logo
আপডেট : ২৭ আগস্ট, ২০২৩ ১৪:৪৪
বাস মালিকদের সিন্ডিকেটে চরম ভোগান্তিতে যাত্রীরা
বরগুনা প্রতিনিধি

বাস মালিকদের সিন্ডিকেটে চরম ভোগান্তিতে যাত্রীরা

কেন্দ্রীয় পৌরসভা বাস টার্মিনাল, বরগুনা

বরগুনার কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে নির্মিত টিকিট কাউন্টার থাকলেও গত দু’বছরে ব্যবহার করতে দেখা মেলেনি কোনো পরিবহনের কাউন্টার হিসেবে। পৌর শহরের বিভিন্ন জায়গায় বরগুনা টু ঢাকাগামী পরিবহনের কাউন্টার ঘর ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকায় চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন যাত্রীরা।

 

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, বাস টার্মিনালে রয়েছে অর্ধশতাধিক বাস পার্কিং করে রাখার সুবিধা। এ ছাড়াও ১৬টি টিকিট কাউন্টার, ২টি ওয়েটিং রুম, ১টি অফিস কক্ষ, ৬টি টয়লেট, ১টি লেয়ার রুম, ১টি কমার্শিয়াল রেস্টুরেন্ট এবং নামাজ পড়ার রুমসহ আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধার পাশাপাশি চারদিকে রয়েছে নানা প্রজাতির সৌন্দর্যবর্ধক গাছের সমারোহ দৃষ্টিনন্দন ফুটপাত।

 

তবে এই বাস টার্মিনালে এসে সব পেশাজীবী মানুষের খুশি থাকার কথা থাকলেও বিনিময়ে হয়রানির শিকার হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। যাত্রীরা স্ট্যান্ডে আসার সাথে সাথেই একদল মানুষ চতুর্দিক ঘিরে টিকিট বিক্রির জন্য খোলা আকাশের নিচে টানাহেচড়া করেন। ফলে বাধ্য হয়ে সেখান থেকেই টিকিট কিনতে হয় যাত্রীদের।

 

বরগুনা পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের জুন মাসে বরগুনা সদর উপজেলার খেজুরতলা এলাকায় ৪ একর জমি নিয়ে বাস টার্মিনালটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। বাংলাদেশ সরকার ও এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের যৌথ অর্থায়নে টার্মিনালটি নির্মাণ করা হয়। এতে ব্যয় হয় ১৪ কোটি ৩৪ লাখ ১৯ হাজার ৩৪৩ টাকা। নির্মাণকাজ শেষে পৌরসভা কর্তৃপক্ষের কাছে টার্মিনালটি হস্তান্তর করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। নবনির্মিত এই বাস টার্মিনালটি ছাড়া বরগুনায় আর কোনো বাস টার্মিনাল নেই।

 

এ বিষয়ে বাস মালিক সমিতির অন্য নেতাদের সাথে যোগাযোগ করলে তারা জানান, বাস কোম্পানি যে কয়টি আছে তাতে এক একটি কোম্পানিকে এক একটি কাউন্টার দিলে তাতে কোনো সমস্যা হয় না। গাড়ির কোম্পানির সংখ্যা মোট ১৪। সেগুলো হলো- হানিফ, ইসলাম, মেঘনা, দিগন্ত, ইমরান, সোনারতরী, মোল্লা, গ্রিনভিউ, ইউরো কোর্স, শ্যামলী, যমুনা, শ্রাবণী, আবদুল্লাহ, রোমার। এ ছাড়া যে গাড়ি আছে তারা একদিন আসলে তিন দিন আসে না তাদের কাউন্টার দরকার হয় না।

 

বরগুনা ঢাকাগামী যাত্রী মহসিন রেজা বলেন, লঞ্চ চলাচল বন্ধ। এভাবে যদি সিন্ডিকেট করে, বাস চলাচল বন্ধ হয় আমাদের কি উপায় হবে। নেই কোনো কাউন্টার এবং টিকিটের মূল্য নেয়া হচ্ছে বেশি।
যাত্রী জেসমিন বেগম বলেন, নতুন বাস স্ট্যান্ডে গিয়ে দেখি টিকিট কাউন্টারে তালা। লুঙ্গি পড়া কিছু লোক এসে বলে কই যাবেন টিকিট নেন। অসুস্থ ছেলেকে নিয়ে হঠাৎ ঢাকায় রওনা দিতে গিয়ে টিকিটের জন্য চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে আমার রাত ৯টা বাজে।

 

জেলা যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ কমিটির সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম টিটু মোল্লা বলেন, বরগুনার স্থানীয় বাস মালিক সমিতির সিন্ডিকেটের কারণে উদ্বোধনের দুই বছর অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত নতুন বাস স্ট্যান্ডের যাত্রীদের টিকেট কাউন্টার চালু করা সম্ভব হয়নি। এজন্য আমি বাস মালিক সমিতি এবং পৌরসভাকেও দায়ী করব। পৌরসভা যথাযথ পদক্ষেপ নিলে এতদিনে চালু করা যেত বলে আমি মনে করি। অবিলম্বে কাউন্টারগুলো খুলে দেয়ার জন্য আমি জাতীয় অধিকার সংরক্ষণ কমিটির পক্ষ থেকে দাবি জানাচ্ছি।

 

উপজেলা চেয়ারম্যান মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, বাস মালিকদের সিন্ডিকেটের প্রভাবে যাত্রীরা অস্থির। জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ এসে বাস স্ট্যান্ডের টিকিট কাউন্টার পায় না। টিকিট পেতে হলে ঘুরতে হয় বিভিন্ন স্থানে। এর একটা সুরহা হওয়া খুব জরুরি।

 

বরগুনা পৌর মেয়র অ্যাড. কামরুল আহসান মহারাজ বলেন, কাউন্টারগুলো বাস মালিক সমিতির কাছে বুঝিয়ে দিয়েছি। কিন্তু কেন তারা এগুলো ব্যবহার না করে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বিভিন্ন স্থানে টিকিটগুলো বিক্রি করছে। এ বিষয়ে আমি বাস মালিক সমিতির সাথে কথা বলে বিষয়টি সমাধান করার চেষ্টা করব।

 

ভোরের আকাশ/নি