logo
আপডেট : ৩১ আগস্ট, ২০২৩ ১০:৩৬
রেলক্রসিং যেন মরণফাঁদ
চট্টগ্রাম ব্যুরো

রেলক্রসিং যেন মরণফাঁদ

ট্রেনের ধাক্কায় ক্ষতিগ্রস্ত পুলিশের গাড়ি

দেশজুড়ে বৈধ-অবৈধ রেলক্রসিংয়ে হতাহতের ঘটনা ক্রমেই বাড়ছে। রেলওয়ের অবৈধ লেভেলক্রসিংগুলোর বেশির ভাগই অরক্ষিত। গেটম্যান না থাকায় অনেক বৈধ ক্রসিংও সুরক্ষিত নয়। আবার অনেক সময় গাড়িচালক, পথচারীদের সচেতনতার অভাবেও ঘটছে দুর্ঘটনা।

 

এর বাইরে রেলক্রসিংয়ে দায়িত্বে থাকা গেটম্যানদের অবহেলা তো রয়েছেই। সর্বশেষ গত রোববার চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডের সলিমপুরের ফকিরহাটে লেভেলক্রসিংয়ে টহল পিকআপে ট্রেনের ধাক্কায় তিন পুলিশ সদস্য নিহত হন।

 

রেলসূত্র বলছে, রেললাইনে যেসব দুর্ঘটনা হচ্ছে তার ৮০ থেকে ৮৫ ভাগই ঘটছে লেভেলক্রসিংয়ে। গত রোববারের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, চট্টগ্রামমুখী সোনার বাংলা এক্সপ্রেস ট্রেন যখন ফকিরহাটের সেই ক্রসিং পার হচ্ছিল, তখন বিপু নামে গেটম্যান সেখানে ছিলেন না। এমনকি বন্ধ করা ছিল না গেটও। ফলে বাঁধা না পেয়ে রেললাইনে উঠে যায় পুলিশের পিকআপ।

 

এর আগে ২০২১ সালের ৪ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের খুলশী থানার ঝাউতলা এলাকার ক্রসিংয়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় ডেমু ট্রেনের ধাক্কায় এক ট্রাফিক পুলিশসহ তিনজনের মৃত্যু ঘটে। গত বছরের ১১ জুলাই মিরসরাইয়ের বড়তাকিয়া স্টেশন এলাকায় লেভেলক্রসিং পার হওয়ার সময় মাইক্রোবাসে ট্রেনের ধাক্কায় প্রাণ হারান ১১ পর্যটক। সেই ক্রসিংয়ে গেটম্যান নিয়োজিত থাকলেও দুর্ঘটনার সময় তিনি সেখানে ছিলেন না।

 

রেলওয়ের তথ্য অনুযায়ী, রেলের পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চল মিলে সারা দেশে ২ হাজার ৮৫৬টি লেভেলক্রসিং রয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৩৬১টি ক্রসিংয়ের অনুমোদন নেই। আবার বৈধ ১ হাজার ৪৯৫টি ক্রসিংয়ের এক-তৃতীয়াংশে গেটম্যান নেই। শুধু গত বছরের জানুয়ারি থেকে ২৫ মে পর্যন্ত ট্রেনে কাটা পড়ে কিংবা ধাক্কা খেয়ে অন্তত ৩৭৭ জনের মৃত্যু ঘটে। ২০২০ সালে ৩৯৫ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। ২০২১ সালে উদ্ধার করা হয় ৩২২ জনের লাশ।

 

জানা গেছে, রেললাইনে অবৈধভাবে লেভেলক্রসিং তৈরি করেছে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানও। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর সবচেয়ে বেশি অবৈধ লেভেলক্রসিং বানিয়েছে। দেশজুড়ে তাদের বসানো অন্তত ৪৫২টি লেভেলক্রসিং রয়েছে, যা রেলওয়ের অনুমোদনহীন।

 

একইভাবে ইউনিয়ন পরিষদের ৩৬৩টি, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের ১১টি, পৌরসভার ৭৯টি, সিটি করপোরেশনের ৩৪টি, জেলা পরিষদের ১৩টি, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের তিনটি, বেনাপোল স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের একটি, জয়পুরহাট চিনিকলের একটি, ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানের তিনটি ও অন্য রয়েছে ৯২টি অবৈধ লেভেলক্রসিং।

 

তাছাড়া দেশজুড়ে এমন ৩৩টি লেভেলক্রসিং রয়েছে, যেগুলো কে বা কারা করেছে তা জানা নেই রেলওয়ের।

 

অভিযোগ রয়েছে, রেলে হাজার হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হলেও লেভেলক্রসিংয়ের উন্নয়ন, আধুনিকায়ন কিংবা লোকবল নিয়োগে তেমন উদ্যোগ নেয়া হয় না। আবার গেটম্যানদের বড় অংশ অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ পাওয়া।

 

গেটম্যানের অবহেলা ও অরক্ষিত থাকার কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে বলে স্বীকার করেন রেলওয়ে মহাব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর হোসেনও।

 

তিনি বলেন, ‘দুর্ঘটনা এড়াতে আমরা কম গুরুত্বপূর্ণ লেভেলক্রসিংগুলো বন্ধের চেষ্টা করছি। কিন্তু ব্যবহারকারী মানুষের জন্য পারা যাচ্ছে না। এসব অরক্ষিত লেভেলক্রসিং বন্ধ করতে না পারাও দুর্ঘটনার আরেকটি কারণ।

 

অনেক গেটম্যানের বসার সুব্যবস্থা নেই। বিষয়টি বিবেচনা করে গেটম্যানদের বসার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। আরো গেটম্যান নিয়োগেও আমরা কাজ করছি।’

 

ভোরের আকাশ/নি