logo
আপডেট : ২৩ আগস্ট, ২০২৩ ১০:৩৪
জেলেদের জালে ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ
এইচএম ফরিদুল আলম শাহীন, কক্সবাজার

জেলেদের জালে ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ

কক্সবাজারের মোকামে ইলিশ প্যাকেজিংয়ে ব্যস্ত জেলে শ্রমিক

চলতি মৌসুমে ৫০ হাজার টন টার্গেট মাথায় রেখে ইলিশ আহরণে সাগরে ছুটছেন জেলেরা। কক্সবাজারের প্রায় ৬ হাজার ট্রলারে ১ লাখ ৩০ হাজার জেলে মাছ ধরতে সাগরে অবস্থান করছেন। গত ৭ দিনে কক্সবাজার থেকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় প্রায় ২৫০০ টন ইলিশ সরবরাহ করা হয়েছে। এই ২৫০০ টন ইলিশের আনুমানিক মূল্য প্রায় ২০০ কোটি টাকা। কক্সবাজার উপকূলের অদূরে বঙ্গোপসাগরে জেলেদের জালে ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ।

 

কক্সবাজারের টেকনাফ, সেন্টমার্টিন, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, চকরিয়া, পেকুয়াসহ জেলার বিভিন্ন মৎস্যকেন্দ্র থেকে দৈনিক ৩০০ টন ইলিশ দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো হচ্ছে। শহরের বাঁকখালী নদীর ফিশারি ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, গভীর সাগর থেকে ইলিশ নিয়ে ফিরেছে ৪০টি ট্রলার। প্রতিটি ট্রলারে গড়ে ৫০০ থেকে ৩ হাজার কেজি ইলিশ ধরা পড়েছে। ইলিশের সঙ্গে রূপচাঁদা, লাক্ষা, কোরাল, গুইজ্যা, চাপা, মাইট্যা, কামিলা, পোপা মাছও ধরা পড়েছে প্রচুর। ছোট ডিঙিনৌকায় ভরে ট্রলারের মাছ পাশের মৎস্য অবতরণকেন্দ্রে এনে চলছে বিক্রি।

 

জেলা মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত সাত দিনে কক্সবাজার থেকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় প্রায় ২৫০০ টন ইলিশ সরবরাহ করা হয়েছে। ফিশারিঘাটের পাইকারি বাজার ছাড়াও জেলার বিভিন্ন মৎস্যকেন্দ্র থেকে দৈনিক ৩০০ টন ইলিশ দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো হচ্ছে। এর আগে গত বছর কক্সবাজারে ইলিশ আহরণ হয়েছিল ৪০ হাজার টন। চলতি মৌসুমে ৫০ হাজার টন টার্গেট রয়েছে। কক্সবাজার শহরের নাজিরারটেক এলাকার আব্দুল মাবুদের মালিকানাধীন একটি ট্রলারে ধরা পড়েছে ১০ টন ইলিশ।

 

রোববার দুপুরে শহরের বাঁকখালী নদীর ফিশারিঘাটের মৎস্য অবতরণকেন্দ্রে ইলিশগুলো বিক্রি করেন ৮০ লাখ টাকায়। ট্রলারের জেলে ফরিদ আলম বলেন, গত সাত দিন আগে একটি ট্রলার নিয়ে আমরা ১৯ জন জেলে সাগরে মাছ ধরতে যাই। উপকূল থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার পশ্চিমে বঙ্গোপসাগরে জাল ফেললে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ে। মাছগুলোর ওজন ১০ টনের বেশি। যা ফিশারিঘাটে এনে বিক্রি করে ৮০ লাখ টাকা পাওয়া যায়। সোমবার রাতে আমরা আবারো ইলিশ আহরণে সাগরে যাত্রা করব।

 

জেলে আজিজুল হকের মালিকানাধীন একটি ট্রলার ইলিশ বিক্রি করে পেয়েছেন ৫৫ লাখ টাকা। রোববার সকালে ফিশারিঘাটে পাইকারি দামে ঢাকার একজন বড় ব্যবসায়ীকে মাছগুলো বিক্রি করেন। এফবি মায়ের দোয়া নামের একটি ট্রলারের মালিক জসিম উদ্দিন বলেন, গত চার দিন আগে সাগরে মাছ শিকারে গিয়ে ৪০ লাখ টাকার মাছ পেয়েছি। মাছের অধিকাংশই হচ্ছে ইলিশ।

 

ফিশারিঘাটে গিয়ে দেখা গেছে, বিক্রির জন্য তোলা অধিকাংশ ইলিশের ওজন ৮০০ গ্রাম থেকে দেড় কেজি। বিক্রিও হচ্ছে উচ্চ দামে। বাজারে ৯০০ গ্রাম থেকে ১ কেজি ওজনের প্রতিটি ইলিশ পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৮৫০ টাকায়, ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা, ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম ওজনের ৫৫০-৬০০ টাকায়।

 

ফিশারিঘাট মৎস্য ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির উপদেষ্টা জয়নাল আবেদীন বলেন, কক্সবাজার থেকে ট্রাকে প্রতি কেজি ইলিশ ঢাকার বাজারে পৌঁছাতে পরিবহন ও প্যাকেজিং খরচ যাচ্ছে ৫০-৬০ টাকা। এ কারণে ঢাকায় প্রতি কেজি ইলিশের বিপরীতে ১০-২০ টাকার বেশি লাভ করা যাচ্ছে না। কক্সবাজারে আগামী কয়েক দিন ইলিশে ভরপুর থাকবে। তখন ঢাকার বাজারে ইলিশের দাম কমে আসবে।

 

কক্সবাজার ফিশিং বোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন বলেন, প্রতিদিন ৫০০ থেকে ২ হাজার ট্রলার মাছ নিয়ে ঘাটে ফিরছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় ১০ আগস্ট থেকে জেলেরা ট্রলার নিয়ে সাগরে নামতে শুরু করে। এখন জেলার ৬ হাজার ট্রলার ইলিশ ধরতে সাগরে নেমে গেছে। এভাবে ইলিশ আহরণ বেড়ে গেলে ১ লাখ ৩০ হাজার জেলে-শ্রমিকের অভাবও দূর হবে।

 

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. বদরুজ্জামান জানান, ফিশারিঘাটে পাইকারি ইলিশ বিক্রির বাজারসহ টেকনাফ, মহেশখালী, কুতুবদিয়াসহ বিভিন্ন উপকূলে দৈনিক ৫০০ টন সামুদ্রিক মাছ আহরণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে ৩০০ টন ইলিশ। আহরিত ইলিশের মধ্যে ৬০ ভাগের ওজন ৮০০ গ্রাম থেকে ১ কেজি। ৩০ শতাংশের ওজন ১ থেকে দেড় কেজি। বাকিগুলো দেড় থেকে দুই কেজি হয়ে থাকে। বিভিন্ন সময় সাগরে মৎস্য আহরণে সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকার কারণে এখন সাগরে প্রচুর মাছ পাওয়া যাচ্ছে। গত এক সপ্তাহে কক্সবাজার থেকে প্রায় ২০০ কোটি টাকার ইলিশ সারা দেশে সরবরাহ করা হয়েছে।

 

ভোরের আকাশ/নি