logo
আপডেট : ২৫ আগস্ট, ২০২৩ ১৬:৩৯
পাঁচটি আধুনিক ভূগর্ভস্থ বর্জ্য সংরক্ষণাগার করছে চসিক
মো. ইব্রাহিম শেখ, চট্টগ্রাম

পাঁচটি আধুনিক ভূগর্ভস্থ বর্জ্য সংরক্ষণাগার করছে চসিক

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের বর্জ্য সংরক্ষণাগার

মো. ইব্রাহিম শেখ, চট্টগ্রাম:  নগরে পাঁচটি আধুনিক ভূগর্ভস্থ বর্জ্য সংরক্ষণাগার করছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। ‘সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন’ (এসটিএস) হিসেবে ব্যবহার হবে এসব বর্জ্য সংরক্ষণাগার। প্রাথমিক উৎস বা বাসাবাড়ি, অফিস-আদালত থেকে সংগৃহীত বজ্যৃ এসব এসটিএসে সংরক্ষণ করা হবে। এতে সংরক্ষিত বর্জ্য চোখে দেখা যাবে না এবং আশপাশে দুর্গন্ধও ছড়াবে না।

 

চসিকের পরিচ্ছন্ন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, আলমাস মোড়, ফলমণ্ডি, ২নং গেট, আগ্রাবাদ টিঅ্যান্ডটি কলোনি স্কুল সংলগ্ন এলাকা এবং চকবাজার বাদুরতলায় ভূগর্ভস্থ এসটিএসগুলো স্থাপন করা হবে। প্রতিটি এসটিএস নির্মাণে আড়াই থেকে তিন কোটি টাকা খরচ হতে পারে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনও ৬টি ভূগর্ভস্থ এসটিএস নির্মাণ প্রক্রিয়া শুরু করেছে। নগরে ফিনল্যান্ডের ‘হাবা গ্রুপ’ ভূগর্ভস্থ এসটিএসগুলো নির্মাণ করবে।

 

জানা গেছে, এসটিএস থেকে ডাম্প ট্রাকে করে হালিশহরের আনন্দবাজার ও আরেফিন নগরে অবস্থিত ল্যান্ডফিলে নিয়ে যাওয়া হয়। বর্তমানে চান্দগাঁও ওয়ার্ডেও এফআইডিসি রোড, লালখান বাজার ওয়ার্ডের টাইগারপাস, পশ্চিম মাদারবাড়ি ওয়ার্ডের বরিশাল কলোনি, উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ডের সাগরিকা, হালিশহর মুনিরনগর ওয়ার্ডের পোর্ট কানেকটিং রোডের পোর্ট মার্কেট, দক্ষিণ পতেঙ্গা ওয়ার্ডের বিমানবন্দর সড়কের বিজয়নগর বা ১৫ নম্বর এলাকায় এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে ৬টি এবং চান্দগাঁও এক কিলোমিটার ফ্লাইওভারের নিচে চসিকের নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত একটিসহ সাতটি এসটিএস আছে। তবে এসব এসটিএসের একটিও ভূগর্ভস্থ নয়। নগরে বিদ্যমান এসটিএসগুলোর মধ্যে এফআইডিসি রোডের বর্জ্য সংরক্ষণাগারের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ হচ্ছে যথাক্রমে ৫০ মিটার ও সাড়ে ১৪ মিটার। বাকিগুলোর দৈর্ঘ্য হচ্ছে ২১ মিটার ও প্রস্থ্ সাড়ে সাত মিটার। আর প্রতিটি ভবনের উচ্চতা হচ্ছে প্রায় ৪০ ফুট। এসব এসটিএস ধারণক্ষমতা ১০০ টন। অবশ্য এসটিএসের বাইরে নগওের শতাধিক উন্মুক্ত স্থান রয়েছে, যেখানে বাসাবাড়ি থেকে সংগৃহীত বর্জ্য এনে সাময়িকভাবে রাখে চসিক। অবশ্য অনেকগুলো স্পটে বর্জ্য রাখার কনটেইনারও রাখা আছে। এরপরও উন্মুক্ত স্থানে বর্জ্য সংরক্ষণ করায় দুর্গন্ধ ছড়ায় আশপাশে। এতে পথচারীদের ভোগান্তির পাশাপাশি শহরের সৌন্দর্যহানিও ঘটে। এ অবস্থায় ভূগর্ভস্থ এসটিএস স্থাপনের ফলে উন্মুক্তভাবে ময়লা রাখার স্থানের সংখ্যাও কমে আসবে। একইসঙ্গে পরিবেশবান্ধব বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ফলে আসবে শৃঙ্খলা।

 

এ বিষয়ে সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, আলমাস মোড়, বাদুরতলাসহ বিভিন্ন স্থানে উন্মুক্ত জায়গায় ময়লা রাখায় দৃষ্টিকটু লাগে। দুর্গন্ধও ছড়ায় আশপাশে। ভূগর্ভস্থ এসটিএস হলে সমস্যা দুটো থাকবে না। প্রাথমিকভাবে পাঁচটিতে ভূগর্ভস্থ এসটিএস আমরা করব। সেখানে ভালো রেজাল্ট আসলে পর্যায়ক্রমে এ সংখ্যা বৃদ্ধি করব। হয়তো একসময় পুরো শহরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে এ প্রক্রিয়ায় নিয়ে আসব।

 

এক প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, ভূগর্ভস্থ এসটিএস এমনভাবে করা হবে, সেখানে পানি ঢুকবে না। তবে টানা কয়েকদিন যদি জলাবদ্ধতা থাকে সেক্ষেত্রে হয়তো কিছু ঢুকতে পারে। সেজন্য পাম্পিং স্টেশন থাকবে এসব ভূগর্ভস্থ এসটিএসে। তাই পানি প্রবেশ করলেও সমস্যা হবে না।

 

চসিকের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মুহাম্মদ আবুল হাশেম বলেন, ময়লা রাখার ফলে ভূগর্ভস্থ এসটিএস যখন ৮০ শতাংশ পূর্ণ হবে তখন অটো নোটিফিকেশন (স্বয়ংক্রিয় বার্তা) আসবে। তাছাড়া হাইড্রোলিক প্রেসারের মাধ্যমে ময়লাকে সংকোচন করে অর্ধেক হয়ে যাবে। অর্থাৎ ১০ টন ময়লা ফেললে সংরক্ষণ করলে তা ৫ টন হয়ে যাবে। এতে একই স্থানে আগের তুলনায় দ্বিগুণ বর্জ্য সংগ্রহ করা যাবে। একইসঙ্গে এসটিএস থেকে ল্যান্ডফিলে নেয়ার ক্ষেত্রে সিটি করপোরেশনের ময়লা পরিবহন খরচও কমে আসবে।

 

চসিক সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালের ১৩ জানুয়ারি বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য ১২টি এসটিএস নির্মাণে ঠিকাদার নিয়োগ করে চসিক। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে ওই ঠিকাদারের কার্যাদেশের মেয়াদ শেষে ৬টি নির্মাণ করলেও জায়গা পাওয়া না যাওয়ায় বাকিগুলো নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। ফলে এসটিএস নির্মাণে বরাদ্দকৃত এডিবির ৬ কোটি টাকা ফেরত যায়।

 

ভোরের আকাশ/আসা