logo
আপডেট : ২৪ আগস্ট, ২০২৩ ১১:২৯
সম্পাদকীয়
অনলাইনে প্রতারণা!
ঠেকানোর উপায় কী

অনলাইনে প্রতারণা!

অনলাইনে মানুষ নানাভাবে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। যুবক, ডেসটিনি, ইউনিপেটুইউর মতো প্রতিষ্ঠানের অর্থ আত্মসাতের পর এমএলএম নিয়ে মানুষের আগ্রহ কি কমছে না বাড়ছে এমন প্রশ্ন সামনে আসছে। সর্বশেষ আমরা দেখলাম, দুবাইভিত্তিক এমএলএম কোম্পানি মেটাভার্স ফরেন এক্সচেঞ্জে (এমটিএফই) বিনিয়োগ করে সর্বস্বান্ত হয়েছেন দেশের লাখো মানুষ।

 

যারা দ্রুত আয় করার স্বপ্ন নিয়ে লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন, তারা এখন হা-হুতাশ করছেন। এই কান্ডে কয়েক হাজার কোটি টাকা খুইয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। গ্রাহকদের ট্রেডিং থেকে উপার্জন এবং অর্থ পরিশোধের কথা বলে অ্যাপটি ব্যবহারকারীদের অবিশ্বাস্য সহজ পথে অর্থ আয়ের আমন্ত্রণ জানায়।

 

কিন্তু গত বৃহস্পতিবার রাতে প্রায় সব ব্যবহারকারীর ভার্চুয়াল অ্যাকাউন্ট ঋণাত্মক দেখানো শুরু করে। বাংলাদেশের প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী, এমএলএম ব্যবসা পরিচালনা এবং ক্রিপ্টো কারেন্সিতে লেনদেন অবৈধ ও নিষিদ্ধ। সমবায় মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞা, দুর্নীতি দমন কমিশন ও বাংলাদেশ ব্যাংকের হুঁশিয়ারি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান কোনো কিছুতেই বন্ধ হচ্ছে না মাল্টিপারপাসের নামে প্রতারণা।

 

রীতিমতো আইন পাস করেও প্রতারণামূলক এ বাণিজ্যের লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না। এমটিএফই মূলত একটি বহুস্তর বিপণন বা মাল্টিলেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) কোম্পানি। কমপক্ষে ৫০০ ডলার বিনিয়োগ করলে দিনশেষে পাঁচ হাজার টাকা লাভ হবে এমন কল্পিত মুনাফার লোভে শত শত মানুষ বিনিয়োগ করেন এই কোম্পানিতে। অনেকে গহনা ও মূল্যবান সামগ্রী বন্ধক রেখেও বিনিয়োগ করেছিলেন। স্বয়ংক্রিয় লেনদেনের পর বিপুল লোকসান হয়েছে বলে দাবি করেছে অনিয়ন্ত্রিত এই সংস্থা।

 

দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে এই প্রতিষ্ঠানের প্রতারণার শিকার হওয়ার খবর আসছে। ধারণা করা হচ্ছে, এই কোম্পানির মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে ক্রিপ্টো কারেন্সির মাধ্যমে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে। প্রতারিতদের বেশির ভাগই তরুণ এবং বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। রয়েছেন শিক্ষক, ডাক্তার, আইনজীবী, সাংবাদিকসহ অন্যান্য পেশার মানুষও। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাদের প্রতারণা নিয়ে চলছে বিভিন্ন বিশ্লেষণ। এরই মধ্যে এমটিএফই নিয়ে নড়েচড়ে বসেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

 

এমটিএফইর প্রতারণার বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনেক ইউনিট কাজ করছে। পাশাপাশি এ বিষয়ে ডিবি এবং সিআইডিও কাজ করছে। শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তদন্তকাজ?

 

দুঃখজনক বাস্তবতা হলো ডেসটিনি, যুবক, ই-ভ্যালি, ই-অরেঞ্জের পর ই-কমার্সভিত্তিক কোম্পানিগুলোর একের পর এক প্রতারণার ঘটনা সামনে আসায় দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। ই-কমার্সভিত্তিক বড় ধরনের প্রতারণার অভিযোগে ১১টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা তদন্ত করছে সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট। তদন্তের দীর্ঘসূত্রতায় ঘুরপাক খাচ্ছে মামলার অগ্রগতি।

 

আমরা চাই দ্রুত তদন্ত শেষ করে এসব মামলার নিষ্পত্তি হোক। ডিজিটাল যুগে গ্রাহকদের চাহিদার ওপর ভিত্তি করে খোলা হচ্ছে নানা রকম অনলাইন শপ, অনলাইন ব্যাংকিং। যারা এর সুযোগ নিয়ে প্রতারণা করছে, তাদের বিরুদ্ধে সরকারকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। জনস্বার্থ চিন্তা করতে হবে। সরকারের সাইবার সিকিউরিটিকে আরো বেশি কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে। আগামীতে কেউ যাতে অনলাইন প্রতারণার শিকার না হয়, এমন প্রত্যাশা রাখছি সরকারের কাছে।

 

ভোরের আকাশ/নি