অধিক লাভজনক হওয়ায় মাগুরার কৃষকরা বাণিজ্যিক ভিত্তিতে গ্রীষ্মকালীন তরমুজের আবাদ শুরু করেছেন কয়েক বছর ধরে। জেলার চার উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় কৃষকরা এই তরমুজের চাষ করে অনেকেই আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। যদিও ব্যাপকভাবে এর প্রসারতা বৃদ্ধি পায়নি তবুও কৃষকদের মাঝে এই তরমুজ চাষে আগ্রহ বাড়ছে। সদর উপজেলার আমুড়িয়া গ্রামের তেমনি একজন কৃষক গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষ করেছেন ১৫ শতাংশ জমিতে।
মাগুরা সদর উপজেলার আমুড়িয়া গ্রামের ওবাইদুর রহমান। তিনি পেশায় একজন শিক্ষক। শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি কৃষি কাজেও নিয়মিত সময় দেন। আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহার করে কীভাবে অল্প জমিত অধিক ফসল ফলানো যায় এমনই চিন্তা নিয়ে এবার তিনি ৩৬ শতাংশ জমির মধ্যে ১৫ শতাংশ জমিতে এই গ্রীষ্মকালীন তরমুজের চাষ করেছেন। বাকি জমিতে তিনি চাষ করছেন বেগুন মরিচ ও লতি কচুর। সব মিলিয়ে এই ফসল উৎপাদনের জন্য তিনি ব্যয় করেছেন ৫৫ হাজার টাকার অধিক। কেবল তরমুজ বিক্রি করেই তিনি অন্তত ৪০ হাজার টাকা ঘরে তুলতে পারবেন বলে আশা করছেন।
মালচিং পদ্ধতিতে চাষকৃত এই তরমুজ ক্ষেতে তরমুজের ফলন মোটামুটি ভালো হয়েছে। ১৫ শতাংশ জমিতে চাষ করা তরমুজ গাছে প্রায় সাড়ে চারশর অধিক তরমুজ ধরেছে।
সরেজমিনে আমুড়িয়া গ্রামে গিয়ে কথা হয় ওবায়দুর রহমানের সাথে। তিনি বলেন, আমি এই চাষে নতুন, যে কারণে ক্ষেত্রে চারা লাগাতে দেরি হয়েছে। তবে এই তরমুজ গাছের জীবনকাল ১০০ দিন। সাতদিন বয়সি চারা খেতে লাগালে ২০ থেকে ২৫ দিনের মধ্যে গাছে ফুল ও ফল ধরতে শুরু করে। ফুল ধরা শুরু হলে ৭০ দিনের মধ্যে তরমুজ খাওয়ার উপযোগী হয়। এই চাষে তিনি সদর উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে সার্বিক সহযোগিতা ও পরামর্শ পেয়েছেন বলে জানান। কথা প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, যেহেতু আমি এই চাষে নতুন তাই এই চাষ সম্পর্কে আমার তেমন কোনো ধারণা ছিল না। সামান্য অভিজ্ঞতা নিয়ে এই তরমুজের চাষ শুরু করেছি। প্রথমবার মোটামুটি ফলন হয়েছে। আশা করছি, আগামীতে এই চাষ আরো বৃদ্ধি করব এবং ফলনও ভালো পাব।
এই গ্রামের কৃষক শামিম হোসেন বলেন, এই তরমুজ চাষ সম্পর্কে আমাদের তেমন কোনো ধারণাই ছিল না। আমার চাচা এই তরমুজ চাষ করেছেন দেখে কিছুটা আগ্রহী হয়েছে। আগামীতে আমরাও এটি চাষ করব।
অপর কৃষক আব্দুস সালাম বলেন, তরমুজ ক্ষেতটি দেখে আমার খুব ভালো লেগেছে। মনে হয় এটিই খুব লাভজনক চাষ। ভাবছি স্থানীয় কৃষি অফিসের সহযোগিতা নিয়ে আমিও আগামী বছর এই তরমুজের চাষ করব।
গ্রীষ্মকালীন তরমুজের বাজার দর বেশি থাকায় কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে সব ধরনের চেষ্টা করে যাচ্ছেন উপজেলা কৃষি অফিস।
উপজেলা কৃষি অফিসার মো. হুমায়ুন কবির বলেন, গ্রীষ্মকালীন তরমুজ উচ্চমূল্যের ফসল হওয়ায় কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তিরা এই চাষে সফল হতে পারে। যে কারণে সদর উপজেলা কৃষি অফিস থেকে গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষ বৃদ্ধি করা লক্ষ্যে সব ধরনের কারিগরি সহযোগিতা করা হচ্ছে কৃষকদের। এই ফসলটি কীভাবে উৎপাদন করলে এবং কোনো সময়ে কোনো আন্ত পরিচর্যা করলে কৃষকদরা এর থেকে অধিক লাভবান হতে পারবে সেজন্য আমরা কৃষকদের প্রতিনিয়তই প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়ে আসছি। জেলা কৃষি অফিসের সহায়তায় কৃষকদের মাঝে এই তরমুজ চাষের আগ্রহ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ভোরের আকাশ/মি