logo
আপডেট : ২০ আগস্ট, ২০২৩ ১৭:২৬
রাস্তা সংস্কার না করায় ধানের চারা লাগিয়ে অভিনব প্রতিবাদ
শেরপুর প্রতিনিধি

রাস্তা সংস্কার না করায় ধানের চারা লাগিয়ে অভিনব প্রতিবাদ

ক্যাপশন: রাস্তায় ধানের চারা লাগিয়ে প্রতিবাদ জানায় জাঙ্গালিয়াকান্দার বাসিন্দারা

দীর্ঘদিন বেহাল রাস্তার সংস্কার না করায় ক্ষোভে ধানের চারা লাগিয়ে অভিনব প্রতিবাদ জানিয়েছেন শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার বাঘবের ইউনিয়নের জাঙ্গালিয়াকান্দার বাসিন্দারা। বেহাল এই রাস্তাটির সংস্কারের কোনো উদ্যোগ গ্রহণ না করায় শুক্রবার এলাকাবাসী মিলে রাস্তায় ধানের চারা রোপণ করে অভিনব কায়দায় এই প্রতিবাদ জানান।

 

জানা যায়, ৩ কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা শুকনো মৌসুমে ধুলোবালু আর বর্ষায় কর্দমাক্ত হয়ে পড়ে। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না হওয়ায় এখন বেহাল দশায় রয়েছে আড়াই হাজার লোকের চলাচলের রাস্তাটি। জনপ্রতিনিধিরা বারবার প্রতিশ্রুতি দিলেও কাজের কাজ করেনি বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন স্থানীয়রা।

 

জাঙ্গালিয়াকান্দা গেন্দু সরকারের বাড়ি হতে খলিশাকুড়া গারো বাজার পর্যন্ত প্রায় ৩ কিমি রাস্তাটি কাঁচা। বর্ষাকালে এই রাস্তাটি কাদাজলের কারণে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে যায়। উপজেলার জাঙ্গালিয়াকান্দা ও খলিশাকুড়া গ্রামের একাংশ মিলে প্রায় আড়াই হাজার লোকের চলাচলের একমাত্র রাস্তা এটি। দুটি ইউনিয়নের এ সড়কটির এ বেহাল অবস্থায় নজর নেই জনপ্রতিনিধিদের, বলছেন স্থানীয়রা।

 

স্থানীয় সোহরাব আলী (৬০) জানান, বৃষ্টির দিনে স্যান্ডেল হাতে নিয়েই তিন কিলোমিটার রাস্তা কাদা মাড়িয়ে যাতায়াত করতে হয়। রাস্তার বেহাল দশার কারণে কৃষকরা পণ্য বাজারজাত করতে পারে না। ছাত্র-ছাত্রী, পথচারী, রোগী সবাইকেই পোহাতে হয় ভোগান্তি। এই গ্রাম থেকে নালিতাবাড়ী উপজেলা হাসপাতালের দূরত্ব প্রায় ৫-৬ কিলোমিটার। দূরত্ব বেশি হওয়ায় এ গ্রামের অসুস্থ রোগী বা গর্ভবতী মায়েদের দ্রুত চিকিৎসার প্রয়োজন হলে হাসপাতালে নেয়া যায় না। কাঁচা রাস্তা হওয়ার কারণে অনেক সময় যানবাহনও পাওয়া যায় না।

 

তিনি আরো বলেন, দিন যায়, বছর যায় কিন্তু রাস্তার কোনো উন্নয়ন নেই। চেয়ারম্যান-মেম্বাররা আসে-যায়। কিন্তু রাস্তার কোনো উন্নয়ন হয় না। ভোটের সময় আশ্বাস দেয়া হয়, পরে তা ভুলে যান।

 

এই গ্রামের বাসিন্দা ইসমাইল হোসেন (৭২) বলেন, আমরা গ্রামের মানুষ কৃষির ওপর নির্ভরশীল, আমরা ধানসহ অন্যান্য পণ্য বাজারে নিলে এই খারাপ রাস্তার কারণে যানবাহনে বেশি পরিবহন খরচ দিতে হয়। তাই আমরা কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।
স্থানীয় মুনছর আলী (৫৫) বলেন, বেশিরভাগ সময় অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয় আমাদের। এই রাস্তা দিয়ে ছোট শিশুরা স্কুলে যাওয়ার সময় পরে গিয়ে কাদাপানিতে ভিজে অনেক সময় বাড়ি ফিরে যেতে হয়। ফলে পড়াশোনার ক্ষতির পাশাপাশি শারীরিক অসুস্থতাও দেখা দেয় তাদের।

 

কলেজ শিক্ষার্থী সাঈম হাসান বলেন, খারাপ রাস্তার কারণে আমরা এখানে কোনো রিকশা বা ভ্যানগাড়ি পাই না। ফলে স্কুল-কলেজে ক্লাস করতে কিংবা পরীক্ষা দিতে সময়মতো পৌঁছাতে পারি না।
গ্রামের বাসিন্দা জামাল হোসেন (৫২) বলেন, এই রাস্তাটি এরশাদ সরকারের আমলে করে দেয়া হয়েছিল। এরপর আর কেউ এই রাস্তার সংস্কারকাজ করেনি। আমরা দুঃখের সঙ্গে বলতে চাই, আসন্ন স্মার্ট যুগের এলাকার মানুষ হয়েও আমরা এই রাস্তার জন্য দীর্ঘদিন ধরে ভুগছি।

 

তিনি আরো বলেন, আমাদের এলাকার জনপ্রতিনিধিদের কাছে বারবার এই রাস্তার জন্য আবেদন করেও এখন পর্যন্ত আমরা এর কোনো সমাধান পাইনি। তাই আমাদের এই কষ্টের প্রতিবাদস্বরূপ আমরা এলাকাবাসী মিলে এই রাস্তায় ধানের চারা রোপণ করেছি, যাতে সরকার এটি দেখে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়।

 

বাঘবেড় ও নয়াবিল ইউনিয়নের যাতায়াতের এ রাস্তাটির ব্যাপারে নয়াবিল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, ওই রাস্তাটি সংস্কারের জন্য ইউনিয়ন পরিষদের নিজস্ব তহবিল কিংবা এলজিএসপির কোনো প্রকল্পও নেই। এ ছাড়া রাস্তাটি পাকাকরণের জন্য সরকারিভাবে আবেদন জমা দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো সুরাহা পাওয়া যায়নি।

 

ভোরের আকাশ/মি