সপ্তাহ ব্যবধানে খুলনায় আবারো ঊর্ধ্বমুখী নিত্যপণ্যের বাজার। দাম বেড়ে গেছে প্রায় প্রতিটি পণ্যের। এতে ভোক্তারা রীতিমতো দিশেহারা। ক্রেতাদের অভিযোগ, চুলায় আগুন নেই, অথচ সবজির বাজারে আকাশছোঁয়া দাম। প্রায় সব সবজিই মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। ঈদের পর থেকেই সবজির বাজারে এমন ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা চলছে। তবে এবার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পেঁয়াজ ও রসুনও। নিয়মিত বাজার তদারকির অভাবে ব্যবসায়ীদের কাছে যেন জিম্মি হয়ে পড়েছেন তারা।
জানা গেছে, কোরবানির ঈদের পর থেকে খুলনায় প্রায় সব ধরনের সবজির চাহিদা বাড়তেই দামও বাড়তে শুরু করেছে। একই সঙ্গে বৃদ্ধি পেয়েছে পেঁয়াজ, রসুন, কাঁচামরিচসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় আরো অনেক পণ্যের দাম। ফলে সবজি কিনতে এসে মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। বাজার করতে আসা ক্রেতারা বলছেন, বছরজুড়ে কোনো না কোনো পণ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। সরকারি দলের লোকজনও অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটে থাকায় সিন্ডিকেটধারীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয় না। ফলে বছরজুড়েই নানা অজুহাতে মানুষের পকেট কাটা হচ্ছে।
জেলার বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এক সপ্তাহের ব্যবধানে সবজির দাম কেজিপ্রতি বেড়েছে অন্তত ১০ থেকে ১৫ টাকা। এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে বেড়েছে পেঁয়াজ-রসুনের দামও। মাত্র এক মাসের ব্যবধানে কেজিপ্রতি পেঁয়াজ ৩০ টাকা ও রসুনের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে ১৩০ টাকা। বাজার দর মনিটরিং ব্যবস্থা না থাকায় এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে দাবি করেছেন ভোক্তারা।
খুলনা নগরীর গল্লামারী, নিরালা বাজার ও সন্ধ্যা বাজারে মানভেদে কাঁচামরিচ ২৪০ টাকা, পেঁয়াজ ৮০ টাকা, দেশি রসুন (বড়) ২৮০ টাকা, দেশি রসুন (ছোট) ২৩০ টাকা, বেগুন ৮০ টাকা, করলা ৮০ টাকা, ঢেঁড়শ ৬০ টাকা, কাকরল ৬০ টাকা, ঝিঙে ৬০ টাকা পটল ৪০ টাকা, পেঁপে ৩০ টাকা, মিষ্টিকুমড়া ৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছিল। পাশাপাশি লালশাক ও ঘিকাঞ্চন শাক ৪০ টাকা, কাঁচাকলা প্রতি হালি ৪০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
এ ছাড়াও স্থানীয় এসব খুচরা বাজারে দেশি পেঁয়াজ ৮০ টাকা, ভারতীয় পেঁয়াজ ৬৫ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। অথচ দুই সপ্তাহ আগেও দেশি পেঁয়াজ ৫০ টাকা এবং ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৪০ টাকা কেজিতে। আবার এক সপ্তাহ আগেও প্রতিকেজি কাঁচামরিচ ১৬০ টাকা, ঝিঙে ৫০ টাকা, করলা ৭০ টাকা, ঢেঁড়শ ৪০ টাকা, আলু ৪০ টাকা, পটল ৩০ টাকা, কাকরল ৫০ টাকা, বেগুন ৬০ টাকা, মিষ্টিকুমড়া ৪০ টাকা, লালশাক ও ঘিকাঞ্চন শাক ৩০ টাকা, কাঁচাকলা প্রতি হালি ৩০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
ক্রেতাদের ভাষ্য, ব্যবসায়ীদের কারসাজি ও সিন্ডিকেটের কারণে বাজারে নিত্যপণ্যের দাম মানুষের নাগালের বাইরে। যদিও বিক্রেতারা বলছেন, বাজারে পেঁয়াজ ও রসুনের সরবরাহ কম। ফলে এসবের দাম বাড়তে শুরু করছে।
নগরীর গল্লামারী বাজার এলাকার ক্রেতা রাজিব অধিকারী বলেন, বর্তমান সবজির বাজারে আগুন। আমাদের মাছ-মাংস ও সবজি খাওয়ার দিন শেষ। সবকিছুর দাম বাড়ার কারণে আলু দিয়েই সংসার চলে আমাদের মতো নিম্ন আয়ের মানুষের। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো এই ২০ টাকার আলু গত তিন মাসে দ্বিগুণ দাম বাড়িয়ে দিয়েছে ব্যবসায়ীরা।
সবজি ও রসুন কিনতে আসা একই এলাকার বৃদ্ধ হোসেন আলী বলেন, ‘বাজান কি আর বলব, বাজারে আসলে জান-পরাণ কাঁপে আমার। প্রতিদিন নিত্যপণ্যের দাম বাড়ে। এ রকম চলতে থাকলে আমাদের মতো গরিব মানুষ বাঁচব কেমন করে।’
একই কথা জানিয়েছেন নগরীর বউবাজার এলাকার বাসিন্দা মিমি। তিনি বলেন, বাজারে আসলে মাথা গরম হয়ে যায়। প্রতিটি জিনিসের এত দাম! আমরা নিম্নমধ্যবিত্তরা কোথায় যাব বলতে পারেন? ৬০-৭০ টাকার নিচে কোনো সবজি নেই। মাছ, মাংস, ডিম চলে যাচ্ছে নাগালের বাইরে। বাচ্চাদের মুখে ভালো খাবার দেয়া এখন কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে।
বাড়তি দাম নিয়ে কথা হলে গল্লামারী বাজারের ব্যবসায়ী সালাম মোলাঙ্গী বলেন, বাজারে দেশি রসুনের সরবরাহ নেই বললেই চলে। পাশাপাশি ভারত ও চীন থেকেও আমদানি কমেছে। এতে দাম বাড়ছে। পেঁয়াজ, রসুন ও কাঁচামরিচের দামও বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা যেভাবে মাল কিনি ঠিক সেভাবে বিক্রি করার চেষ্টা করি। আমরা কাস্টমারকে কখনো ঠকাতে চাই না।
এদিকে, খুলনা বড় বাজার এলাকার মেসার্স উজ্জ্বল ব্রাদার্সে প্রতিকেজি মসুর ডাল (সরু) ১৩০ টাকা ও মসুর ডাল (মোটা) ৯০ টাকায় বিক্রি হলেও নগরীসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলের খুচরা বাজারগুলোয় মসুর ডাল (সরু) ১৬০ টাকা, মসুর ডাল (মোটা), ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এ বিষয়ে খুলনার বড় বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী মেসার্স নিউ তাজ ট্রেডিংয়ের মো. আবুল কালাম বলেন, চাহিদার তুলনায় খুলনায় পেঁয়াজের ও রসুনের আমদানি অনেক কম থাকায় দাম বাড়তি। জেলায় পেঁয়াজের চাহিদা মেটাতে প্রতিদিন অন্তত ১২ ট্রাক পেঁয়াজ প্রয়োজন। সেই তুলনায় আমদানি অনেক কম।
ভোরের আকাশ/মি