logo
আপডেট : ২২ আগস্ট, ২০২৩ ১০:৩৩
দূর হয়েছে ভাঙন আতঙ্ক বেড়িবাঁধ পাল্টে দিয়েছে মানুষের ভাগ্য
এস এল টি তুহিন, বরিশাল

দূর হয়েছে ভাঙন আতঙ্ক
বেড়িবাঁধ পাল্টে দিয়েছে মানুষের ভাগ্য

বরিশাল সদর উপজেলার চরবাড়িয়া ও চরকাউয়ার ইউনিয়নের নদী তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দারা ২ বছর আগেও নদী ভাঙনের আতঙ্কে রাত জেগে পাহারা দিতেন। আজ সেখানে দূর হয়েছে ভাঙন আতঙ্ক। শুধু তাই নয়, নদী তীরবর্তী এলাকায় গড়ে উঠেছে ছোট-বড় অসংখ্য দোকানপাট এবং ৮-১০টি আধুনিক চাইনিজ ও বাংলা খাবারের রেস্তোরাঁ। এসব এলাকায় প্রতিদিন ভিড় করছে শত শত মানুষ। নিরিবিলি পরিবেশে মুক্ত হাওয়া এবং নিরাপদ স্বাচ্ছন্দ্য চলাচলের জন্য নদীর পাড় এখন দর্শনার্থীদের আনাগোনা বেড়ে যাওয়ায় পর্যটন স্পট হিসেবে ইতিমধ্যেই পরিচিতি পেয়েছে কীর্তনখোলা নদীর চরবাড়ীয়ার ভাঙ্গা এলাকা।

 

এলাকাবাসী ছাড়াও দূর-দূরান্তের ভ্রমণপিপাসু মানুষেরা ভিড় করছেন নদীর পাড়ে। অনেক রাত পর্যন্ত জমজমাট নদী তীরবর্তী বেড়িবাঁধ এলাকা। জোৎস্নার আলো উপভোগ করতে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে নির্ভয়ে অনেক রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করেন। উপভোগ করেন নদীর নির্মল হাওয়া। সব মিলিয়ে বরিশাল সদর উপজেলার কীর্তনখোলা নদীর চরকাউয়া ও চরবাড়িয়া বেড়িবাঁধ এখন নতুন স্বপ্ন তৈরি করছে সাধারণ মানুষের মনে। আর এসব কিছুই সম্ভব হয়েছে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ও বরিশাল সদর আসনের এমপি কর্নেল অব. জাহিদ ফারুক শামীমের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায়। নদীর দুই পাড়ে ভাঙন রোধে ব্লক বসিয়ে তৈরি হয়েছে চমৎকার বেড়িবাঁধ।

 

একসময় যেখানে ছিল ভাঙন আতঙ্ক, এখন সেখানে তৈরি হয়েছে পর্যটন আমেজ। বেড়িবাঁধ দেয়ার ফলে জমির দাম বেড়েছে দ্বিগুণ। বরিশাল সদর উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের বেশিরভাগ সড়কও এখন পিচঢালা পথ। তাই বেড়েছে রিকশা, অটোরিকশা ও ইজিবাইক চলাচল। খুব সহজেই নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করতে মানুষ ছুটে আসে বেড়িবাঁধে। অথচ দু’বছর আগেও এগুলো ছিল হাঁটু কাঁদা পানিতে ব্যবহার অনুপযোগী।

 

এই বেড়িবাঁধেরই চরকাউয়া অংশের একজন ভ্রমণকারী রফিকুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘ ৩০ বছর সদর উপজেলার চরকাউয়া ইউনিয়নের পূর্ব কর্ণকাঠী থেকে চরকরঞ্জী হাইস্কুলে যাওয়ার সরাসরি কোনো যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল না। ছেলেমেয়েদের সাঁতার কেটে পার হওয়ার ভিডিও দেখে নিজেই ছুটে যান সংসদ সদস্য পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল অব. জাহিদ ফারুক শামীম। সচক্ষে পরিস্থিতি দেখে সাথে সাথে সেই এলাকার সড়ক ও ব্রিজ নির্মাণের ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।

 

পূর্ব কর্ণকাঠী গ্রামের আরো কয়েকজন বাসিন্দা মূসা খান, আমজাদ হোসেনসহ মেম্বার মজিবর রহমান লিচু বলেন, এই এলাকার প্রধান সমস্যাই ছিল ব্রিজ আর সড়ক। জাহিদ ফারুক শামীম এমপি এসে নিজে সব সমস্যাগুলো চিহ্নিত করেছেন এবং প্রথমেই পাঁচটি ব্রিজ ও কালভার্ট নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছেন। প্রতিদিনি বিকেল ৫টার পর চরবাড়িয়া বেড়িবাঁধ এলাকায় মানুষের উপচে পরা ভিড় দেখে মুগ্ধ এলাকাবাসী। ৬০-৮০টি বসার স্থানসহ চমৎকার আলোর ব্যবস্থা করা হয়েছে প্রায় ৬ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে। বছর দুয়েক আগেও যা ছিল আতঙ্ক, সেখানে আজ বিনোদন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে চরবাড়িয়া এলাকার ৫ দশমিক ৬ কিলোমিটার নদী রক্ষা বাঁধ এলাকা। যার ব্যয় ধার্য হয়েছিল ৩৮০ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। বরিশালের বেলতলা খেয়াঘাট থেকে চরবাড়িয়ার ভাঙার হাট পর্যন্ত বেড়িবাঁধে এখনো বেশকিছু কাজ বাকি আছে। এই কাজ শেষ হলেই বেড়িবাঁধ এলাকাজুড়ে তৈরি হবে পর্যটন সম্ভাবনা। গড়ে উঠেছে বেশকিছু হোটেল রেস্টুরেন্টও।

 

এলাকাবাসীর দাবি, এই বেড়িবাঁধ লামচরি আরজ আলী মাতুব্বরের বাড়ি পর্যন্ত বিস্তৃত হলে পর্যটকদের ভিড় আরো বাড়বে।

 

পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কর্নেল অব. জাহিদ ফারুক বলেন, এখানে ৮০০ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। চরবাড়িয়ার বেড়িবাঁধে কিছু কাজ এখনো বাকি আছে। সাধারণ মানুষের চলাচলের জন্য দুটি সড়ক ভাঙা, বাঁধের শেষ মাথায় ২০০ মিটার কাজ ও একটি সংযোগ সেতুর প্রয়োজন। যা আগে জানলে অনেক আগেই তৈরি হয়ে যেত। নদীর পশ্চিম পাশে চরবাড়ীয়া অংশে ৫.৬ কিলোমিটার এবং পূর্ব পাশে ৩ কিলোমিটার করে মোট ৬ কিলোমিটার ব্লকের কাজ ইতিমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে।

 

প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, যেসব এলাকায় সড়ক ভাঙ্গা ও সংযোগ সেতু নেই সেখানে সড়ক ও সেতু তৈরির নির্দেশ দিয়ে দিয়েছি। চলতি মাসের শেষে বা আগামী মাসের প্রথমে চরকাউয়া এলাকায় পুনরায় বেড়িবাঁধের কাজ শুরু হবে। সে সময় চরবাড়িয়ার যে অংশে বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত রয়েছে তা মেরামত এবং সংযোগ সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেয়া হয়েছে।

 

ভোরের আকাশ/মি