কিছু নেই। গোসল ও অন্যান্য কাজের জন্য দরকারি পানি প্রতিদিন ট্রাকে করে পৌঁছে যায় সাজেকে। তবে পানি ব্যবহারে সাজেকে আপনাকে মিতব্যয়ী হতে হবে। খাগড়াছড়ি থেকে দীঘিনালার দূরত্ব ২৩ কিলোমিটার। দীঘিনালায় একটি সেনানিবাস রয়েছে। এরপর বাকি রাস্তাটুকু আপনাকে যেতে হবে সামরিক বাহিনীর এসকোর্টে। দীঘিনালা থেকে সেনাবাহিনীর এসকর্ট শুরু হয় সকাল ১০টায়। দীঘিনালা থেকে প্রথমে যেতে হবে বাগাইহাট। সেখান থেকে মাচালং হাট হয়ে সরাসরি পৌঁছে যাবেন সাজেকে।

 

থাকার জায়গা
সাজেকে সেনাবাহিনী পরিচালিত দুটি রিসোর্ট রয়েছে। একটি সাজেক রিসোর্ট, অন্যটি রুন্ময় রিসোর্ট। সাজেক রিসোর্টে চারটি রুম রয়েছে। যেগুলোর ভাড়া ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকার মধ্যে। রুন্ময় রিসোর্টে পাঁচটি রুম রয়েছে। যেগুলোর ভাড়া সাড়ে ৪ হাজার টাকা থেকে ৫ হাজার টাকা। সাজেক ভ্যালিতে এখন ছোটবড় মিলে ৩০০-এর বেশি কটেজ, রিসোর্ট রয়েছে। এর মধ্যে আবার কিছু কিছু পাবেন তারকা মানের। এসব রিসোর্টে রুম পেতে আপনাকে আগেভাগে বুকিং নিতে হবে। এরপর মেঘপুঞ্জি, ছাউনি ইকো কুঠির, লুসাই ভিলেজসহ বেশ কিছু কটেজে প্রতি রাতে ভাড়া গুনতে হয় ৪ হাজার থেকে ৪ হাজার ৫০০ টাকা।

 

ভোরের আকাশ/মি