ঢাকার সাভার পৌরসভা ও আশপাশের এলাকায় পথচারী, মাঠে খেলাধুলায় ব্যস্ত শিশু-কিশোর ও স্থানীয় ব্যক্তিদের হুটহাট কামড়ে দিচ্ছে কুকুর। মে মাস থেকে চলতি মাসের বুধবার পর্যন্ত কুকুরের কামড়ের শিকার হয়েছেন ৭৪১ জন। আহত ব্যক্তিরা সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন। এ সমস্যার সমাধানে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না পৌর কর্তৃপক্ষ।
জানা যায়, ১৭ আগস্ট সাভার পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের নামাবাজার খেয়াঘাট এলাকায় এক দিনে ১১ জনকে কামড়ে দেয় ৪-৫টি কুকুরের একটি দল। আহত অবস্থায় তাদের সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়। নামাবাজার খেয়াঘাট সংলগ্ন এলাকার দোকানদার মো. জুয়েল বলেন, ওই ১১ জনের মধ্যে ৭ থেকে ৮ বছরের কয়েকটি শিশুও ছিল। তাদের নাক, মুখ কামড়ে দিয়েছে কুকুর।
কুকুরের কামড়ে আহত শম্পা বালা (২৮) বলেন, ‘বিকেলে হেঁটে যাইতেছিলাম। দেখি একটা কুকুর আরেকটা কুকুররে কামড়াইতাছে। আমি এইডা দেইখা তাড়াতাড়ি হাঁটা দিছি। হুট কইরা পেছন থেইকা একটা কুকুর আমার পায়ে কামড় দিয়া মাংস ছিড়া নিয়া দৌড় দিছে।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সাভার পৌরসভার ওয়াইডবিøউসি স্কুলসংলগ্ন সড়কে, গাবতলা, পুকুরপাড় কাজী অফিস, আন্দপুর, ইমান্দিপুর সংযোগ সড়কসহ বিভিন্ন স্থানে ৮-১০টি কুকুরের দল রয়েছে। প্রতিটি দলে পাঁচ থেকে আটটি কুকুর রয়েছে। এগুলোর অধিকাংশের শরীরে লোম নেই। শরীরের বিভিন্ন অংশে ক্ষত রয়েছে। সন্ধ্যার পর থেকে বেশি সক্রিয় হয়ে ওঠে কুকুরগুলো।
পৌরসভা সংলগ্ন নামা গেন্ডা এলাকার খেলার মাঠটি ইমু সাহেবের বালুর মাঠ নামে পরিচিত। মাঠের প্রবেশদ্বার তারের জাল দিয়ে আটকে রাখা হয়েছে, যাতে কোনো কুকুর মাঠে প্রবেশ করতে না পারে। মাঠের দায়িত্বে থাকা মো. রেজুয়ান বলেন, মাঠে খেলতে আসা ব্যক্তিদের প্রায়ই হুট করে ধাওয়া দিচ্ছে পাগলা কুকুর। এ ছাড়া মাঠে ছাগল, মুরগিকে কামড়ে দিচ্ছে। সম্প্রতি একটি ছাগলের মাথা কামড়ে দিয়েছে, তাই বাধ্য হয়ে মাঠের প্রবেশদ্বার তারের জাল দিয়ে আটকে রাখা হয়েছে।
চলতি বছরের মে মাসে পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যপাড়া এলাকার শিশু শুদ্ধ সাহা (৫) সকালে বাসার সামনে দাঁড়িয়ে ছিল। এ সময় চার-পাঁচটি কুকুরের একটি দল শিশুটিকে কামড়ে দেয়। শুদ্ধর বাবা শুভ্র সাহা বলেন, ‘চার-পাঁচটি কুকুর আমার ছেলের শরীরের নয়টি স্থান থেকে মাংস ছিঁড়ে নিয়েছিল। ওই ঘটনার পর থেকে সবসময় আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হচ্ছে। প্রায়ই এ ধরনের ঘটনার খবর শুনতে পাচ্ছি। এর সমাধান কে দেবে। নিজে কুকুরের কামড়ে মারা গেলেও কুকুর মারা যাবে না। আবার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরাও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন না।’
কুকুর নিধনে রয়েছে উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা। কুকুরের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে সরকারি সংস্থাগুলো যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে দাবি স্থানীয় ব্যক্তিদের। সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কুকুরের কামড়ে গত মে মাসে ১৭৫ জন, জুন মাসে ১৫৮, জুলাই মাসে ১৮২ ও চলতি মাসের বুধবার পর্যন্ত ২২৬ জন চিকিৎসা নিয়েছেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সায়েমুল হুদা বলেন, সাভার পৌর এলাকাসহ আশপাশের এলাকা থেকে প্রতিদিন কুকুরের কামড়ে আহত পাঁচ থেকে আটজন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসছেন। আহতের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে বিষয়টি আরো ভয়াবহ হবে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ মনিরুল হাসান খান বলেন, একটি এলাকায় যখন অনেক মানুষ কুকুরের কামড়ে আক্রান্ত হবেন, তখন স্বাভাবিকভাবেই বুঝে নিতে হবে, এলাকাটিতে পাগলা কুকুর রয়েছে। কুকুরের কামড়ে প্রাণহানির আশঙ্কা থাকলে এমন পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্টদের বিষয়টি বিশেষ বিবেচনায় নিয়ে অনুমতি সাপেক্ষে পদক্ষেপ নিতে হবে। তা না হলে ওই কুকুরগুলো চিহ্নিত করে আটকে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।
এলাকায় কুকুরের আক্রমণ বাড়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন সাভার পৌরসভার মেয়র আবদুল গনিও। এ জন্য প্রতিষেধকের ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
ভোরের আকাশ/নি